জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখন অভিভাবকহীন এক প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। তারা সারা দেশে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, এমনকি হত্যাকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে। আমাদের এক ছাত্রদল নেতাকেও তারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। গণ–অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া এই প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে এখন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়েছে। অথচ এই ব্যানারের কেউ কোনো দায় নিচ্ছে না। সবাই অপকর্ম করে যাচ্ছে।’

আজ রোববার পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাছির উদ্দীন এসব কথা বলেন। পরে ছাত্রদলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবিলম্বে বিলুপ্ত করা উচিত উল্লেখ করে সম্মেলনে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘পিতামাতাহীন সন্তান যেমন অসহায় থাকে, ঠিক তেমনিভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখন নেতৃত্বহীন ও অগঠিত। তারা সারা দেশে আবারও ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েমের চেষ্টা করছে।’

সম্মেলনে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব নির্বাচন করছে উল্লেখ করে নাছির উদ্দীন বলেন, ‘তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা চাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতৃত্ব নির্বাচন হোক। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে ছাত্রদলের অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে রাজনীতি করতে চাই।’

নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য আড়াই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের নির্বাচন চালু করা। এর মধ্যে ৬০টি মাদ্রাসাও রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের প্রতি যে বৈষম্য করেছে, তা দূর করতে আমরা রাজনৈতিকভাবে সচেতন করার কাজ করছি।’

নারী শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গত ১৬ বছরে নারীরা অনেক পিছিয়ে ছিল। আমরা চাই তাদের নেতৃত্বে আনতে। আজকের সম্মেলনে অসংখ্য নারী শিক্ষার্থী লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য ভোট দিয়েছে—তাদের আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। এই দেশকে বদলাতে হলে নারী ভোটারদের ভূমিকা অপরিহার্য।’

কলেজ শাখা ছাত্রদলের কাউন্সিলে ২ হাজার ৪৮ জন ভোটারের মধ্যে ১ হাজার ৩৬২ জন তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ভোট গণনা শেষে সন্ধ্যায় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। এতে সভাপতি পদে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে রাকিবুল ইসলাম রাকিব ৮৭৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। সাধারণ সম্পাদক পদে ৯ জন প্রার্থীর মধ্য থেকে ইমরুল কায়েস কাব্য ৩৮২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।

সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তৌহিদুল রহমান আওয়াল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ, মোকসেদুল মোমিন প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র

এছাড়াও পড়ুন:

সমাধানে প্রয়োজন জরুরি উদ্যোগ

ভৌগোলিক ও অবকাঠামোগত কারণে পার্বত্য তিন জেলা এমনিতেই রাষ্ট্রীয় অনেক সুবিধা থেকে পিছিয়ে পড়া। এর মধ্যে প্রথম আলোর খবরে এসেছে, রাঙামাটির সরকারি ও এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়গুলোতে মোট ১ হাজার ৭০০ শিক্ষকের পদের বিপরীতে ৬৫৭টি পদ দীর্ঘদিন শূন্য পড়ে আছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে জেলাটির শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ওপর। যার প্রমাণ পাওয়া যায় এ বছর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে। রাঙামাটিতে ২০২৪ সালে এসএসসিতে পাসের হার যেখানে ছিল ৭১ দশমিক ৮৮ শতাংশ, ২০২৫ সালে সেখানে পাসের হার ৫৫ দশমিক ৯৮ শতাংশে নেমে আসে।

শিক্ষকসংকটে জেলাটিতে মাধ্যমিক শিক্ষায় যে গভীর সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা আর কোনোভাবেই উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। জেলার সরকারি ও এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়গুলোতে মোট ১ হাজার ৭০০ শিক্ষকের পদের বিপরীতে ৬৫৭টি পদ দীর্ঘদিন শূন্য পড়ে থাকা কেবল প্রশাসনিক দুর্বলতারই নয়, শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি অবহেলারও প্রকট উদাহরণ। এর সরাসরি মূল্য দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। জেলাটির মাচ্ছ্যাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের মতো অনেক বিদ্যালয়ে অর্ধেকের কম শিক্ষক নিয়ে পাঠদান চালাতে হচ্ছে, যা পাঠদানের প্রক্রিয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী—উভয়েরই ক্ষতি করছে।

পাহাড়ি অঞ্চলের বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদায়ন ও স্থায়িত্ব—দুটি সমস্যাই সমান গুরুত্বের দাবি রাখে। অনেক ক্ষেত্রেই সমতল এলাকার শিক্ষকেরা পাহাড়ি পরিবেশে থাকতে অনিচ্ছুক। ফলে ওখানে পদায়ন করা হলে দ্রুত বদলির তদবির বা পেশা ত্যাগের ঘটনাও ঘটে। ফলে শূন্য পদের সংখ্যা কমার বদলে আরও বাড়ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় বাসিন্দাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের উদ্যোগ জরুরি। এতে একদিকে শিক্ষকঘাটতি কমবে, অন্যদিকে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষাবোধসম্পন্ন শিক্ষকের মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা পাবে।

সমাধানের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন দ্রুত নিয়োগ। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পিএসসি এবং এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এনটিআরসিএর মাধ্যমে বিশেষ নিয়োগ কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকা ৫৫৪টি এমপিওভুক্ত পদের দ্রুত তালিকা তৈরি করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ সম্পন্ন করা জরুরি।

পাশাপাশি পাহাড়ি অঞ্চলে কর্মরত শিক্ষকদের জন্য বিশেষ ভাতা, নিরাপদ আবাসন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট–সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তাঁরা উৎসাহের সঙ্গে স্থায়ীভাবে কাজ করতে পারেন।

পার্বত্য জেলাগুলোর জন্য শিক্ষার্থীদের আবাসনব্যবস্থার ঘাটতিও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। দূরদূরান্ত থেকে এসে প্রতিদিন ক্লাস করা অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রাবাস নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ের শূন্য পদ পূরণ করা জরুরি বলে মনে করি।

আমরা আশা করি, সরকার রাঙামাটির মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক সংকটকে জরুরি সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে দ্রুত ও টেকসই সমাধানের উদ্যোগ নেবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ