কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে আনুষ্ঠানিকভাবে সি-ট্রাক চালু
Published: 24th, April 2025 GMT
কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে আনুষ্ঠানিকভাবে সি–ট্রাক সার্ভিস চালু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে সি–ট্রাক সার্ভিসের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। এরপর সি–ট্রাকে করে নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে নৌপরিবহন উপদেষ্টা প্রায় আট কিলোমিটার সাগর পাড়ি দিয়ে মহেশখালী যান। ৪৫ মিনিট পর সি–ট্রাক সার্ভিসটি মহেশখালী জেটিতে পৌঁছায়। এ সময় নৌপরিবহন উপদেষ্টার সঙ্গে সি–ট্রাকে ছিলেন মহেশখালীর সন্তান লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।
সি–ট্রাক মহেশখালী পৌঁছানোর পর বিআইডব্লিউটিএ জেটিতে ইউএনও মো.
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ৪০ থেকে ৫০ বছর ধরে রাজনৈতিক মাফিয়া চক্রের হাতে দ্বীপের বাসিন্দারা জিম্মি ছিলেন। ওই মাফিয়া চক্রের কারণে এই সেবা এত দিন চালু হয়নি। এখন থেকে দ্বীপের বাসিন্দারা নিরাপদে সি–ট্রাকে করে যাতায়াত করতে পারবেন। রাতেও যাতে দ্বীপের বাসিন্দারা সি–ট্রাকে করে যাতায়াত করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, দ্বীপের বাসিন্দারা যাতে কক্সবাজার ৬ নম্বর জেটিঘাট দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন, তার জন্য ড্রেজিং করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মামলার কারণে ড্রেজিং কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত ৬ নম্বর ঘাট ড্রেজিং করা হবে, যাতে দ্বীপের বাসিন্দারা সরাসরি কক্সবাজার ৬ নম্বর ঘাট দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন।
ভাড়া কমানোর বিষয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, প্রথমে সি–ট্রাকের ন্যূনতম ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু দ্বীপের বাসিন্দাদের সুবিধার্থে সর্বনিম্ন ভাড়া নুনিয়ারছড়া থেকে মহেশখালী ৩০ টাকা ও কক্সবাজার ৬ নম্বর ঘাট থেকে মহেশখালী পর্যন্ত ভাড়া ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্বীপের মানুষ কম খরচে এই নৌরুটে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবেন। এখন আপাতত একটি সি–ট্রাক যাতায়াত করবে। সামনে এই নৌরুটে আরও একটি সি–ট্রাক দেওয়া হবে।
কক্সবাজার–মহেশখালী নৌরুটে এখন থেকে চলাচল করবে ২৫০ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার এই সি ট্রাকউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিতীয় ট্রিপেই মেঘনায় ডুবল বালুবাহী বাল্কহেড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে সেতুর পিলারে ধাক্কা খেয়ে মেঘনা নদীতে তলিয়ে গেছে একটি বালুবাহী বাল্কহেড। গতকাল শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দুর্ঘটনার শিকার হয় এমভি রিফাত-২ নামের বাল্কহেডটি। ঘটনার পরপরই শ্রমিকরা তীরে উঠে যান। বাল্কহেডের এক অংশীদার জানিয়েছেন, এটি তাদের নৌযানের দ্বিতীয় যাত্রা (ট্রিপ) ছিল।
এ দুর্ঘটনার বিষয়ে কয়েকটি বর্ণনা পাওয়া গেছে। কেউ বলছেন, অন্য একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এমভি রিফাত-২ শুরুতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুতে ধাক্কা খায়। পরে দুটি রেলসেতু পার হয়ে মাঝখানে ভেঙে ডুবে যায়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকরা জানিয়েছেন, বিকট শব্দ পেয়ে তারা সড়ক সেতুতে বাল্কহেডটি ধাক্কা খেতে দেখেন।
দুর্ঘটনার সময় আশুগঞ্জ প্রান্তে নোঙর করা এমভি মেঘনা-২৫ জাহাজে ছিলেন শ্রমিক মো. মোজাম্মেল হাওলাদার। তিনি বলেন, ভোরে সেতুর পিলারে ধাক্কা লেগে বাল্কহেডটি ডুবতে ডুবতে তাদের জাহাজের দিকে আসছিল। এ সময় জাহাজের মাস্টার জরুরি ঘণ্টা বাজিয়ে সবাইকে জাগিয়ে তোলেন। তারা দেখতে পান, বাল্কহেডটি তাদের জাহাজের পেছনে নদীতে ডুবে যাচ্ছে। এ সময় সেখান থেকে কয়েকজন শ্রমিক তাদের জাহাজে উঠে প্রাণ বাঁচান। এর আগে আরও তিন-চারজন শ্রমিককে ওই বাল্কহেড থেকে রেলসেতুর পিলারে উঠতে দেখেন। পরে অন্য নৌযান তাদের উদ্ধার করে।
একই জাহাজের মাস্টার মো. নুরুন্নবী জানান, ফজরের নামাজ পড়তে অজু করার সময় বিকট শব্দ পান। তখন তিনি বাল্কহেডটিকে সেতুর পিলারে
ধাক্কা খেয়ে প্রায় ডুবতে ডুবতে তাদের জাহাজের দিকে আসতে দেখেন। তখন জরুরি ভিত্তিতে সবার ঘুম ভাঙান।
আশুগঞ্জ প্রান্ত থেকেই দুর্ঘটনা দেখেন সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাকের চালক স্বপন মিয়া। তাঁর ভাষ্য, পাথরবোঝাই একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় ওই বাল্কহেডটি চলতে থাকে। সেটি সেতুর নিচে দিয়ে যাওয়ার সময় পুরোনো রেলসেতুর ৩ নম্বর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা খায়। পরে সেটির মাঝখানে ফাটল দেখা দেয়। এ সময় বাল্কহেডের চালকসহ তিনজনকে নতুন রেলসেতুর পিলারে উঠতে দেখেন।
ভৈরব নৌ থানার ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা কাউকে পাইনি। বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের খবর দেওয়ার পর পুলিশ নিয়ে তারা সেখানে গেছেন।
বাল্কহেডের এক অংশীদার শনিবার সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, অপর এক আত্মীয়কে নিয়ে কিছুদিন আগেই ১ কোটি ৫ লাখ টাকায় সেটি কিনেছেন। এটি ছিল তাদের দ্বিতীয় যাত্রা (ট্রিপ)। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল বাজার থেকে সিলেকশন বালু নিয়ে যাচ্ছিল সেটি। ডুবে যাওয়ার পর থেকে চালক বা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তাই বালুর গন্তব্য জানাতে পারছেন না। অপর অংশীদারের ভাষ্য, কেনার পর একজনের কাছে বাল্কহেডটি ভাড়া দিয়েছেন তারা। তাই কোথায় যাচ্ছিল, তা জানেন না।
বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক ও ভৈরববাজার-আশুগঞ্জ নদীবন্দরের কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আহম্মেদ জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাল্কহেডের ডুবে যাওয়া জায়গা চিহ্নিত করেছেন। এটি নদীর প্রায় কিনারে। তাই নৌযান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে না। বাল্কহেডের মালিক বা তাদের কোনো প্রতিনিধি বিকেল পর্যন্ত
যোগাযোগ করেননি। তিনি আরও বলেন, ঈদের পর সাত দিন নদীতে এসব নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ
করা হয়েছিল। শনিবার ছিল এ নিষেধাজ্ঞার শেষ দিন। ওই বাল্কহেডটি রাতের বেলায় পণ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল।