'এবারের বৈশাখের স্বপ্ন-শপথ, আগামীর বৈষম্যের বাংলাদেশ' প্রতিপাদ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে দুইদিন পর আনন্দ শোভাযাত্রা করা হয়েছে।

এদিকে, এ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ না করায় খালেদা জিয়া হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দীন ডাইনিংয়ে খাবার বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে দুপুরের খাবার নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি করেন তারা। 

বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন চত্বর থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাংলা মঞ্চে এসে শেষ হয়।

আরো পড়ুন:

কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি ইবি শিক্ষার্থীদের

কুয়েটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি ইবি ছাত্র ইউনিয়নের

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মনজুরুল হক, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী, আবাসিক হল ও বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা- কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। 

শোভাযাত্রায় শিক্ষার্থীরা বর-কনে, কৃষক, জমিদার, কুলি, চাষী, জেলে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, জাতীয় কবি নজরুল, আবু সাইস-মুগ্ধসহ ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতি, ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষের দৃষ্টান্ত, ঐতিহ্যবাহী পালকি, ঢেঁকি, গরু ও মহিষের গাড়ি, সম্প্রীতির প্রতিচ্ছবিসহ নানা চরিত্র উপস্থাপন করেন।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

নববর্ষের দুইদিন পর শোভাযাত্রার বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এম এয়াকুব আলী বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শহর থেকে অনেক দূরে হওয়ায় ক্যাম্পাস বন্ধের দিন শিক্ষার্থীরা উপস্থিত খুব একটা হয় না। যেহেতু আমাদের মূল আয়োজন শিক্ষার্থীদের নিয়েই, সেহেতু তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ক্যাম্পাস খোলার দিন আয়োজন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আশা করি, প্রোগ্রামটি প্রাণবন্ত হয়েছে।” 

নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রাণের উৎসব। আজকের শোভাযাত্রা আমাদের জন্য আনন্দের মেলা। এটি বাঙালি ও বাংলাদেশি সংস্কৃতির ধারাবাহিকতার অংশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে ঐক্য আমরা গড়েছি, সেই ঐক্য হবে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি। আমরা এই ঐক্য নিয়ে এগিয়ে যাব শিক্ষা ও গবেষণার পথে।”

এদিকে খালেদা জিয়া হল ডাইনিংয়ের খাবার বন্ধের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, নববর্ষ উপলক্ষে হলটিতে দুপুরে পান্তাভাত, ভর্তা ও রুই মাছ ভাজির বিশেষ আয়োজন করা হয়। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি র‍্যালিরও পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আশানুরূপ সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত না হওয়ায় প্রাধ্যক্ষ হতাশ হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে দুপুরের খাবার পরিবেশন বন্ধ ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে রাত ৯টায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি মিটিং ডাকার নির্দেশ দেন। এটা খুবই দুঃখজনক।

শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রাধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী কাজ করেছেন। এজন্য অনতিবিলম্বে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।

না প্রকাশে অনিচ্ছুক হল ডাইনিংয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রাত ২টা থেকে রান্নার প্রস্তুতি শুরু হয়। দুপুরের আগে সবকিছু প্রায় প্রস্তুত থাকলেও শেষ মুহূর্তে প্রাধ্যক্ষ স্যার রান্না বন্ধ করতে বলেন।”

অভিযোগের বিষয়ে খালেদা জিয়া হল প্রাধ্যক্ষ জালাল উদ্দীন বলেন, “প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি বছরের ন্যায় হল থেকেও আমরা অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। একটা হলে ৪০০ মেয়ে আছে, অথচ সেখানে ৬/৭ জন উপস্থিত হয়। আমাদের ব্যান্ড পার্টি ছিলো, এই সাতজন নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব না হওয়ায় পরিকল্পনা বাদ দেই। আর অল্প সময়ের মধ্যে ডাইনিংয়ের খাবারের ব্যবস্থা করা খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। তাই সাড়ে ১১টার দিকে নোটিশে জানিয়ে দেওয়া হয়.

দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে না।  

শিক্ষার্থীদের পদত্যাগ দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে ইবি প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপ চ র য পদত য গ নববর ষ আম দ র উপস থ

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ

আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।

আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’

হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।

নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্‌যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।

এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’

বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।

প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজকীয় ভোজে ট্রাম্প–মেলানিয়াকে কী কী খাওয়ালেন রাজা চার্লস
  • দুর্গাপূজায় নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থায় থাকবে পুলিশ: আইজিপি
  • শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সিঙ্গাইরের ৭৭ মণ্ডপে অনুদান বিতরণ
  • শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন উপলক্ষে বন্দরে প্রস্তুুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত 
  • মোদির জন্মদিনে ট্রাম্পের ফোন, মেসির উপহার
  • বেনাপোল দিয়ে ইলিশের প্রথম চালান গেল ভারতে
  • সদর উপজেলায় শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা
  • ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেল ৩৭টি প্রতিষ্ঠান
  • ‘ওজোনস্তর ক্ষয়ে স্বাস্থ্য, কৃষি ও প্রাণিজগৎ ঝুঁকির মুখে’
  • দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ