যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের চাপে পড়েছেন চীনের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। লাঞ্চ বক্স (খাবারের বাক্স) থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামগ্রীর নির্মাতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রেডনোটের দ্বারস্থ হচ্ছেন। মার্কিন ক্রেতাদের হারিয়ে তাঁরা স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে ছাড়ে পণ্য বিক্রির প্রস্তাব দিচ্ছেন।

এক সপ্তাহ ধরে চীনের এই উদ্যোক্তারা রেডেনাটে লাইভ স্ট্রিম করছেন। সেটা হলো, তাঁরা মার্কিন ক্রেতাদের জন্য যেসব পণ্য তৈরি করেছিলেন, সেই সব পণ্য স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে বিক্রির জন্য এই কৌশল অবলম্বন করেছেন তাঁরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে চীনের পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, সেই শুল্কের কোপে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এ রকম এক লাইভস্ট্রিমে দেখা যায়, ডিংডিং ক্লাউড ফরেন ট্রেড ওয়্যারহাউস রাইস কুকার থেকে শুরু করে জুসার ও টোস্টার বিক্রি করছে। ক্রেতাদের উদ্দেশে তাঁদের আহ্বান: যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি ভঙ্গ করেছে। এসব পণ্য আর জাহাজীকরণ করা যাবে না। ফলে সবকিছু এখন ৯০ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি করা হবে।

মুজি হ্যাস গুডস শীর্ষক আরেকটি অ্যাকাউন্ট থেকে বলা হচ্ছে, তাদের গুদামে আর কোনো খালি জায়গা নেই। অনেক ক্রয়াদেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো যাচ্ছে না। আবার কোনো বিক্রেতা কোস্টা কফি মগের মতো পণ্য বিক্রি করছেন, যদিও বেশির ভাগ ব্র্যান্ড আন্তর্জাতিক বাজারে অতটা পরিচিত নয়, যেমন ওস্টমার্স ও এপিএলএক্স; এসব পণ্য অ্যামাজনে বিক্রি হয়।

চীন সরকার ইতিমধ্যে জানিয়েছে, যেসব বিক্রেতাদের পণ্য জাহাজীকরণ হচ্ছে না, সেই সব পণ্য দেশের বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। ট্রাম্পের শুল্কের পর তারা এখন দেশীয় বাজারকে মার্কিন বাজারের বিকল্প হিসেবে প্রচার করছে।

এই বিক্রেতাদের তালিকায় আরও আছে জেডি ডটকম ও আলিবাবার মালিকানাধীন সুপারমার্কেট ফ্রেশিপো চীন সরকারের প্রচারণায় যুক্ত হয়েছে। জেডি ডটকম নতুন ট্যাব খুলে জানিয়েছে, দেশের রপ্তানিকারকদের সহায়তায় ২৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৭৩৫ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করা হবে। এই বিক্রেতারা যেন দেশের বাজারে এসব পণ্য বিক্রি করতে পারেন, সে লক্ষ্যে এই প্রচারণা।

চীনের পণ্য বিক্রির বার্ষিক বৃহত্তম মেলা হলো ক্যান্টন ফেয়ার। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের গুয়াংজু শহরে বছরে দুবার এই মেলা হয়। মঙ্গলবার চীনের এই রপ্তানিকারকেরা রয়টার্সকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজার তাঁদের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।

চীনের এই রপ্তানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েকটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, এই রোডনোটের লাইভস্ট্রিমের বিষয়ে কিছুটা সন্দিহান। তারা মনে করে, এসব নিছক বিপণন। এক রপ্তানিকারক বলেন, রপ্তানিকারকদের হাতে তো একাধিক বাজারের সন্ধান থাকা উচিত। বিষয়টি হলো, এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাঁরা পণ্য পাঠাতে না পারলে তাঁদের অন্য বাজারে যেতে হবে।

রেডনোটে লাইভস্ট্রিম করা ১২ জন বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে রয়টার্স; কিন্তু তাঁদের কেউই সাড়া দেননি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই প্রচারণা নিছক বিপণন বা যা–ই হোক না কেন, এটা কার্যকর হবে।

ডিজিটাল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চোজানের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাশলে দুদারেনক রয়টার্সকে বলেন, ‘চীনের এমন একধরনের মনোভাব তৈরি হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই নিপীড়ন বন্ধে আমাদের এক হতে হবে। এই পরিস্থিতিতে চীনের সামাজিক মাধ্যমে “রেসিস্ট” বা “প্রতিরোধ করুন”; “চীন এটা বানাতে পারে” বা “সেভ ফ্যাক্টরি” বা “কারখানা বাঁচাওয়ের” মতো হ্যাশট্যাগ তৈরি হয়েছে।’ ২ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করার পর এসব হ্যাশট্যাগের জন্ম।

এর মধ্যেও কেউ কেউ বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপ শেষমেশ ভালো হতে পারে। এ ঘটনায় চীনের ভোক্তাদের মনোভাব চাঙা হতে পারে। এ ঘটনায় যেটা হতে পারে সেটা হলো, মানুষ কেন বেশি বেশি কিনবে, তার যুক্তি তৈরি হবে। কারণ, বিষয়টি এখন আর নিছক ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের মধ্যে সীমিত নয়; বিষয়টি জাতীয় রূপ নিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: রয়ট র স

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ