বিপাকে চীনের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা, দেশেই বিকল্প বাজার সৃষ্টির চেষ্টা
Published: 16th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের চাপে পড়েছেন চীনের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। লাঞ্চ বক্স (খাবারের বাক্স) থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামগ্রীর নির্মাতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রেডনোটের দ্বারস্থ হচ্ছেন। মার্কিন ক্রেতাদের হারিয়ে তাঁরা স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে ছাড়ে পণ্য বিক্রির প্রস্তাব দিচ্ছেন।
এক সপ্তাহ ধরে চীনের এই উদ্যোক্তারা রেডেনাটে লাইভ স্ট্রিম করছেন। সেটা হলো, তাঁরা মার্কিন ক্রেতাদের জন্য যেসব পণ্য তৈরি করেছিলেন, সেই সব পণ্য স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে বিক্রির জন্য এই কৌশল অবলম্বন করেছেন তাঁরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে চীনের পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, সেই শুল্কের কোপে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এ রকম এক লাইভস্ট্রিমে দেখা যায়, ডিংডিং ক্লাউড ফরেন ট্রেড ওয়্যারহাউস রাইস কুকার থেকে শুরু করে জুসার ও টোস্টার বিক্রি করছে। ক্রেতাদের উদ্দেশে তাঁদের আহ্বান: যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি ভঙ্গ করেছে। এসব পণ্য আর জাহাজীকরণ করা যাবে না। ফলে সবকিছু এখন ৯০ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি করা হবে।
মুজি হ্যাস গুডস শীর্ষক আরেকটি অ্যাকাউন্ট থেকে বলা হচ্ছে, তাদের গুদামে আর কোনো খালি জায়গা নেই। অনেক ক্রয়াদেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো যাচ্ছে না। আবার কোনো বিক্রেতা কোস্টা কফি মগের মতো পণ্য বিক্রি করছেন, যদিও বেশির ভাগ ব্র্যান্ড আন্তর্জাতিক বাজারে অতটা পরিচিত নয়, যেমন ওস্টমার্স ও এপিএলএক্স; এসব পণ্য অ্যামাজনে বিক্রি হয়।
চীন সরকার ইতিমধ্যে জানিয়েছে, যেসব বিক্রেতাদের পণ্য জাহাজীকরণ হচ্ছে না, সেই সব পণ্য দেশের বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। ট্রাম্পের শুল্কের পর তারা এখন দেশীয় বাজারকে মার্কিন বাজারের বিকল্প হিসেবে প্রচার করছে।
এই বিক্রেতাদের তালিকায় আরও আছে জেডি ডটকম ও আলিবাবার মালিকানাধীন সুপারমার্কেট ফ্রেশিপো চীন সরকারের প্রচারণায় যুক্ত হয়েছে। জেডি ডটকম নতুন ট্যাব খুলে জানিয়েছে, দেশের রপ্তানিকারকদের সহায়তায় ২৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৭৩৫ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করা হবে। এই বিক্রেতারা যেন দেশের বাজারে এসব পণ্য বিক্রি করতে পারেন, সে লক্ষ্যে এই প্রচারণা।
চীনের পণ্য বিক্রির বার্ষিক বৃহত্তম মেলা হলো ক্যান্টন ফেয়ার। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের গুয়াংজু শহরে বছরে দুবার এই মেলা হয়। মঙ্গলবার চীনের এই রপ্তানিকারকেরা রয়টার্সকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজার তাঁদের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।
চীনের এই রপ্তানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েকটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, এই রোডনোটের লাইভস্ট্রিমের বিষয়ে কিছুটা সন্দিহান। তারা মনে করে, এসব নিছক বিপণন। এক রপ্তানিকারক বলেন, রপ্তানিকারকদের হাতে তো একাধিক বাজারের সন্ধান থাকা উচিত। বিষয়টি হলো, এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাঁরা পণ্য পাঠাতে না পারলে তাঁদের অন্য বাজারে যেতে হবে।
রেডনোটে লাইভস্ট্রিম করা ১২ জন বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে রয়টার্স; কিন্তু তাঁদের কেউই সাড়া দেননি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই প্রচারণা নিছক বিপণন বা যা–ই হোক না কেন, এটা কার্যকর হবে।
ডিজিটাল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চোজানের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাশলে দুদারেনক রয়টার্সকে বলেন, ‘চীনের এমন একধরনের মনোভাব তৈরি হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই নিপীড়ন বন্ধে আমাদের এক হতে হবে। এই পরিস্থিতিতে চীনের সামাজিক মাধ্যমে “রেসিস্ট” বা “প্রতিরোধ করুন”; “চীন এটা বানাতে পারে” বা “সেভ ফ্যাক্টরি” বা “কারখানা বাঁচাওয়ের” মতো হ্যাশট্যাগ তৈরি হয়েছে।’ ২ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করার পর এসব হ্যাশট্যাগের জন্ম।
এর মধ্যেও কেউ কেউ বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপ শেষমেশ ভালো হতে পারে। এ ঘটনায় চীনের ভোক্তাদের মনোভাব চাঙা হতে পারে। এ ঘটনায় যেটা হতে পারে সেটা হলো, মানুষ কেন বেশি বেশি কিনবে, তার যুক্তি তৈরি হবে। কারণ, বিষয়টি এখন আর নিছক ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের মধ্যে সীমিত নয়; বিষয়টি জাতীয় রূপ নিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রয়ট র স
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনগুলোয় প্রথম আলোর জমজমাট আয়োজন
২৭ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে প্রথম আলোর। ৪ নভেম্বর ২০২৫ সংখ্যাটিতে লেখা থাকবে বর্ষ ২৮, সংখ্যা ১। যা কিছু ভালো, তার সঙ্গে প্রথম আলো—এই স্লোগান নিয়ে ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বরে বেরিয়েছিল প্রথম আলোর প্রথম সংখ্যা। ঝকঝকে ছাপা, রঙিন ছবি, ১২ পৃষ্ঠার কাগজ, প্রতিদিন নতুন নতুন ফিচার পাতা, দলনিরপেক্ষতার অঙ্গীকার, বস্তুনিষ্ঠতার চর্চা, পেশাদারত্বের উৎকর্ষ আর নতুনকে মেনে নেওয়ার অবিরাম প্রয়াস—সব মিলিয়ে প্রথম আলো হয়ে ওঠে বাংলাদেশের মানুষের এক অপরিহার্য সঙ্গী। হয়ে ওঠে পরিবারেরই একজন। অল্প কয়েক বছরের মধ্যে প্রথম আলো লাভ করে সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকের সম্মান। নানা রকমের বাধা, প্রতিকূলতা পেরিয়ে সত্যে তথ্যে প্রথম আলো আজ শুধু একটা কাগজ নয়, একটা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মও। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে প্রথম আলো লাভ করেছে বাংলাভাষী পাঠকদের উষ্ণ অভ্যর্থনা, তেমনি ওয়ান–ইফরা বা ইনমার মতো আন্তর্জাতিক সংগঠন থেকে এ গণমাধ্যম লাভ করছে সম্মানজনক স্বীকৃতি, বিশ্বসেরা আর এশিয়া সেরার পুরস্কার।
প্রথম আলোর ঢাকা অফিস থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এরই মধ্যে বেজে উঠেছে উৎসবের আনন্দলহরী। জেলায় জেলায় চলছে প্রথম আলোর লেখক–সুধী পাঠক আর শুভানুধ্যায়ীদের সম্মিলনীর প্রস্তুতি। কাগজে, অনলাইনে, ভিডিও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের জন্য কর্মী আর অংশীজনদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে কর্মচাঞ্চল্য।
প্রথম আলো কাগজটি মোট ৪ দিন প্রকাশিত হবে বর্ধিত কলেবরে। ৪ দিনে থাকবে ৪টি ক্রোড়পত্র। লিখবেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে সেরা লেখকেরা। থাকবে দেশবরেণ্য শিল্পীদের আঁকা প্রচ্ছদ।
৪ নভেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার বের হবে ‘বৈষম্য পেরিয়ে’
২০২৪ সালের বিপুল অভ্যুত্থানে ছাত্র–জনতা পথে এসেছিল বৈষম্যের বিলোপ চেয়ে। এই ক্রোড়পত্রে লেখকেরা খুঁজে দেখছেন রাষ্ট্রের ক্ষমতাকাঠামোয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও রাজনীতির অঙ্গনে বৈষম্যের রূপ। খোঁজার চেষ্টা করেছেন উত্তরণের উপায়।
৫ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার প্রকাশ পাবে ‘বৈষম্যের অন্দরে’
সমাজ আর জনগোষ্ঠীর গভীরে থেকে যাওয়া বৈষম্য প্রতিফলিত হয় রাষ্ট্রে। আবার রাষ্ট্রীয় বৈষম্য সামাজিক বৈষম্যকে ভিত্তি দেয়। দেশের নারী–লেখক ও ভাবুকেরা উন্মোচন করে দেখিয়েছেন সমাজে ছড়িয়ে থাকা নানা বৈষম্যের চেহারা।
৬ নভেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার আসছে ‘তারুণ্যের দিগন্ত’
তরুণদের সামনে নতুন পৃথিবীর আহ্বান। কিন্তু সে আহ্বানে সাড়া দেওয়ার পথে শত বাধা ও বৈষম্যের প্রাচীর। আবার তরুণেরাই সেসব বৈষম্যের বাধা উপড়ে ফেলে এগিয়ে চলেন। তরুণদের পথের সেসব বাধা আর বাধা পেরোনোর গল্প নিয়ে এই ক্রোড়পত্র।
৭ নভেম্বর ২০২৫, শুক্রবার প্রকাশিত হবে ‘আলোর গল্প’
সাংবাদিকতা শেষ পর্যন্ত জনমানুষের জন্য। সত্য ও তথ্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য প্রথম আলো সেসব মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ। প্রথম আলোর নানা উদ্যোগের লক্ষ্যও মানুষ। এই ক্রোড়পত্র গত একটি বছরে প্রথম আলোর সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের গল্পের সমাবেশ।
অনলাইনে থাকছে আকর্ষণীয় আয়োজন
লেখা, ছবি, ভিডিও, পডকাস্টসহ নানা কনটেন্ট দিয়ে সাজানো হবে প্রথম আলো ডটকম, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দালোকিত দিনগুলোতে প্রথম আলো ডটকম থাকবে জমজমাট। পাশাপাশি ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রথম আলোর ফলোয়ারদের জন্য থাকবে বাড়তি কিছু, উৎসবের উপহার।
প্রথম আলোর কর্মীরা মিলবেন প্রীতিসম্মিলনীতে
৪ নভেম্বর প্রথম আলো তার সব কর্মীকে নিয়ে আয়োজন করতে যাচ্ছে প্রীতিসম্মিলনী। রাজধানীর একটি বড় মিলনায়তনের একাধিক হলরুমজুড়ে বসবে এই আসর। তাতে সারা দেশের প্রথম আলো প্রতিনিধি, ঢাকার সর্বস্তরের স্টাফদের সঙ্গে যোগ দেবেন প্রথম আলোর আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরাও। থাকবেন অতিথি বক্তা ও শিল্পীরা।
প্রথম আলো বন্ধুসভার একটি করে ভালো কাজ
এরই মধ্যে সারা দেশে প্রথম আলোর শতাধিক বন্ধুসভা ‘একটি করে ভালো কাজ’ শীর্ষক কর্মসূচি পালন করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সুধী সম্মিলনী আয়োজনের জন্য প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বন্ধুসভা কাজ করে চলেছে উৎসাহের সঙ্গে। ঢাকা বন্ধুসভাও ১৩ নভেম্বর আয়োজন করতে যাচ্ছে বন্ধুদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসব।
২০২৩ সালে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্লোগান ছিল ‘হারবে না বাংলাদেশ।’ গত বছর প্রথম আলো বলেছিল ‘জেগেছে বাংলাদেশ’। সত্যে তথ্যে ২৫, সত্যে তথ্যে ২৬ পেরিয়ে এল ২৭ বছর পূর্তির উৎসব।
প্রথম আলো আজকের দিনে, যখন চারদিকে ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি, যখন দেশবাসী অনিশ্চয়তার ধোঁয়াশার মধ্যে দিগন্তে তাকিয়ে আছেন আলোকরেখার জন্য, তখন প্রথম আলো ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কী স্লোগান নিয়ে আসছে? জানা যাবে আর কয়েক ঘণ্টা পরই।