সিলেটে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ী খুন
Published: 21st, April 2025 GMT
সিলেটের বিশ্বনাথে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিপেশ তালুকদার (৪২) নামে এক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী (ফেরিওয়ালা) নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রোববার রাত ৮টার দিকে উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের পীরের বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে রাত ১১টায় লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্যে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছে পুলিশ। নিহত নিপেশ তালুকদার সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার সুনামপুর গ্রামের সানন্দ তালুকদারের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পরিবার নিয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানার তেমুখিস্থ খালেদ মিয়ার বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় ভাড়ায় বসবাস করে আসছিলেন।
প্রাথমকিভাবে ধারণা করা হচ্ছে ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে সর্বস্ব লুটে নিয়েছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত নিপেশ তালুকদারকে স্থানীয়রা বাবু নামে চিনতেন। তিনি (নিপেশ) প্রতিদিন বাইসাইকেলে করে বাজারে বাজারে পান, সুপারি, সিগারেট, কয়েল ইত্যাদি ফেরি করে বিক্রি করতেন। রোববারও সন্ধ্যায় একইভাবে বাইসাইকেল দিয়ে মালামাল বিক্রি শেষে পীরের বাজারের পশ্চিমে যাওয়া মাত্রই অজ্ঞাতনামা ছিনতাইকারীরা তার বুকের বাম পাশে ছুরিকাঘাত করে মালপত্র ও টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় রক্তাক্ত অবস্থায় পীরের বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুছ আলীর চায়ের দোকানে দৌড়ে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচানোর আকুতি জানান। কিন্তু লোকজন তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার আগেই তিনি মারা যান।
খবর পেয়ে একদল পুলিশসহ রাত ১১টার দিকে সিলেটের ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান ও বিশ্বনাথ থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে তারা লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনামুল হক চৌধুরী হত্যার সত্যতা স্বীকার করে সমকালকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ছিনতাইকারীরাই তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয় কুমিল্লা, বেশি হয় পাঙাশ, তেলাপিয়া
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার রায়পুর গ্রামটির অবস্থান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘেঁষে। দেশের ব্যস্ততম এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচলের সময় যত দূর চোখ যায়, শুধু মাছ চাষের দৃশ্য। ওই গ্রামে এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ হয় না।
আরেক উপজেলা চান্দিনা। সেটার প্রত্যন্ত একটি গ্রাম পিহর। সেখানে গ্রামীণ সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় চারদিকে চোখে পড়ে শুধু মাছের খামার। জেলার বিভিন্ন গ্রামে গেলে বোঝা যায়, মাছ উৎপাদনে কতটা এগিয়ে গেছেন এখানকার মানুষ। সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে অনেকেই জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছেন।
মৎস্য অধিদপ্তরের ২০২৩–২৪ সালের হিসাবে, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে মাছ উৎপাদনে কুমিল্লা দ্বিতীয়। এই জেলা থেকে চাহিদার দ্বিগুণের বেশি মাছ উৎপাদিত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। শুধু পুকুর আর দিঘির বদ্ধ জলাশয়ই নয়, প্লাবনভূমিতে মাছ চাষে কুমিল্লা দেশের মডেল। যে জমি বর্ষায় ডুবে যায় এবং শুকনা মৌসুমে আবার চাষাবাদ বা অন্য কাজে ব্যবহৃত হয়, সেটাই প্লাবনভূমি।
মাছ উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, প্রাকৃতিকভাবেই কুমিল্লার মাটি ও পানি মাছ চাষের জন্য উপযোগী।চাহিদার দ্বিগুণের বেশি মাছজেলা মৎস্য কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অশোক কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, মাছ উৎপাদনে প্রথম অবস্থানে আছে ময়মনসিংহ জেলা। সেখানে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। মাছ উৎপাদনে যেকোনো গবেষণা সেখানে আগে প্রয়োগ হয়, এ জন্য ময়মনসিংহ জেলার উৎপাদন কুমিল্লার চেয়ে কিছুটা বেশি। বর্তমানে সেখানে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে বছরে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কুমিল্লায় হচ্ছে ৩ লাখ ১৫ হাজার টন মাছ। মাছ উৎপাদনে দেশের তৃতীয় জেলা যশোর, তাদের উৎপাদন ২ লাখ ৪৮ হাজার টন। চতুর্থ অবস্থানে থাকা ভোলায় ১ লাখ ৫৭ হাজার টন এবং পঞ্চম অবস্থানে থাকা সাতক্ষীরায় ১ লাখ ৫৬ হাজার টন মাছ উৎপাদিত হচ্ছে।
মাছ উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, প্রাকৃতিকভাবেই কুমিল্লার মাটি ও পানি মাছ চাষের জন্য উপযোগী।
১৯৮৬ সালের দিকে উপজেলার ধানুয়াখলা গ্রামের আদর্শ মৎস্য প্রকল্প নাম দিয়ে কয়েকজন অলস জমিগুলোতে মাছ চাষের উদ্যোগ নেন।মাছ চাষে কুমিল্লা মডেলদেশে মাছ চাষে একটি পদ্ধতি হচ্ছে প্লাবনভূমিতে মাছ চাষ। আশির দশকে কুমিল্লা থেকে শুরু হওয়া এই পদ্ধতি এখন ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের শুরুটা হয়েছিল কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। বর্তমানে জেলার যেসব উপজেলা তুলনামূলক নিচু, সেগুলোর প্লাবনভূমিতে ব্যাপক হারে মাছ চাষ হচ্ছে। একসময় অপেক্ষাকৃত নিচু জমি পড়ে থাকত। এখন এমন জমিতে বছরের সাত থেকে আট মাস থাকে মাছের নাচানাচি।
জেলার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ও ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের ফসলি জমিগুলোর অধিকাংশই নিচু। ফলে সেখানে বছরে একটি ফসল হয়। বর্ষাসহ বছরের সাত থেকে আট মাস এসব জমি পড়ে থাকত পানির নিচে। ১৯৮৬ সালের দিকে উপজেলার ধানুয়াখলা গ্রামের আদর্শ মৎস্য প্রকল্প নাম দিয়ে কয়েকজন অলস জমিগুলোতে মাছ চাষের উদ্যোগ নেন।
এই কাজে অগ্রভাগে থাকা সুনীল কুমার রায়সহ কয়েকজন পানিতে ডুবে থাকা জমিগুলোকে কাজে লাগান। ৩০০ বিঘা জমিতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন তাঁরা, এতেই আসে সাফল্য। মাছ চাষের লাভের একটি অংশ জমির মালিকদেরও দেওয়া হয়। শুরু থেকেই সাফল্য পেয়েছে মাছ চাষের এই পদ্ধতি।
জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, এখানে উৎপাদিত মাছের মধ্যে প্রায় ৫৫ শতাংশই পাঙাশ আর তেলাপিয়া। বাকি মাছের মধ্যে আছে রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার কার্প।এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অশোক কুমার দাস বলেন, প্লাবনভূমিতে মাছ চাষে কুমিল্লা দেশের মডেল। প্রথমে দাউদকান্দি থেকে শুরু হলেও পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের উপজেলা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বর্তমানে দাউদকান্দি ছাড়া জেলার হোমনা, মেঘনা, মুরাদনগর, তিতাস, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট ও চৌদ্দগ্রামের বেশ কিছু নিচু এলাকায় এই পদ্ধতির মাছ চাষ জনপ্রিয়।
জাতীয় পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত কুমিল্লার কৃষি ও পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকতের বাড়ি দাউদকান্দির আদমপুর গ্রামে। তিনি দীর্ঘদিন প্লাবনভূমিতে মাছ চাষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, একসময় বছরের অধিকাংশ সময় অলস পড়ে থাকা জমিগুলো থেকে এখন মৌসুমে বিক্রি হচ্ছে হাজার কোটি টাকার মাছ।
বেশি হয় পাঙাশ ও তেলাপিয়াজেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, এখানে উৎপাদিত মাছের মধ্যে প্রায় ৫৫ শতাংশই পাঙাশ আর তেলাপিয়া। বাকি মাছের মধ্যে আছে রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার কার্প।
কেন পাঙাশ আর তেলাপিয়া মাছই বেশি চাষ হয়, তার একটা ব্যাখ্যা পাওয়া গেল মাছচাষি জহির রায়হানের কাছে। মনোহরগঞ্জ উপজেলা সদরের হাটিরপাড় গ্রামের এই বাসিন্দা প্রায় ২০ বছর ধরে মাছ চাষ করছেন। বর্তমানে তাঁর ১৫ একরের বেশি পরিমাণ জলাশয়ে বছরে অন্তত ১০০ টন মাছ উৎপাদিত হয়। তিনি বলেন, কুমিল্লা অঞ্চলের মানুষ এই দুই ধরনের মাছ বেশি খায়। এ ছাড়া এই জাতের মাছ চাষের প্রক্রিয়া সহজ। পাঙাশ মাছ ৬ থেকে ৭ মাসে আর তেলাপিয়া ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে বিক্রি করা যায়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, তাঁরা মাছচাষিদের প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেন। প্রতিবছর জলাশয়ে ৬ থেকে ৭ টন মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য জেলার ৬টি উপজেলায় অভয়াশ্রম সৃষ্টি করা হয়েছে। বছরে অন্তত দেড় হাজার চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।উদ্যোগে এসেছে সাফল্যকুমিল্লা জেলায় মৎস্য খাতে অবদানের জন্য এখন পর্যন্ত কয়েকজন পেয়েছেন জাতীয় মৎস্য (স্বর্ণ) পদক। সর্বশেষ ২০২৫ সালে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে দাউদকান্দি উপজেলার সিংগুলা গ্রামের মোহাম্মদ রহমত আলীর নাম।
রহমত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৯৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর তিনি কিছুদিন মাছ চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ২০০০ সালে পাশের রায়পুরে ৩০ শতাংশ পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। পুঁজি ছিল মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রথম বছর ভালো লাভ হওয়ায় তাঁর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। পরের বছর ৩ একরের একটি পুকুর ইজারা নিয়ে রহমত ফিশারিজ নামে একটি মৎস্য খামার গড়ে তোলেন। বাড়তে থাকে মাছ চাষের পুকুর ও প্লাবনভূমির পরিমাণ। বর্তমানে তিনি বছরে অন্তত আড়াই হাজার টন মাছ উৎপাদন করেন। এই খাতে তাঁর বিনিয়োগ সাত কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তাঁর এখানে কাজ করেন ৬০ জন শ্রমিক।
মাছ উৎপাদনে কুমিল্লার অবস্থান ধরে রাখার পেছনে জেলা মৎস্য বিভাগের বিভিন্ন উদ্যোগ আছে। এ বিষয়ে সদ্য বদলি হওয়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, তাঁরা মাছচাষিদের প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেন। প্রতিবছর জলাশয়ে ৬ থেকে ৭ টন মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য জেলার ৬টি উপজেলায় অভয়াশ্রম সৃষ্টি করা হয়েছে। বছরে অন্তত দেড় হাজার চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।