প্রবাসীদের মালিকানায় হাসপাতাল তৈরি করার কথা জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ওই হাসপাতালে প্রবাসীদের শুধু চিকিৎসা সুবিধাই পাবেন না, তাঁরা মালিকও হবেন।

উপদেষ্টা বলেন, ঢাকার বারিধারার কাছে একটা জমি আছে। এখানে একটি হাসপাতাল করার ইচ্ছা আছে। এ জন্য একটি কোম্পানি গঠন করা হবে। যেখানে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা থাকবে প্রবাসীদের হাতে। এ শেয়ার শুধু প্রবাসীরা কিনতে পারবেন, অন্য কেউ না।

আজ বুধবার প্রবাসীকল্যাণ ভবনের মিলনায়তনে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা। প্রবাসী পরিবারের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি, প্রতিবন্ধী ভাতা, অসুস্থ প্রবাসীদের চিকিৎসা সহায়তা এবং প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী কর্মীর পরিবারকে আর্থিক অনুদান, বিমা ও মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

হাসপাতাল করতে না পারলে কষ্ট ও অতৃপ্তি থাকবে বলে উল্লেখ করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে সব প্রত্যাগত কর্মীকে হয়তো হাসপাতালে চাকরি দেওয়া যাবে না। তবে যাঁরা নার্স, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নিরাপত্তাকর্মী, গাড়িচালক হিসেবে বিদেশ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরবেন, তাঁদের মধ্য থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। দেশের সেরা হাসপাতাল করার চেষ্টা করা হবে। প্রবাসীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ছাড় থাকবে।

প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, বিমানবন্দরে গৃহীত নানা পদক্ষেপের কারণে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ হয়েছে। বিমানবন্দর–সংশ্লিষ্ট কর্মীরা প্রবাসীদের সঙ্গে যেন ভালো আচরণ করেন, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে প্রবাসী লাউঞ্জে শতকরা ৩০ ভাগ পর্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন খাবার, ফ্রি ওয়াই-ফাই, ফ্রি টেলিফোন, মোবাইল চার্জিংসহ অন্যান্য সুবিধা রয়েছে।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য বলছে, ১২টি পরিবারকে ৩৬ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছেন ৬৫ জন। ১১ জনকে বিমা দাবি হিসেবে দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা। ক্ষতিপূরণ, বকেয়া ও সার্ভিস বেনিফিট হিসেবে দুটো পরিবার পেয়েছে ২৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। তিনজনকে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ১ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়েছেন ১০ জন। সব মিলে আজ মোট ১০৩ জনকে ১ কোটি ৯৩ লাখ ১৩ হাজার টাকার সহায়তা তুলে দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, যে সহায়তা বা অনুদান দেওয়া হচ্ছে, এটি সরকারি টাকা নয়, বরং প্রবাসীদেরই টাকা। বিদেশে যাওয়ার আগে তাঁরা যে ফি জমা দেন, তা কল্যাণ বোর্ডের তহবিলে জমা থাকে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে মোট ১২ হাজার ১৫৮ জনকে ২৭৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার বিভিন্ন সহায়তা করেছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া। স্বাগত বক্তব্য দেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো.

গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব স দ র অন ষ ঠ ন উপদ ষ ট পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’

নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি। 

৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে। 

আরো পড়ুন:

দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে

সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা

২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা। 

চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী। 

উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।” 

চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।” 

চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়। 

মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ