আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়া শেষ পর্যন্ত একটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। সেটি হচ্ছে, বাংলাদেশ কখন বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার উন্মুক্ত করবে, অর্থাৎ মার্কিন ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। গভর্নর আশা করছেন, ঋণের কিস্তি বাংলাদেশ পাবে। তবে শর্ত নিয়ে আলোচনা এখনো বাকি আছে।

মোট সাত কিস্তিতে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। ইতিমধ্যে তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার।

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠক উপলক্ষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে আছেন। ২১ এপ্রিল শুরু হওয়া ছয় দিনব্যাপী এই বৈঠক আগামীকাল শনিবার শেষ হবে। বসন্তকালীন বৈঠকের এক ফাঁকে আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত বুধবার বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের আলাদা বৈঠক হয়।

এ বৈঠকের বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কিছু অগ্রগতি হয়েছে, যা চূড়ান্ত পর্যায়ে। আশা করছি, কাল-পরশুর মধ্যে একটা ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। এখন কারিগরি দিকগুলো নিয়ে কাজ চলছে।’

দুই কিস্তির ছাড়ের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কোথায় এসে ঠেকেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘বিষয় তো একটাই, মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা। আইএমএফ এ ব্যাপারে অনমনীয় অবস্থানে আছে। প্রশ্নটা হচ্ছে সময়ের। এটা কি (কিস্তি ছাড়ের) আগে করব, না পরে।’

বুধবার বৈঠকের পর ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন গভর্নর। সাংবাদিকদের সঙ্গে গভর্নরের আলাপের একটি ভিডিও ফুটেজ ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মর্তুজা নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়েছেন।

গভর্নর সেখানে বলেন, মুদ্রা বিনিময় হার এখন স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। ডলারের সরবরাহও ভালো। এ কারণে গত রোজার সময় ব্যাপক আমদানি হয়েছে। তা ছাড়া গত বছরের সেপ্টেম্বর, ডিসেম্বর ও এ বছরের মার্চ পর্যন্ত আইএমএফের দেওয়া রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে বাংলাদেশ।

আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের আরও জানান, আইএমএফের সঙ্গে মতবিরোধের কিছু নেই। তবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হবে বলে সংস্থাটি যে প্রাক্কলন করেছে, তার সঙ্গে তিনি পুরোপুরি একমত নন। গভর্নর আশা করেন, এ হার আরেকটু বেশি হবে।

চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির পর্যালোচনা করতে আইএমএফের একটি মিশন চলতি মাসে দুই সপ্তাহের জন্য ঢাকা ঘুরে গেছে।

ঢাকা ছাড়ার আগে আইএমএফের মিশন ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, এ বিষয়ে আরও আলোচনা চলবে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দুই কিস্তির অর্থ পাওয়া যেতে পারে আগামী জুনের শেষ দিকে। সেই বিষয়ে এখন আলোচনা চলছে ওয়াশিংটনে।

আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আহস ন এইচ মনস র আইএমএফ র

এছাড়াও পড়ুন:

আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ

২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন হলে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় একসঙ্গে দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ গতকাল শুক্রবার তার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের এ তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের এ বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে হতে পারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।

এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।

আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আর পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। গত বছরও তাই হয়েছে। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। মার্কিন প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।

পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে শর্ত পরিপালন নিয়ে দর–কষাকষিতে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল মূলত মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চাইলেও করতে চাইছিল না সরকার।

সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের কিস্তির প্রস্তাব উঠছে আইএমএফ পর্ষদে
  • আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
  • ট্রাম্প ও আইএমএফ—এই দুই পায়ের ওপর দাঁড়ানো এবারের বাজেট: আনু মুহাম্মদ