ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তাঁরা এই প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি দুটি দাবি উত্থাপন করে।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আবদুল কাদের দাবি দুটি তুলে ধরেন। প্রথম দাবি, অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রকে চারুশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষকে ক্ষতিপূরণ এবং তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় গড়পাড়া ইউনিয়নের চান্দইর ঘোষের বাজার এলাকায় মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় বাড়িতে মানবেন্দ্র ও তাঁর মা, বাবা, স্ত্রীসহ সাতজন ছিলেন। খবর পেয়ে ভোর চারটার দিকে মানিকগঞ্জের ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হাসান খানকে প্রধান করে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মানিকগঞ্জ সদর থানায় মামলাও হয়েছে।

মানবেন্দ্র ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, পয়লা বৈশাখের আগের দিন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে হুমকি দিয়ে আসছিল দুর্বৃত্তরা। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে আয়োজিত আনন্দ শোভাযাত্রায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখাবয়বসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য তৈরির অভিযোগে তাঁকে এ হুমকি দেওয়া হয়। তবে তিনি হাসিনার মুখাবয়ব তৈরি করেননি। তিনি বাঘের মোটিফ তৈরি করেছেন।

মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, ফেসবুকে আসা হুমকির বিষয়ে গত মঙ্গলবার সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপরই রাতে তাঁর বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে তাঁর শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত নিজের তৈরি বহু মূল্যবান চিত্রকর্ম পুড়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন।

আরও পড়ুনহুমকি পেয়ে সন্ধ্যায় থানায় জিডি, রাতে আগুনে পুড়ল ভাস্কর মানবেন্দ্রর বাড়ি৯ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ স কর এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ