সিলেটের বিশ্বনাথে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিপেশ তালুকদার (৪২) নামে এক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী (ফেরিওয়ালা) নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রোববার রাত ৮টার দিকে উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের পীরের বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে রাত ১১টায় লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্যে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছে পুলিশ। নিহত নিপেশ তালুকদার সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার সুনামপুর গ্রামের সানন্দ তালুকদারের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পরিবার নিয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানার তেমুখিস্থ খালেদ মিয়ার বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় ভাড়ায় বসবাস করে আসছিলেন।

প্রাথমকিভাবে ধারণা করা হচ্ছে ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে সর্বস্ব লুটে নিয়েছে। 

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত নিপেশ তালুকদারকে স্থানীয়রা বাবু নামে চিনতেন। তিনি (নিপেশ) প্রতিদিন বাইসাইকেলে করে বাজারে বাজারে পান, সুপারি, সিগারেট, কয়েল ইত্যাদি ফেরি করে বিক্রি করতেন। রোববারও সন্ধ্যায় একইভাবে বাইসাইকেল দিয়ে মালামাল বিক্রি শেষে পীরের বাজারের পশ্চিমে যাওয়া মাত্রই অজ্ঞাতনামা ছিনতাইকারীরা তার বুকের বাম পাশে ছুরিকাঘাত করে মালপত্র ও টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় রক্তাক্ত অবস্থায় পীরের বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুছ আলীর চায়ের দোকানে দৌড়ে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচানোর আকুতি জানান। কিন্তু লোকজন তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার আগেই তিনি মারা যান।

খবর পেয়ে একদল পুলিশসহ রাত ১১টার দিকে সিলেটের ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান ও বিশ্বনাথ থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে তারা লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনামুল হক চৌধুরী হত্যার সত্যতা স্বীকার করে সমকালকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ছিনতাইকারীরাই তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাবিতে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৭৫ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন

দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৭৫ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন এবং বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সমিতির ‘গ্র্যান্ড রিইউনিয়ন’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে বর্ণাঢ্য র‌্যালির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান।

দিনভর কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, গুণীজন সংবর্ধনা, কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।

সকালে টিএসসি মিলনায়তনে আলোচনা সভায় রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান।

ভিসি বলেন, ‘দলীয় রাজনীতি আমাদের নানাভাবে বিভাজিত করে ফেলেছে। আমরা শিক্ষা ও গবেষণাকে সব রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে চাই। আমরা সমাজের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলতে চাই। ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সম্পর্ক আরও জোরদার ও অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে চাই।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আতাউর রহমান বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক ছাত্র সমিতির সভাপতি শবনম শেহনাজ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ৭৫ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল বাছির।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বক্তব্য দেওয়ার সময় তাঁর প্রয়াত মা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও দেশের প্রথম নারী জাতীয় অধ্যাপক (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং পরে ওই বিভাগের শিক্ষক ছিলেন) অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ইতিহাসের গভীর বোধ ছাড়া কোনো সংস্কারক প্রজ্ঞাবান হতে পারেন না। কোনো বিচারক তাঁর সভ্যতার শিকড় না বুঝে আইনের যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারেন না।’

তিনি বলেন, ‘আইন হলো কোনো জাতির নৈতিক ইতিহাস, যা ন্যায়ের ভাষায় লেখা হয়; আর ইতিহাস হলো কেন সমাজকে আরও ভালো হতে হবে, তার অনুসন্ধান।’

বিচার বিভাগীয় সংস্কার প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘বিচার বিভাগ কেবল ঐতিহ্যের স্বস্তিতে টিকে থাকতে পারে না। এটিকে সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হতে হয়; এ জন্য তার সংস্কার করতে হয়।’

প্রধান বিচারপতি জানান, গত ১৫ মাসে বিচারব্যবস্থার স্বায়ত্তশাসন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও জনগণের বিচারপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিভাগের কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিভাগের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৭৫ জন শিক্ষার্থীকে প্রাক্তন ছাত্র সমিতির পক্ষ থেকে বিশেষ বৃত্তিসহ বিভাগের মোট ৮৪ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়।

এ ছাড়া সম্প্রতি পিএইচডি ও এমফিল ডিগ্রি অর্জন করা প্রাক্তন ছাত্র সমিতির ১১ জন সদস্য, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এবং সমমান পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলের জন্য প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সদস্যদের ৫৮ জন সন্তান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী ১৩ জন শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষে ছিল দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বেলা সাড়ে তিনটায় প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সমিতির দ্বিবার্ষিক সভায় শবনম শেহনাজ চৌধুরী দীপাকে সভাপতি ও মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০২৫ ‌ও ২০২৬ সালের জন্য ৩৫ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ