নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে খুলনা জেলার ১৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। এতে খুলনার বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার হাজারো মানুষের ঢল নেমেছিল। নানা সাজে বাঁশি আর ঢোল বাজিয়ে, গান গেয়ে শোভাযাত্রায় তাঁরা অংশ নেন। এর মাধ্যমে খুলনার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে নগরের শিববাড়ী মোড় থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়। নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শোভাযাত্রাটি আবার শিববাড়ী মোড়ে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, জাতীয় সংগীত পরিবেশন; শান্তির প্রতীক পায়রা, বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। খুলনা দিবস পালনের এসব আয়োজন করেছিল বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো.

ফিরোজ সরকার। সভাপতিত্ব করেন উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান। সংগঠনের মহাসচিব শেখ হাফিজুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে পুলিশের খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি রেজাউল হক, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার, খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি এস এম শফিকুল আলম (মনা), সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম (তুহিন), খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান, জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগর আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান, নাগরিক নেতা স্বপন কুমার গুহ, কুদরত–ই–খুদা, খুলনা আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ হোসেন, সদস্যসচিব শেখ নুরুল হাসান, খুলনা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এনামুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা খুলনার সামগ্রিক উন্নয়নে দলমত-নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। খুলনার ইতিহাস, ঐতিহ্য সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, খুলনার উন্নয়নের জন্য যেসব দাবিগুলো এখনো অপূরণীয় রয়েছে, তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।

আয়োজকেরা জানান, খুলনা দিবস উপলক্ষে উন্নয়ন কমিটির পক্ষ থেকে স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া খুলনা মেজবানি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

১৮৮২ সালের ২৫ এপ্রিল গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে খুলনাকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি দিনটি প্রতিবছর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করে আসছে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ