জৌলুস হারাচ্ছে ঐতিহাসিক ‘ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ’
Published: 26th, April 2025 GMT
প্রায় চারশ বছর আগে মুঘল আমলে নির্মিত হয় কুষ্টিয়ার ‘ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ’। অপূর্ব কারুকাজ থাকা ঐতিহাসিক এই নিদর্শন দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে শত শত দর্শনার্থী ছুটে আসেন। স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর সংস্কার না হওয়ায় দিনদিন সৌন্দর্য ও জৌলুস হারাতে বসেছে মসজিদটি।
ঐতিহাসিক এই মসজিদটি কুষ্টিয়া শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলার মধ্যবর্তী ঝাউদিয়া গ্রামে অবস্থিত।
নির্মাণকালের সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও মসজিদটি ঘিরে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ আছে। ইতিহাস ঘেঁটে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুঘল সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে ইরাকের জমিদার শাহ সুফি আদানী ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলে আসেন। প্রায় চারশ বছর আগে ঝাউদিয়া গ্রামে তিনিই নির্মাণ করেন মসজিদটি।
আরো পড়ুন:
আড়াইশ বছরের পুরোনো ১৩ গম্বুজ মসজিদ
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে চিরকুট, ‘পাগলা চাচা শেখ হাসিনা কোথায়’
জনশ্রুতি আছে, অলৌকিকভাবে এক রাতেই মসজিদটি দৃশ্যমান হয়। মুঘল শিল্পকলার অপূর্ব নিদর্শন রয়েছে মসজিদটিতে। দেয়াল জুড়ে নিপুণ আল্পনা, কারুকার্যময় অপূর্ব শিল্পের ছোঁয়া আর পাথরের খোদাই বলে দেয় এটি মুঘল আমলের স্থাপত্য নিদর্শন।
সুদৃশ্য পাঁচটি গম্বুজ আছে ঝাউদিয়া শাহী মসজিদে। চার কোনায় আছে চারটি নান্দনিক মিনার। প্রবেশ দরজায় দুইটি মিনার আছে। যা সহজেই মানুষকে মুগ্ধ করে। ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে ১৯৬৯ সালে মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত করা হয়।
দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় মসজিদ তার সৌন্দর্য ও জৌলুস হারাতে বসেছে। এ ছাড়া, ঝাউদিয়া গ্রামে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল বা আবাসন সুবিধা না থাকায় নানা বিড়ম্বনা পোহাতে হয় দর্শনার্থীদের।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার না হওয়ায় মসজিদটির এখন বেহাল দশা। দেখলে মনে হয় জরাজীর্ণ অবস্থা। তাছাড়া তিন কাতারের বেশি নামাজ পড়ার জায়গা নেই। অথচ মসজিদের সামনে-পেছনে অনেক জায়গা আছে। নতুন করে রংসহ মসজিদটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তারা।
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “এই মসজিদটি মুঘল আমলে নির্মিত হয়েছে। কারণ মোগল আমলে নির্মিত অন্যান্য স্থাপনার সঙ্গে এই মসজিদের নির্মাণ শৈলীতে অনেক সামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যায়। মুঘল স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করে ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ নির্মিত।”
তিনি আরো বলেন, “দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন। শুক্রবারগুলোতে এই মসজিদে প্রায় ৪-৫ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে আসেন।”
সেলিম উদ্দিন চৌধুরী নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “মসজিদের বাইরের সৌন্দর্য রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে কিছুটা ম্লান হলেও ভেতরে চোখ ধাঁধানো নকশার তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। বর্তমানে এ মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সম্পত্তি। সর্বশেষ ১৯৭৯-৮০ সালের দিকে একবার মসজিদটির সংস্কার করা হয়।”
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পার্থ প্রতীম শীল মসজিদটি সংস্কার না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এ ধরনের ঐতিহাসিক নিদর্শন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত। তাই এর সংস্কার বা দেখভাল স্থানীয়ভাবে করা সম্ভব নয়। যে কারণে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা যাচ্ছে না।”
ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মসজ দ মসজ দ র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেম ছিল না তবু কেন মধুবালাকে বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমার
দিলীপ কুমারের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মধুবালা। তবে তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন, ভালোবাসা থেকে নয়, বরং কথা রাখতেই তিনি এ বিয়ে করেছিলেন।
মধুবালা ও দিলীপ কুমারের প্রেম নিয়ে একসময় মুখর ছিল মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু অভিনেত্রীর বাবার বাধার কারণে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে। কিছুদিন পরেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন মধুবালা। তাঁদের এই বিয়ে অনেককে চমকে দিয়েছিল। কারণ, তাঁদের প্রেমের কথা তখনো গোপন ছিল। তবে মধুবালার শরীর তখন ভালো যাচ্ছিল না। বলা হয়, দীর্ঘ রোগভোগের সময় কিশোর কুমার তাঁকে মায়ের বাড়িতে রেখেই চলে যান।
দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, ‘বিয়ের আগেই জানতাম, ও খুব অসুস্থ। কিন্তু কথা তো দিয়েছিলাম। তাই সে কথা রেখেই ওকে ঘরে এনেছিলাম স্ত্রী হিসেবে। জানতাম, ওর জন্মগত হৃদ্রোগ আছে। তবু ৯ বছর ধরে সেবা করেছি। চোখের সামনেই ওকে মরতে দেখেছি। কেউ বুঝবে না এর যন্ত্রণা, না ভুগলে। ও অসম্ভব সুন্দরী ছিল। আর কত যন্ত্রণায় মারা গেছে, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হতাশায় চিৎকার করত, কান্নাকাটি করত। এত প্রাণোচ্ছল মানুষ নয়টা বছর বিছানায় শুয়ে থাকবে—এ কল্পনাই করা যায় না। ডাক্তার বলেছিল, ওকে হাসিখুশি রাখতে হবে। আমি তা–ই করেছি—ওর শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। কখনো হেসেছি, কখনো কেঁদেছি ওর সঙ্গে।’
তবে কিশোর কুমারের এই বক্তব্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কারণ, পরে ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একেবারে ভিন্ন কথা বলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেন, ‘মধুবালার সঙ্গে আমি প্রেমে পড়িনি কখনো। বরং ওর প্রেমিক ছিল আমার বন্ধু দিলীপ কুমার। আমি তো শুধু ওদের বার্তা পৌঁছে দিতাম। বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মধুবালাই। এমনকি, যখন আমার প্রথম স্ত্রী রুমা তখনো আমার সঙ্গে ছিল, তখনো মধু বলত, “ওকে কখনো ছেড়ো না, না হলে আমি তোমার হয়ে যাব।”’
আরও পড়ুনকিশোর কুমার কি সত্যিই ঘরে কঙ্কাল আর মাথার খুলি নিয়ে ঘুমাতেন২৭ মে ২০২৫মধুবালার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তখন বলেছিলেন, অভিনেত্রীর পক্ষে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সন্তানধারণ কোনো কিছুই সম্ভব নয়। সেই বাস্তবতা হয়তো প্রভাব ফেলেছিল কিশোরের সিদ্ধান্তে। এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘আমরা বলছি না কিশোরদা ভুল করেছিলেন। ডাক্তার তো স্পষ্ট বলেছিল—শারীরিক সম্পর্ক বা সন্তান কোনোটাই সম্ভব নয়। তবে একজন নারীর তো মানসিক সঙ্গীও দরকার হয়।’
ওই ঘনিষ্ঠজন আরও জানান, কিশোর কুমার তিন মাসে একবার আসতেন মাত্র। বলতেন, ‘আমি এলে তুমি কাঁদবে, আর এতে তোমার হৃদ্যন্ত্রের ক্ষতি হবে। তুমি বিষণ্ন হয়ে পড়বে।’ সে সময় মধু অনেক ছোট ছিলেন, ঈর্ষাও ছিল স্বাভাবিক। হয়তো এ দূরত্বই ধীরে ধীরে তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বলিউড অভিনেত্রী মধুবালা