নওগাঁয় বাসায় ঢুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘সংগঠক’কে কুপিয়ে জখম
Published: 16th, April 2025 GMT
নওগাঁ শহরে বাসায় ঢুকে আলিউজ্জামান পিও (২২) নামের তরুণকে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ বুধবার দুপুর একটার দিকে শহরের কেডির মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত তরুণকে উদ্ধার করে প্রথমে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আলিউজ্জামান রাজশাহী বঙ্গবন্ধু কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তাঁর বাবা আতিকুর রহমান পেশায় চালকল ব্যবসায়ী। তিনি দাবি করেন, আলিউজ্জামান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সংগঠক ছিলেন। এ কারণে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁর ছেলেকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। হুমকিদাতারাই এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আতিকুর রহমান পরিবার নিয়ে ৯ বছর ধরে শহরের কেডির মোড় এলাকায় চারতলা ভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। তিনি নওগাঁ পৌরসভার পার-নওগাঁ সরদারপাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা।
আহত তরুণের স্বজন, স্থানীয় বাসিন্দা ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আলিউজ্জামান আজ দুপুরে বাড়িতে একাই ছিলেন। বেলা একটার দিকে ২৫-৩০ তরুণ ঘরে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কোপাতে থাকে। এ সময় তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ওই বাসার তত্ত্বাবধায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বেলা একটার দিকে ২৫-৩০ জন তরুণ জোর করে বাসার ভেতর ঢুকে পড়ে। তাদের সবার বয়স ১৭ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। তিনতলায় আতিক সাহেবের বাসায় ঢুকে তাঁর ছেলেকে কুপিয়ে জখম করে চলে যায়। আশপাশের লোকজন আসার আগেই পালিয়ে যায়।
নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আবু জার গাফফার বলেন, বেলা ১টা ৪০ মিনিটের দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় আলিউজ্জমানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মাথা, পাঁজর ও বুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর আঘাত ছিল। জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়।
আহত তরুণের বাবা আতিকুর রহমান দাবি করে বলেন, ‘আমার ছেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সংগঠক ছিল। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁর ছেলেকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। তাঁদের ধারণা ছাত্রলীগের কর্মীরাই দিনদুপুরে বাসায় ঢুকে তাঁকে কুপিয়ে জখম করে গেছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাজশাহী মেডিকেল কলেজে অপারেশনের (অস্ত্রোপচার) প্রস্তুতি চলছে। হামলাকারীদের কয়েকজনের পরিচয় জানা গেছে। এ ঘটনায় মামলা করব।'
নওগাঁয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো কমিটি নেই। জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে পরিচিত ফজলে রাব্বী বলেন, আলিউজ্জামান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন কি না, এই মূর্হূতে তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।
এ বিষয়ে নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ অবস থ য় স গঠক
এছাড়াও পড়ুন:
সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতার সমর্থকদের
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী শহীদ মিনার এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দেন। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করার খবর পাওয়া গেছে। রাত সাড়ে আটটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে মিছিল করছিলেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।
এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়। বাদ পড়েন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী।
এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আসলাম চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে দেন। এ সময় তাঁরা ‘দুর্দিনের আসলাম ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’ ‘আসলাম ভাইয়ের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এমন স্লোগান দেওয়া হয়।
বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, আসলাম চৌধুরী দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছেন। তিনি দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে কারাবন্দী হন। দীর্ঘ সময় তিনি জেল-জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। অথচ এখন সুসময়ে দল তাঁকে বঞ্চিত করছে। তাঁরা দলের এ সিদ্ধান্ত মানেন না। তাই প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন তাঁরা।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মো. মোরসালীন প্রথম আলোকে বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। তাঁরা যে যাঁর জায়গা থেকে মহাসড়কে উঠে প্রতিবাদ শুরু করেন। তাঁরা অন্তত সীতাকুণ্ডের ৩০টি স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
ঘোষিত প্রার্থী কাজী মুহাম্মদ সালাউদ্দিন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ছোট ভাই। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম তাঁকে যোগ্য মনে করেছেন বিধায় তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করতে চান। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন।
ফৌজদারহাট পুলিশ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের মাথা, ফৌজদারহাট, জলিল গেইট, ভাটিয়ারী, মাদামবিবিরহাট, কদমরসুল এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ রয়েছে। ফলে উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ। পুলিশ বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সরাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।