প্রবাসীদের মালিকানায় হাসপাতাল করা হবে: প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা
Published: 16th, April 2025 GMT
প্রবাসীদের মালিকানায় হাসপাতাল তৈরি করার কথা জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ওই হাসপাতালে প্রবাসীদের শুধু চিকিৎসা সুবিধাই পাবেন না, তাঁরা মালিকও হবেন।
উপদেষ্টা বলেন, ঢাকার বারিধারার কাছে একটা জমি আছে। এখানে একটি হাসপাতাল করার ইচ্ছা আছে। এ জন্য একটি কোম্পানি গঠন করা হবে। যেখানে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা থাকবে প্রবাসীদের হাতে। এ শেয়ার শুধু প্রবাসীরা কিনতে পারবেন, অন্য কেউ না।
আজ বুধবার প্রবাসীকল্যাণ ভবনের মিলনায়তনে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা। প্রবাসী পরিবারের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি, প্রতিবন্ধী ভাতা, অসুস্থ প্রবাসীদের চিকিৎসা সহায়তা এবং প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী কর্মীর পরিবারকে আর্থিক অনুদান, বিমা ও মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
হাসপাতাল করতে না পারলে কষ্ট ও অতৃপ্তি থাকবে বলে উল্লেখ করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে সব প্রত্যাগত কর্মীকে হয়তো হাসপাতালে চাকরি দেওয়া যাবে না। তবে যাঁরা নার্স, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নিরাপত্তাকর্মী, গাড়িচালক হিসেবে বিদেশ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরবেন, তাঁদের মধ্য থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। দেশের সেরা হাসপাতাল করার চেষ্টা করা হবে। প্রবাসীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ছাড় থাকবে।
প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, বিমানবন্দরে গৃহীত নানা পদক্ষেপের কারণে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ হয়েছে। বিমানবন্দর–সংশ্লিষ্ট কর্মীরা প্রবাসীদের সঙ্গে যেন ভালো আচরণ করেন, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে প্রবাসী লাউঞ্জে শতকরা ৩০ ভাগ পর্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন খাবার, ফ্রি ওয়াই-ফাই, ফ্রি টেলিফোন, মোবাইল চার্জিংসহ অন্যান্য সুবিধা রয়েছে।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য বলছে, ১২টি পরিবারকে ৩৬ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছেন ৬৫ জন। ১১ জনকে বিমা দাবি হিসেবে দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা। ক্ষতিপূরণ, বকেয়া ও সার্ভিস বেনিফিট হিসেবে দুটো পরিবার পেয়েছে ২৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। তিনজনকে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ১ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়েছেন ১০ জন। সব মিলে আজ মোট ১০৩ জনকে ১ কোটি ৯৩ লাখ ১৩ হাজার টাকার সহায়তা তুলে দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, যে সহায়তা বা অনুদান দেওয়া হচ্ছে, এটি সরকারি টাকা নয়, বরং প্রবাসীদেরই টাকা। বিদেশে যাওয়ার আগে তাঁরা যে ফি জমা দেন, তা কল্যাণ বোর্ডের তহবিলে জমা থাকে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে মোট ১২ হাজার ১৫৮ জনকে ২৭৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার বিভিন্ন সহায়তা করেছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া। স্বাগত বক্তব্য দেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রব স দ র অন ষ ঠ ন উপদ ষ ট পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।