ইউনাইটেডের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে শিশুটির চোখে পানি, ঠোঁটে হাসি
Published: 18th, April 2025 GMT
আগের রাতে রিয়াল মাদ্রিদের ঘুরে দাঁড়ানো দেখার আশায় হতাশ হয়েছেন সবাই। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর সমস্ত হুংকার ‘আষাঢ়ে গর্জন’ হয়েই থেকে গেছে। কিন্তু বার্নাব্যুতে যা দেখা যায়নি গতকাল রাতে সেটাই দেখা গেল ওল্ড ট্রাফোর্ডে।
উত্থান–পতনের অনবদ্য এক লড়াইয়ে অবিশ্বাস্যভাবে শেষ মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ইউরোপা লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল ফিরতি লেগ লড়াইয়ে লিঁওর বিপক্ষে ইউনাইটেডের জিতেছে ৫–৪ গোলে। দুই লেগ মিলিয়ে ৭–৬ গোলের অগ্রগামিতায় সেমিফাইনালে উঠেছে রুবেন আমোরিমের দল।
ওল্ড ট্রাফোর্ডে খেলা শেষে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও দিয়ে পুরো ম্যাচটাকে বিশ্লেষণ করা যায়। ম্যাচের তখন ১১৭ মিনিট। ইউনাইটেড পিছিয়ে ৪–৩ গোলে (দুই লেগ মিলিয়ে ৬–৫ গোলে)। এমন পরিস্থিতিতে গ্যালারিতে এক শিশু হতাশায় কান্না জুড়ে দিল।
অতিরিক্ত সময়ের যোগ করা সময়ে ইউনাইটেডের হয়ে হ্যারি মাগুয়ার যখন জয়সূচক গোলটি করেন, তখনও কাঁদছিল সেই শিশু। চোখ ভেজা অথচ ঠোঁটে হাসি। অনবদ্য এক দৃশ্য। আসলে পুরো ম্যাচটাই ছিল আবেগের এমন রোলারকোস্টার। ওল্ড ট্রাফোর্ডের লাল গ্যালারির পুরোটাই ভেসেছে এমন আবেগে।
প্রথম লেগে লিওঁর মাঠে ২–২ গোলে ড্রয়ের পর ফিরতি লেগে ইউনাইটেডের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। প্রথমার্ধেই ২–০ গোলে লিড নিয়ে নেয় স্বাগতিকরা। ইউনাইটেডের হয়ে গোল করেন ম্যানুয়াল উগার্তে ও দিয়াগো দালত।
আরও পড়ুনবার্নাব্যুর ভয়কেও জয়, রিয়ালকে বিদায় করে সেমিফাইনালে আর্সেনাল১৬ এপ্রিল ২০২৫দ্বিতীয়ার্ধের ৭০ মিনিট পর্যন্ত এই লিড ধরে রেখেছে ইউনাইটেড। কিন্তু ৭১ থেকে ৭৭—এই সাত মিনিটে দুই গোল করে দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসে লিওঁ। কোরেনটিন তোলিসোর পর গোল করেন নিকোলাস তালিয়াফিকো। নির্ধারিত সময়ে আর কোনো গোল না হলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
নির্ধারিত সময়ের ৮৯ মিনিটে লিওঁর তোলিসো লাল কার্ড দেখায় অতিরিক্ত সময়ে দশ জন নিয়ে খেলতে হয় লিওঁকে। কিন্তু একজন কম নিয়েও ১০৯ মিনিটের মাথায় ৪–২ গোলের লিড নেয় ফরাসি ক্লাবটি। অর্থাৎ দুই লেগ মিলিয়ে ইউনাইটেড তখন পিছিয়ে ৬–৪ গোলে। গোল দুটি করেন রায়ন চেরকি ও আলেক্সান্দার লাকাজেতে। এ পরিস্থিতিতে ইউনাইটেডের হতাশাজনক বিদায়ই ধরে নিয়েছিলেন অনেকে।
কিন্তু ভেতরে ভেতরে ওল্ড ট্রাফোর্ড প্রস্তুতি নিচ্ছিল মহাকাব্য লেখার। ১১৪ মিনিটে ব্রুনো ফার্নান্দেজের পেনাল্টি গোলে ব্যবধান ৪–৩ করে ইউনাইটেড। এরপর ১২০ মিনিটে কোবি মাইনু গোল করে সমতায় ফেরান ইউনাইটেডকে। সমতা ফেরার পর সবার চোখ ছিল সম্ভাব্য টাইব্রেকারে।
আরও পড়ুনএটাই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সবচেয়ে বাজে দল ১৪ এপ্রিল ২০২৫কিন্তু ম্যাচটা ততদূর যেতে দেননি ম্যাগুয়ার। ১২১ মিনিটে গোল করে ইউনাইটেডকে আনন্দে এবং লিওঁকে ভাসান হতাশায়। আর সব মিলিয়ে ইউনাইটেড পেলে অনেক দিন মনে রাখার মতো এক জয়। যা তাদের মৌসুমে ট্রফি জেতার সম্ভাবনাও বাঁচিয়ে রেখেছে। ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে ইউনাইটেডের প্রতিপক্ষ অ্যাথলেটিক বিলবাও। আর অন্য সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে টটেনহাম ও বোডো/গ্লিমট।
ইউনাইটেডের জন্য মৌসুমটা কাটছিল হতাশাজনকভাবে। প্রিমিয়ার লিগে দলটির অবস্থান এখন ১৪তম। প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে কম পয়েন্টও পেতে যাচ্ছে তারা।
গ্যালারিতে হাসি ফুটবল ফার্গুসনের মুখে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ইন ল গ ল কর ত সময়
এছাড়াও পড়ুন:
দু–তিন দিনে পড়ার মতো মুক্তিযুদ্ধের অনবদ্য পাঁচ উপন্যাস
মুক্তিযুদ্ধের বঞ্চনা ও প্রতিরোধের মর্ম অনুধাবন ও সামষ্টিকভাবে জাতীয় চেতনাবোধ প্রজ্বালনে বৃহৎ পরিসরের উপন্যাস পাঠ অত্যন্ত জরুরি। যুদ্ধের ঘটনাশ্রয়ী বড় উপন্যাসগুলো কেবল ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ দেয় না, বরং যুদ্ধের মনস্তাত্ত্বিক গভীরতা, মানুষের ব্যক্তিগত সংগ্রাম এবং নৈতিক দ্বন্দ্বের সঙ্গে পাঠককে নিবিড়ভাবে পরিচিত করায়। আজ থাকছে যুদ্ধনির্ভর অজস্র লিখিত ভাষ্যের মধ্যে বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি উপন্যাস, যেগুলো পরবর্তী প্রজন্মকে আখ্যানের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার মূল্য সম্পর্কে সচেতন করতে সক্ষম এবং যুদ্ধের অভিঘাত, ত্যাগ ও প্রভাবের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করে।
১. রাইফেল রোটি আওরাত‘রাইফেল রোটি আওরাত’ আনোয়ার পাশার (১৯২৮-১৯৭১) মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রেক্ষাপটে রচিত একটি কালজয়ী উপন্যাস। ১৮২ পৃষ্ঠার এ উপন্যাসের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত থেকে ২৮ মার্চের ভোর পর্যন্ত মাত্র তিন দিনের ঘটনাবলিকে কেন্দ্র করে। এতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যা ও ধ্বংসলীলার স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে উদগ্র বীভৎসতায়। কেন্দ্রীয় চরিত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সুদীপ্ত শাহীন, যিনি সপরিবার টিচার্স কোয়ার্টারের ২৩ নম্বর ভবনে থাকতেন। চারপাশে সহকর্মী ও ছাত্রদের লাশের স্তূপের মাঝেও সুদীপ্ত শাহীন ও তাঁর পরিবার ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। এই বেঁচে থাকার অপরাধবোধ, ভয়াবহ গণহত্যার চাক্ষুষ বিবরণ এবং নতুন ভোরের প্রতীক্ষাই উপন্যাসটির করুণ আবেদন।
আনোয়ার পাশা (১৯২৮—১৯৭১)