ছেলেবেলায় সমবয়সী এক মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। প্রেমিকাকে বলেছিলেন, ‘আমাকে যদি বিয়ে না করো, তাহলে এ জীবন ঈশ্বরের সাধনায় উৎসর্গ করে দেব।’

কৈশোরে সেই প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ব্যথা বুকে নিয়েই তিনি এতটা পথ একলা পাড়ি দিয়েছেন। ধর্ম সাধনা করেছেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন রোমান ক্যাথলিক চার্চের পোপ হিসেবে।

পোপ ফ্রান্সিসের আদি নাম হোর্হে মারিও বেরগোগলিও। ফ্রান্সিস নামটি বেছে নেন পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর। আর তাঁর স্বপ্নের সেই প্রেমিকার নাম এমিলিয়া দামন্তে। ২০১৩ সালে দুজনেরই বয়স যখন ৭৬ বছর, তখন সেই এমিলিয়াই প্রকাশ করেন তাঁদের গোপন প্রেমের খবর।

এমিলিয়া বলেন, ‘তখন আমরা ১২ বছরে পা দিয়েছি। থাকতাম আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স এইরেসের ফ্লোরেস উপশহরে। বেরগোগলিও একদিন একটা চিঠি দিল। আমাকে বিয়ে করতে না পারলে, সংসারত্যাগী  হবে, ধর্মযাজক হয়ে যাবে বলেও জানিয়ে দিল।’

ফ্রান্সিসের ছোট বোন মারিয়া এলেনা বেরগোগলিও সে সময় দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, ‘আমার ভাই মৃদুভাষী। পৃথিবীর ১২০ কোটি রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টানের নেতা হওয়ার কোনো বাসনাই তাঁর ছিল না। কখনো পোপ হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন না। আজ তিনি সারা বিশ্বের ক্যাথলিকদের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। এখন তাঁকে সীমাহীন নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে হবে। আমি নিজেও চাইনি, আমার ভাই পোপ হন। কারণ, এতে তাঁর ঘাড়ে অনেক দায়িত্ব বর্তাবে। তিনি আমাদের থেকে আরও দূরে চলে যাবেন।’

তবে পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর ভাইকে নিয়ে গর্বিতই ছিলেন মারিয়া। তিনি বলেন, ‘এ এক ঐতিহাসিক ঘটনা। ইউরোপের বাইরে আমার ভাই-ই প্রথম পোপ নির্বাচিত হয়েছেন। লাতিন আমেরিকা ও আমাদের জন্মভূমি আর্জেন্টিনা থেকে তিনিই প্রথম নির্বাচিত পোপ। ঈশ্বরের সদয় কৃপা ছাড়া এমন ভাই পাওয়া যায় না।’

২০১৩ সালে বেরগোগলি পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর এমিলিয়া বলেন, ‘আজ আর আমার লুকানোর কিছু নেই। ওটা ছিল অবুঝ প্রেম। আমাদের সম্পর্ক ছিল পবিত্র। তবে আমার মা–বাবার বাধার কারণে সেই প্রেম বিকশিত হয়নি। চিঠিটিতে একটি ঘরের ছবি এঁকেছিল সে। ছাদ লাল রঙের। ওর স্বপ্ন ছিল, এমন একটি ঘর কিনবে, বিয়ের পর আমাকে নিয়ে সেখানে থাকবে। চিঠি পড়ল বাবার হাতে। তিনি তো রেগে আগুন। আমাকে আচ্ছামতো পেটালেন বাবা। এরপর থেকে ওকে আর কখনো দেখিনি। মা–বাবা আমাকে দূরে দূরে সরিয়ে রাখতেন। ওর সঙ্গে দেখা হোক, তা চাইতেন না। একপর্যায়ে আমিও চাইতাম, ও যেন আমার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যায়। তা–ই হয়েছিল, ধীরে ধীরে দূরে সরে গিয়েছিল সে।’ 

সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ ও দ্য গার্ডিয়ান

আরও পড়ুনপোপ ফ্রান্সিস সম্পর্কে কিছু অজানা চমকপ্রদ তথ্য২০ মিনিট আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত হওয় র য় র পর এম ল য়

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ