মেঘনার মুক্তির দাবিতে প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিলেন ২৭ বিশিষ্ট নারী
Published: 20th, April 2025 GMT
মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে স্মারকলিপি দিয়েছেন আইনজীবী, অধিকারকর্মী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার ২৭ জন বিশিষ্ট নারী। আজ রোববার স্মারকলিপিটি ই-মেইলে পাঠানো হয়।
স্মারকলিপিতে মেঘনাকে যে প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাতে তাঁর মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন উল্লেখ করে তাঁর মুক্তি দাবি করা হয়েছে। বলা হয়, ‘মেঘনা আলমকে গত ৯ এপ্রিল পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ও ভাটারা থানার কর্মকর্তারা তাঁর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন ও আদালতের নির্দেশ অবমাননা করে আটক করেন।’
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ৯ এপ্রিল মেঘনা আলমকে তাঁর বাসা থেকে কোনো পরোয়ানা ছাড়াই আটক করা হয়। সে সময় মেঘনা আলমের ফেসবুক লাইভ থেকে বিষয়টি জেনে কয়েকজন নারী অধিকারকর্মী ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার প্রায় ৩০ জন কর্মকর্তা মেঘনা আলমকে আটকের জন্য এসেছেন। আটকের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর তাঁকে আদালতে তোলা হয়। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি, কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয় তাঁকে।
আরও পড়ুনশুধু সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেই সম্পর্ক ছিল, আদালতে মডেল মেঘনা১৭ এপ্রিল ২০২৫এ ঘটনায় সরকারের কাছ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেন এই নারীরা। স্মারকলিপিতে তাঁরা বলেন, এই ঘটনায় গুরুতর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। তাঁরা মেঘনা আলমের মুক্তি এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছেন।
স্মারকলিপিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন আইনজীবী ও অধিকারকর্মী ইশরাত জাহান, তাবাসসুম মেহেনাজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মীর্জা তাসলিমা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, নৃবিজ্ঞানী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসরিন সিরাজ, সংগীতশিল্পী ও গীতিকার ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, আলোকচিত্রী পদ্মিনী চাকমা, লেখক ও গবেষক পারসা সানজানা প্রমুখ।
আরও পড়ুনএবার চাঁদাবাজি–প্রতারণার মামলায় মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো১৭ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লেবাননে এক দশক ধরে বন্দী গাদ্দাফিপুত্রকে ১ কোটি ১০ লাখ ডলার জামিনে মুক্তির নির্দেশ
লেবাননের একজন বিচারক হানিবাল গাদ্দাফিকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন ও তাঁর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। হানিবাল লিবিয়ার নিহত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির ছোট ছেলে। প্রায় এক দশক ধরে লেবাননে বিচারপূর্ব আটকাবস্থায় আছেন তিনি।
লেবাননের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি গতকাল শুক্রবার খবর দিয়েছে, গাদ্দাফিকে জামিনে মুক্তির এ রায় মুসা আল-সদরের অপহরণ ও লিবিয়ায় নিখোঁজ হওয়ার মামলায় দেওয়া হয়েছে। আল-সদর লেবাননের প্রখ্যাত শিয়া নেতা ছিলেন।
গাদ্দাফির আইনজীবী লরাঁ ব্যায়ন এ রায়কে বিদ্রূপাত্মক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ব্যায়ন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘অন্যায়ভাবে কারাবন্দী করে রাখার মামলায় জামিনে মুক্তি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করব।’
এই আইনজীবী আরও বলেন, তাঁর মক্কেল ‘আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন’ এবং বড় অঙ্কের জামিনের অর্থ দিতে পারবেন না।
ব্যায়ন প্রশ্ন করেন, ‘আপনি চান, তিনি ১ কোটি ১০ লাখ ডলার কোথাও গিয়ে খুঁজে আনুক?’
লেবানন কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালে গাদ্দাফিপুত্রকে গ্রেপ্তার করে। তাদের অভিযোগ, তিনি ১৯৭৮ সালে লিবিয়ায় মুসা আল-সদরের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে তথ্য লুকিয়েছিলেন। এ মামলা আজও লেবাননের মানুষের কাছে ব্যাপক আগ্রহের বিষয় হয়ে আছে।
হানিবাল গাদ্দাফিকে জামিনে মুক্তির রায় মুসা আল-সদরের অপহরণ ও লিবিয়ায় নিখোঁজ হওয়ার মামলায় দেওয়া হয়েছে। মুসা আল-সদর লেবাননের প্রখ্যাত শিয়া নেতা ছিলেন।মুসা আল-সদর যখন লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির সঙ্গে দেখা করতে যান, তখন লেবাননের একজন আদর্শিক নেতা ছিলেন তিনি।
আল-সদর ছিলেন আমাল আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা, যা এখন লেবাননের শিয়া সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে জোটবদ্ধ রয়েছে। ওই সফরে নিখোঁজ হন তিনি। সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন একজন সহকারী ও একজন সাংবাদিক। তবে সফরের পর থেকে তাঁদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আল-সদরের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বহু বছর ধরে নানা অনুমান ও অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের উত্তেজনা এ ঘটনা থেকে শুরু। গাদ্দাফি ২০১১ সালে বিপ্লবের সময় উৎখাত ও নিহত হন।
লেবাননের পার্লামেন্টের স্পিকার নাবিহ বেরি আল-সদরের পর আমাল আন্দোলনের প্রধান হয়েছেন। লিবিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা আল-সদরের নিখোঁজ হওয়া বিষয়ে সহযোগিতা করছে না। তবে লিবিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
অন্যায়ভাবে কারাবন্দী করে রাখার মামলায় জামিনে মুক্তি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করব। —লঁরা ব্যায়ন, হানিবাল গাদ্দাফির আইনজীবীঅনেকের মতে, আল-সদরের কী হয়েছে, তা জানতে হানিবাল গাদ্দাফিকে ২০১৫ সাল থেকে লেবাননে বিনা বিচারে আটক করে রাখা হয়েছে।
হানিবালের আইনজীবী বলেছেন, তাঁর মক্কেল এখন ৪৯ বছর বয়সী। এর মানে, আল-সদরের নিখোঁজ হওয়ার সময় তিনি মাত্র প্রায় দুই বছর বয়সী ছিলেন।
গতকালের ওই রায়ের পর আল-সদরের পরিবার একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে হানিবালের মুক্তির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়। তবে বলেছে, তারা এ সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করবে না।
আরও পড়ুনলেবাননের কারাগারে কেন অনশনে গাদ্দাফির ছোট ছেলে০৯ জুন ২০২৩বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হানিবাল গাদ্দাফির গ্রেপ্তার বা মুক্তি আমাদের লক্ষ্য নয়। মূল বিষয় হলো, ইমাম আল-সদরের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার নিষ্পত্তি হওয়া।’
গত আগস্ট মাসে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ লেবাননকে হানিবাল গাদ্দাফিকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানায়। মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে, তাঁকে ভুলবশত আটক করা হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য লুকানোর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।গত আগস্ট মাসে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ লেবাননকে হানিবাল গাদ্দাফিকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানায়। মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে, তাঁকে ভুলবশত আটক করা হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য লুকানোর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
গত সপ্তাহে হানিবালের স্বাস্থ্যের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, তিনি মানসিক চাপে ভুগছেন এবং পেটব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
আরও পড়ুনগাদ্দাফির ছেলে 'অপহরণের পর মুক্ত'১২ ডিসেম্বর ২০১৫হানিবাল গাদ্দাফিকে মুক্তি দিতে লিবিয়ার কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালে লেবাননের প্রতি আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানায়। কারণ হিসেবে বিচারবহির্ভূতভাবে কারাবন্দী থাকার প্রতিবাদে অনশন করায় তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
লিবিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেল আল-সাদিক আল-সুর লেবাননের প্রসিকিউটর জেনারেল ঘাসান উয়েদাতকে ওই অনুরোধ পাঠিয়েছিলেন। আল-সুর অনুরোধে উল্লেখ করেন, হানিবালকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে লেবাননের সহযোগিতা আল-সদরের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সত্য উদ্ঘাটনে সাহায্য করতে পারে।
আরও পড়ুনগাদ্দাফি হত্যার এক দশক, ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন লিবিয়াবাসীর১৯ অক্টোবর ২০২১