দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বৃহস্পতিবার বলেছেন, তিনি ইউক্রেন সংঘর্ষ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা শিগগির বৈঠক করার পরিকল্পনা করছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় সফররত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর সিরিল রামাফোসা এ কথা বলেন।

তবে বুধবার দিবাগত রাতে কিয়েভে রাশিয়ার ভয়াবহ হামলার পর দক্ষিণ আফ্রিকার সফর সংক্ষিপ্ত করার কথা জানান জেলেনস্কি। সামাজিক মাধ্যমে তিনি লেখেন, রাত্রিকালীন হামলায় ইউক্রেনের রাজধানীতে অন্তত নয়জন নিহত হয়েছেন। আমি ‘অবিলম্বে ইউক্রেনে ফিরে যাব’।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেন শান্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলেছি। অপ্রয়োজনীয় প্রাণহানি কমাতে আমরা এই যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি। আমরা শিগগিরই বৈঠক করার বিষয়ে একমত হয়েছি। বৈঠকে আমরা দক্ষিণ আফ্রিকা-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করব।’

গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে প্রিটোরিয়া ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা করেছে প্রিটোরিয়া। এই পদক্ষেপসহ দেশটির বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতির সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। উত্তেজনার একপর্যায়ে গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে যুক্তরাষ্ট্র।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘শ্বেতাঙ্গবিরোধী ভূমিনীতি’ চলছে, এমন অভিযোগ এনে দেশটির আর্থিক সহায়তাও বন্ধ করেছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি দেশটিতে ‘নির্যাতিত’ শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদেরও শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

তবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রামাফোসা লিখেছেন, ‘আমি ও ট্রাম্প আমাদের দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একমত হয়েছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ