কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে আনুষ্ঠানিকভাবে সি–ট্রাক সার্ভিস চালু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে সি–ট্রাক সার্ভিসের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। এরপর সি–ট্রাকে করে নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে নৌপরিবহন উপদেষ্টা প্রায় আট কিলোমিটার সাগর পাড়ি দিয়ে মহেশখালী যান। ৪৫ মিনিট পর সি–ট্রাক সার্ভিসটি মহেশখালী জেটিতে পৌঁছায়। এ সময় নৌপরিবহন উপদেষ্টার সঙ্গে সি–ট্রাকে ছিলেন মহেশখালীর সন্তান লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।

সি–ট্রাক মহেশখালী পৌঁছানোর পর বিআইডব্লিউটিএ জেটিতে ইউএনও মো.

হেদায়েত উল্যাহর পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নৌ উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। এ ছাড়া অতিথি ছিলেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, বিআইডব্লিউটিসি চেয়ারম্যান মো. সলিমুল্লাহ, বিআইডব্লিউটিএ সদস্য (পরিকল্পনা ও পরিচালনা) মো. জিয়াউল ইসলাম, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, পুলিশ সুপার মো. সাইফ উদ্দিন শাহীন, বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (বন্দর) এ কে এম আরিফ উদ্দিন, বিআইডব্লিউটিএ প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) রকিবুল ইসলাম তালুকদার ও বিআইডব্লিউটিএ কক্সবাজার (কস্তুরাঘাট) নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ৪০ থেকে ৫০ বছর ধরে রাজনৈতিক মাফিয়া চক্রের হাতে দ্বীপের বাসিন্দারা জিম্মি ছিলেন। ওই মাফিয়া চক্রের কারণে এই সেবা এত দিন চালু হয়নি। এখন থেকে দ্বীপের বাসিন্দারা নিরাপদে সি–ট্রাকে করে যাতায়াত করতে পারবেন। রাতেও যাতে দ্বীপের বাসিন্দারা সি–ট্রাকে করে যাতায়াত করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হবে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, দ্বীপের বাসিন্দারা যাতে কক্সবাজার ৬ নম্বর জেটিঘাট দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন, তার জন্য ড্রেজিং করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মামলার কারণে ড্রেজিং কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত ৬ নম্বর ঘাট ড্রেজিং করা হবে, যাতে দ্বীপের বাসিন্দারা সরাসরি কক্সবাজার ৬ নম্বর ঘাট দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন।

ভাড়া কমানোর বিষয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, প্রথমে সি–ট্রাকের ন্যূনতম ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু দ্বীপের বাসিন্দাদের সুবিধার্থে সর্বনিম্ন ভাড়া নুনিয়ারছড়া থেকে মহেশখালী ৩০ টাকা ও কক্সবাজার ৬ নম্বর ঘাট থেকে মহেশখালী পর্যন্ত ভাড়া ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্বীপের মানুষ কম খরচে এই নৌরুটে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবেন। এখন আপাতত একটি সি–ট্রাক যাতায়াত করবে। সামনে এই নৌরুটে আরও একটি সি–ট্রাক দেওয়া হবে।

কক্সবাজার–মহেশখালী নৌরুটে এখন থেকে চলাচল করবে ২৫০ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার এই সি ট্রাক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন উপদ ষ ট ত করত

এছাড়াও পড়ুন:

দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত

নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।

সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাট

আজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।

জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।

গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • ডুবচরে আটকা পড়া ‘বোগদাদিয়া ৭’ এর যাত্রীরা নিরাপদে
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ