বাড়িতে চলছিল জন্মদিনের আয়োজন, অদূরে পুকুরে ভাসছিল শিশুর লাশ
Published: 24th, April 2025 GMT
পরিবারে একমাত্র কন্যাসন্তান সিনহার খাতুন (৫)। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাটা হবে কেক। তাই বাড়িতে চলছিল জন্মদিন উদ্যাপন ও রান্নার আয়োজন। এমন আনন্দঘন পরিবেশে সমবয়সীদের নিয়ে বাড়ির সামনের মাঠে খেলতে যায় সিনহা। তবে কিছুক্ষণ পরই খবর আসে পাশের পুকুরে ভাসছে শিশুটির নিথর দেহ।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দীঘিরত্না গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় মাঠের পাশের একটি পুকুর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে স্বজনেরা।
সিনহা খাতুন একই গ্রামের সুজন মিয়া ও সুরাইয়া খাতুন দম্পতির একমাত্র কন্যা এবং একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান জানান, শিশু সিনহার খাতুনের আজ জন্মদিন ছিল। এ জন্য সিনহার মা সুরাইয়া খাতুন রাজধানী ঢাকার কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটিতে গ্রামে আছেন। সেই সঙ্গে বাড়িতে উপস্থিত ছিল আত্মীয়স্বজনও। বাড়ির সবাই সিনহার জন্মদিন পালনের প্রস্তুতি ও খাবার রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সকালে সিনহা খাতুন তার কয়েকজন সহপাঠীকে নিয়ে বাড়ির অদূরের একটি মাঠে খেলতে যায়। খেলার একপর্যায়ে দৌড় দিতে গিয়ে পাশের পুকুরে পানিতে পড়ে সে ডুবে যায়। এ সময় তার সহপাঠীরা দৌড়ে সিনহার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনকে খবর দেয়। পরে পুকুর থেকে শিশুটিকে উদ্ধার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হবে বলে জানান নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল। তিনি বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির করে আইনি প্রক্রিয়ায় মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।