রাজধানীর বনানীতে হাসাহাসির মতো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ছুরিকাঘাতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ নিহতের ঘটনা মানতে পারছেন না স্বজন ও এলাকাবাসী। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে অবিরাম কাঁদছেন মা পারভীন আক্তার ও বাবা জসিম উদ্দিন। কাঁদতে কাঁদতে অচেতন হয়ে পড়ছেন পারভীন। জ্ঞান ফিরলে বিলাপ করে তিনি বলছেন, ‘আমার পুতেরে আইনা দাও। আমি একটাবার পুতের মুহেত্তে মা ডাক হুনবার চাই।’ 

পারভেজের বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরুনীয়া ইউনিয়নের কাইচান গ্রামে। তিনি প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শনিবার বিকেলে একদল যুবক তাঁকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। রোববার বিকেল সাড়ে ৫টায় গ্রামের বাড়িতে মরদেহ পৌঁছায়। এর আগে ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে রোববারই কুয়েত থেকে ফিরেছেন জসিম উদ্দিন। মরদেহ বাড়িতে পৌঁছলে পারভেজের মা-বাবার কান্না দেখে উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পারভেজের নিথর দেহের পাশে কাঁদছেন স্বজন ও গ্রামবাসী। আহাজারি করতে করতে জসিম বলেন, ‘আমার পুতেই যদি না থাহে, আমি বাইচ্চা থাইক্কা লাভ কী? যারা আমার পুতেরে মারছে তাদের ফাঁসি চাই।’

পারভেজ ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে তাঁর মরদেহ নেওয়া হয় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। সেখানে প্রথম জানাজা হয়। পরে রাত ১০টার দিকে গ্রামে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। 

এদিকে পারভেজ হত্যার প্রতিবাদে আজ সোমবার সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রদল। রোববার নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘পারভেজের খুনিদের রাজনৈতিক প্রশ্রয়দাতাসহ খুন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত সবার যথাযথ বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

জানাজা শেষে নয়াপল্টন থেকে মরদেহ নেওয়া হয় প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। সেখান থেকে পরে পারভেজের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের মামাতো ভাই হুমায়ন কবীর শনিবার গভীর রাতে বনানী থানায় আটজনের নামে হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি ২৫ থেকে ৩০ জন। 

এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন– বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম আহ্বায়ক সোবহান নিয়াজ তুষার ও যুগ্ম সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজি এবং মেহেরাজ ইসলাম, আবু জহর গিফ্ফারি ওরফে পিয়াস, মাহাথির হাসান, রিফাত, আলী ও ফাহিম। রোববার রাত ৯টা পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশ বলছে, পারভেজ হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।

এজাহারে বলা হয়েছে, শনিবার বিকেল ৩টার দিকে পারভেজ, তাঁর বন্ধু টেক্সটাইল বিভাগের তরিকুল, সুকর্ণ, ইমতিয়াজসহ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে একটি দোকানে নিজেরা কথাবার্তা এবং হাসাহাসি করছিলেন। তাদের পেছনেই ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের দুই ছাত্রী দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় আসামি মেহেরাজ, পিয়াস ও মাহাথি হাসাহাসির কারণ জানতে চান। এ নিয়ে পারভেজদের সঙ্গে তাদের বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। ঘটনা নজরে এলে তাদের নিয়ে বসে তিন শিক্ষক বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। এর পর আসামিরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যান। বন্ধুদের সঙ্গে পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে মেহেরাজ, পিয়াস ও মাহাথি বহিরাগতদের সঙ্গে মিলে পারভেজসহ অন্যদের ধাওয়া করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় আসামিরা পারভেজ ও তরিকুলকে ফটকের সামনে মারধর করেন। এক পর্যায়ে পারভেজের বুকে ছুরিকাঘাত করেন মেহেরাজ। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অন্য আসামিরাও মারধর ও ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় তরিকুলকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় দু’জনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক পারভেজকে মৃত ঘোষণা করেন। তরিকুল সেখানে চিকিৎসাধীন।

বনানী থানার ওসি রাসেল সারোয়ার বলেন, রোববার দুপুরে অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী থানায় এসে আসামিদের গ্রেপ্তার এবং সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি, দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।

এদিকে পারভেজ হত্যার বিচার দাবিতে রোববার দুপুরে ভালুকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে উপজেলা ছাত্রদল। এ ছাড়া প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ও বনানীর কাকলী এলাকায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হত ছ ত রদল মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

একাদশ জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার ফলাফল প্রকাশ

একাদশ জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা ২০২৫–এর ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। আজ রোববার সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। আগামী ২০ ডিসেম্বর বেলা তিনটায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ওই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

এবার সারা দেশ থেকে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ৮৫০ ও রচনা প্রতিযোগিতায় ৩০০ প্রতিযোগী অংশ নেয়। চিত্রাঙ্কন ও রচনার প্রতিটি বিষয়ে তিনটি বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি বিভাগের প্রথম স্থান অধিকারীকে ‘ত্বকী পদক’ দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীকে বিশেষ ক্রেস্ট, বই ও সনদ এবং সেরা ১০ জনকে ক্রেস্ট, বই ও সনদ দেওয়া হবে।

উভয় বিষয়ের প্রতিটি বিভাগের সেরা ১০ জনের ছবি ও লেখা নিয়ে একটি সুশোভিত স্মারক ‘ত্বকী’ প্রকাশিত হবে। প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত বিচারক ছিলেন রচনায় আনু মুহাম্মদ ও রফিউর রাব্বি। চিত্রাঙ্কনে রফিকুন নবী, জাহিদ মুস্তাফা ও অশোক কর্মকার।

প্রতিযোগিতার ‘ক’ বিভাগে ‘স্বপ্নের স্বদেশ’ বিষয়ে রচনায় প্রথম হয়ে ‘ত্বকী পদক’ পেয়েছে নুসাইবা জাহান জ্যোতি (নারায়ণগঞ্জ), দ্বিতীয় আবু ইমরান (ফেনী) ও তৃতীয় রক্তিম ঘোষ (নারায়ণগঞ্জ)। সেরা ১০–এ আছে নারায়ণগঞ্জের আজমাইন আন্ত, তাশফিয়া জারিন হায়দার, নাফিসা আনজুম, জুনাইরা জারা আরিবা, সুরাইয়া জাহান রুশান, বরিশালের প্রাপ্তি লতা কুণ্ডু ও ময়মনসিংহের শেখ রাইছা।

‘খ’ বিভাগে ‘জুলাই ছাত্র গণ–অভ্যুত্থান’ শিরোনামে রচনায় প্রথম হয়ে ‘ত্বকী পদক’ পেয়েছে মো. তাওহীদুল ইসলাম (ঢাকা), দ্বিতীয় আবদুল্লাহ আল ওয়াহিব (বগুড়া) ও তৃতীয় মুহিব ই যাহরা ফিজা (ঢাকা)। সেরা ১০–এ আছে বগুড়ার মো. সামিন ইয়াসির, দিশা বসাক, নাফিম হায়াত, রংপুরের আরণ্যক পাল প্রাচুর্য, ঢাকার জায়ান দেওয়ান, নারায়ণগঞ্জের অথৈ বিশ্বাস ও ঐশি সিংহ।

‘গ’ বিভাগে ‘ত্বকীকে নিয়ে রচনা’য় প্রথম হয়ে ‘ত্বকী পদক’ পেয়েছে দেবাশ্রিতা পাল, দ্বিতীয় আমানুর রহমান (নারায়ণগঞ্জ) ও তৃতীয় ফারবিন ফাইজা (ঝিনাইদহ)। সেরা ১০–এ আছে মো. নাজমুল হাসান খান (জামালপুর), নাহিমা আক্তার নিপা (ঢাকা), সাদিয়া আফরিন (ফেনী), নির্ভিক পাল চৌধুরী (যশোর), রামিছা আক্তার মমি (ময়মনসিংহ), নারায়ণগঞ্জের মাহমুদুর রহমান ও ফারিনা সাঈদ এশা।

চিত্রাঙ্কনের ‘ক’ বিভাগে প্রথম হয়ে ‘ত্বকী পদক’ পেয়েছে সফ্ফান সাদ মাহিম (ঢাকা), দ্বিতীয় ছড়া ইসলাম (ঢাকা) ও তৃতীয় প্রিয়ন্তী নন্দী (বগুড়া)। সেরা ১০–এ আছে ঢাকার সাফওয়ান আহনাফ, আসফিয়া আয়রাত আসমানী, মুরতাহা ইকবাল বুশরা, সান্নিধ্য মজুমদার ও জয়িতা রহমান এবং নারায়ণগঞ্জের অনুভব ধর ও শৌনক সাহা।

‘খ’ বিভাগে প্রথম হয়ে ‘ত্বকী পদক’ পেয়েছে সৌভিক সাহা (নারায়ণগঞ্জ), দ্বিতীয় জান্নাতুল ওয়ারিশা (ঢাকা) ও তৃতীয় শাহরিয়ার রহমান হাবিব (নারায়ণগঞ্জ)। সেরা ১০–এ আছে ঢাকার তাসরিফ রহমান পরম, ফাতেমাতুজ জাহারা, অনিরুদ্ধ ধর, বগুড়ার প্রত্যাশা সরকার পিহু, নুবাইরা চৌধুরী অহনা, নারায়ণগঞ্জের মনয় পরশ সরকার ও আইশা তাজরিয়ান ইউশরা।

‘গ’ বিভাগে প্রথম হয়ে ‘ত্বকী পদক’ পেয়েছে হামীম উজ জামান (বগুড়া), দ্বিতীয় মৌমিতা ভৌমিক (বগুড়া) ও তৃতীয় ঈশান সাহা (বগুড়া)। সেরা ১০–এ আছে বগুড়ার জয়পাল, হুমায়রা জান্নাত নিহা, আতকিয়া আনজুম তাশা ও প্রত্যাশা সাহা দিঘা, রংপুরের আরণ্যক পাল প্রাচুর্য, প্রত্যয় পাল রাজ ও উৎস সাহা (নারায়ণগঞ্জ)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পোড়া ভোজ্যতেল সড়কে, মোটরসাইকেল পিছলে পড়ার হিড়িক
  • ম্যানহোল থেকে ভেসে আসছিল চিৎকার, ঢাকনা খুলে ‘নিখোঁজ’ নারীকে উদ্ধার
  • তিন দিনেই জিতল ময়মনসিংহ ও রংপুর, ৬ উইকেট আশরাফুল ও গালিবের
  • ময়মনসিংহে ইউনিয়ন পরিষদের কাছের ঝোপ থেকে গভীর রাতে ককটেল উদ্ধার
  • উচ্চশিক্ষিত ভারসাম্যহীন নারী তিন দিন পর ম্যানহোল থেকে উদ্ধার
  • একাদশ জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার ফলাফল প্রকাশ
  • ময়মনসিংহে দুষ্কৃতকারীদের আগুনে পুড়ল কাভার্ডভ্যান