বৈশাখের রোদঝলমলে সকাল। শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌর শহরের ভোগাই নদ সেতুর পূর্ব পাশে রাস্তার ধারে ক্রমেই বাড়ছে মানুষের আনাগোনা। এই কোলাহলের মাঝে একটি কড়ইগাছের ছায়ায় কাঠের টুলে বসে গ্রাহকের জন্য অপেক্ষা করছেন পণেশ চন্দ্র শীল (৬৭)। প্রায় চার দশক এই গাছের নিচে বসে তিনি চুল কাটার কাজ করছেন।

আধুনিক সেলুনের চাকচিক্য কিংবা বিলাসিতা—কোনোটিরই উপস্থিতি নেই পণেশের সেলুনে। নালিতাবাড়ী বাজারে খোলা আকাশের নিচে গড়ে তোলা এই সেলুনের সবচেয়ে প্রাচীন সাক্ষী কেবল কড়ইগাছটি। পণেশের কাছে নিম্ন আয়ের মানুষ কম খরচে চুল কাটাতে পারছেন।

বাবা পরেশ চন্দ্র শীল ও চাচাদের দেখাদেখি পণেশ ১২-১৩ বছর বয়সে হাতে কাঁচি ও ক্ষুর তুলে নেন। সেই থেকে শুরু। এরপর এই পেশায় কেটে গেছে তাঁর ৫৪ বছর। এর মধ্যে ১৯৮৬ সাল থেকে তিনি এই কড়ইগাছের নিচে বসে কাজ করছেন। এক গাছের নিচে ৩৯ বছর কাটিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে পণেশ চন্দ্র বলেন, আগে তো এখনকার মতো এত সেলুন ছিল না। সবাই খোলা জায়গায় বসে চুল কাটাত। সময়ের স্রোতে অনেকেই পেশা বদলেছেন। তিনি খোলা আকাশের নিচে এই গাছের ছায়ায় রয়ে গেছেন।

বৃষ্টির দিনে মাথার ওপর পলিথিন ঝুলিয়ে কিংবা ছাতা মাথায় দিয়ে কাজ চালিয়ে যান পণেশ। ঝড়-বৃষ্টির তীব্রতা বাড়লে কাঁচি-ক্ষুর ব্যাগে ভরে আশ্রয় নেন পরিচিত কারও ঘরের বারান্দায়। দুপুর হলে পুরোনো বাইসাইকেলে চেপে বাড়ি যান, খেয়ে আবার বসে পড়েন কড়ইগাছের নিচে। এই নিয়মেই তাঁর সকাল থেকে সন্ধ্যা কাটে। প্রতিদিন তাঁর ২০০-৩০০ টাকা আয় হয়।

নালিতাবাড়ী শহরের তারাগঞ্জ উত্তর বাজারের কাচারিপাড়া মহল্লায় পণেশ চন্দ্র শীলের সংসার। চার সন্তানের মধ্যে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে সুজন শীল (৩৮) ও লোকনাথ শীল (৩২) সামান্য লেখাপড়া করলেও বাবার পেশাকেই বেছে নিয়েছেন। তবে তাঁরা বাবার মতো ফুটপাতে নয়; শহরে নিজেদের সেলুন খুলে কাজ করেন। তাঁদের রোজগারেই এখন কোনোমতে চলে সংসার।

জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে জীবন নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই পণেশের। তিনি বলেন, জীবন তো প্রায় শেষ হয়ে এল। এখন আর তেমন কোনো দুশ্চিন্তা করেন না। নিজের কাজ করেন, সেটাই শান্তি।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের বেতন বাড়াল বিসিবি

জাতীয় দলের নারী ক্রিকেটারদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আজ মিরপুরে বিসিবি পরিচালকদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এত দিন ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকা মেয়েরা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মাসিক বেতন পেতেন। তাঁদের বেতন ৪০ হাজার টাকা বাড়ানো হচ্ছে। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে থাকা ক্রিকেটাররা পেতেন ১ লাখ টাকা করে বেতন। তাঁরা এখন থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বেতন পাবেন।

‘সি’ ক্যাটাগরিতে থাকা ক্রিকেটারদের বেতন ৭০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫ হাজার টাকা করা হয়েছে আর ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ৬০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া জাতীয় দলের অধিনায়কদের জন্য ৩০ হাজার ও সহ-অধিনায়কদের জন্য ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া নারী ক্রিকেটারদের নতুন চুক্তিতে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে আছেন তিন ক্রিকেটার—নিগার সুলতানা, নাহিদা আক্তার ও শারমিন আক্তার। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে আছেন ফারাজনা হক, রিতু মনি, ফাহিমা খাতুন, মারুফা আক্তার, রাবেয়া খান ও সোবহানা মোস্তারি। ‘সি’ ক্যাটাগরিতে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে আছেন স্বর্ণা আক্তার।

আরও পড়ুনবিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ না জিতলেও ৩ কোটি টাকা পাবেন নিগাররা৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘ডি’ ক্যাটাগরিতে আছেন সুমাইয়া আক্তারর, ফারিহা ইসলাম, রুবাইয়া হায়দার, সানজিদা আক্তার, নিশিতা আক্তার। এই চুক্তির বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের কেউ জাতীয় দলে এলে মাসে ৬০ হাজার টাকা বেতন পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ