আইএমএফের ঋণের কিস্তি নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ, শর্ত নিয়ে আলোচনা
Published: 25th, April 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়া শেষ পর্যন্ত একটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। সেটি হচ্ছে, বাংলাদেশ কখন বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার উন্মুক্ত করবে, অর্থাৎ মার্কিন ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। গভর্নর আশা করছেন, ঋণের কিস্তি বাংলাদেশ পাবে। তবে শর্ত নিয়ে আলোচনা এখনো বাকি আছে।
মোট সাত কিস্তিতে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। ইতিমধ্যে তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার।
বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠক উপলক্ষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে আছেন। ২১ এপ্রিল শুরু হওয়া ছয় দিনব্যাপী এই বৈঠক আগামীকাল শনিবার শেষ হবে। বসন্তকালীন বৈঠকের এক ফাঁকে আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত বুধবার বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের আলাদা বৈঠক হয়।
এ বৈঠকের বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কিছু অগ্রগতি হয়েছে, যা চূড়ান্ত পর্যায়ে। আশা করছি, কাল-পরশুর মধ্যে একটা ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। এখন কারিগরি দিকগুলো নিয়ে কাজ চলছে।’
দুই কিস্তির ছাড়ের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কোথায় এসে ঠেকেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘বিষয় তো একটাই, মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা। আইএমএফ এ ব্যাপারে অনমনীয় অবস্থানে আছে। প্রশ্নটা হচ্ছে সময়ের। এটা কি (কিস্তি ছাড়ের) আগে করব, না পরে।’
বুধবার বৈঠকের পর ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন গভর্নর। সাংবাদিকদের সঙ্গে গভর্নরের আলাপের একটি ভিডিও ফুটেজ ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মর্তুজা নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়েছেন।
গভর্নর সেখানে বলেন, মুদ্রা বিনিময় হার এখন স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। ডলারের সরবরাহও ভালো। এ কারণে গত রোজার সময় ব্যাপক আমদানি হয়েছে। তা ছাড়া গত বছরের সেপ্টেম্বর, ডিসেম্বর ও এ বছরের মার্চ পর্যন্ত আইএমএফের দেওয়া রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে বাংলাদেশ।
আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের আরও জানান, আইএমএফের সঙ্গে মতবিরোধের কিছু নেই। তবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হবে বলে সংস্থাটি যে প্রাক্কলন করেছে, তার সঙ্গে তিনি পুরোপুরি একমত নন। গভর্নর আশা করেন, এ হার আরেকটু বেশি হবে।
চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির পর্যালোচনা করতে আইএমএফের একটি মিশন চলতি মাসে দুই সপ্তাহের জন্য ঢাকা ঘুরে গেছে।
ঢাকা ছাড়ার আগে আইএমএফের মিশন ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, এ বিষয়ে আরও আলোচনা চলবে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দুই কিস্তির অর্থ পাওয়া যেতে পারে আগামী জুনের শেষ দিকে। সেই বিষয়ে এখন আলোচনা চলছে ওয়াশিংটনে।
আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আহস ন এইচ মনস র আইএমএফ র
এছাড়াও পড়ুন:
সবার নজরের বাইরে থাকা চৈতী দেশের জন্য আনল স্বর্ণপদক
একটু বড় হওয়ার পর মেয়েকে দেখে চিন্তায় পড়ে যান মা–বাবা। অন্য শিশুদের মতো বাড়ছে না সে। হাত–পা ছোট, উচ্চতাও থমকে গেছে। পরে বুঝতে পারেন—চৈতী বামন।
যে মেয়েকে নিয়ে একসময় দুশ্চিন্তার পাহাড়ে আটকা পড়েছিল পরিবার, আজ সেই চৈতীই আনন্দের আলো ছড়াচ্ছে। দেশের জন্য প্রথমবারের মতো এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছে চৈতী রানী দেব।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর গ্রামের শিলু রানী দেব ও সত্য দেবের মেয়ে চৈতীর বয়স ১৩ বছর। উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি। কিন্তু তার লক্ষ্য নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া । সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমস ২০২৫–এ বর্শা নিক্ষেপ ও ১০০ মিটার দৌড়ে সে জিতে নিয়েছে দুটি স্বর্ণপদক। ৭ ডিসেম্বর এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
চৈতীর প্রতিভা আছে। অনুশীলনে সে খুব আন্তরিক। সে কিছু করতে চায়। আশা করছি, ওকে দিয়ে একটা ভালো ফলাফল পাবমেহেদী হাসান, বিকেএসপির প্রধান প্রশিক্ষকচৈতীর স্বর্ণপদক পাওয়ার বিষয়টি দুবাই থেকে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্সের (শি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শারমিন ফারহানা চৌধুরী।
যে মেয়েকে সবাই দেখত শুধু উচ্চতায়ভূনবীর দশরথ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী চৈতী একসময় গ্রামবাসীর নজরে পড়ত শুধু তার খর্বাকৃতির জন্য। খেলাধুলায় তার যে অসাধারণ প্রতিভা আছে, তা ছিল চোখের আড়ালে।
তবে এই ছবি এখন বদলে গেছে। গ্রামবাসী বাড়িতে এসে খোঁজ নেন। শিক্ষকেরা খেলতে উৎসাহ দেন, ছবি তোলেন। স্কুলে সে এখন ‘তারকা’।
দুবাইয়ে বর্শা নিক্ষেপে স্বর্ণপদক জয়ের পর চৈতী