স্থায়ী সমাধান ও অনিয়ম বন্ধে ব্যবস্থা কী
Published: 27th, April 2025 GMT
ব্রোকারেজ হাউস মালিক ও মার্চেন্ট ব্যাংকারদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারের নেগেটিভ ইকুইটি তথা ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিংয়ের বাধ্যবাধকতার সময়সীমা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত বৃহস্পতিবার এক জরুরি সভায় সময় বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শেয়ারবাজারে ২০১০ সালের ধসের পর ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের এই সমস্যা তৈরি হয়। এরপর প্রায় দেড় দশক ধরে শেয়ারবাজারে সমস্যাটি জেঁকে বসেছে। এই সময়ে বিএসইসির কোনো নেতৃত্ব সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান করেননি বা করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি। বরং সব কমিশনই সমস্যাটির তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে শুধু সময় বাড়িয়ে নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছাড় দেওয়া দিয়েছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানও নিজে থেকে এই সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা ক্রমাগতভাবে কমেছে। সেই সঙ্গে একশ্রেণির ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে ঋণাত্মক ঋণ হিসাবগুলো অনিয়মের এক হাতিয়ারে পরিণত হয়। তাই শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই সমস্যাকে বাজারের জন্য ‘ক্যানসার’ হিসেবে অভিহিত করেন। তাঁরা বলছেন, সাধারণ ওষুধে (সময় বৃদ্ধির মতো সিদ্ধান্ত) এখন আর এই ক্যানসারের নিরাময় সম্ভব নয়। এই রোগ সারাতে অস্ত্রোপচার করতে হবে। তার জন্য নিতে হবে কঠোর ও বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা।
ঋণাত্মক ঋণ হিসাব কী ও কেন তৈরি হয়
২০১০ সালের ধসের আগে দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের বুদ্বুদ বা উল্লম্ফন দেখা দেয়। ওই সময় শেয়ারবাজার সম্পর্কে না জেনে না বুঝে হাজার হাজার মানুষ লাভের আশায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাতে শেয়ারের দাম ও লেনদেন ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ফলে শেয়ারসূচক লাগামহীনভাবে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহের সুযোগ নিয়ে গ্যাম্বলার তথা কারসাজিকারকেরা তৎপর হয়ে ওঠেন। তাঁরা কারসাজির মাধ্যমে অনেক শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়েছেন। যার অনিবার্য ফল হিসেবে ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধস নামে। এই ধসের আগে অস্বাভাবিক উত্থানপর্বে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোও যথাযথ বাছবিচার ছাড়াই শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের ‘মার্জিন লোন’ বা প্রান্তিক ঋণসুবিধা দেয়। কখনো নিয়মের মধ্যে থেকে আবার কখনো নিয়ম ভেঙে কয়েক গুণ বেশি ঋণসুবিধা দেওয়া হয় বিনিয়োগকারীদের। একসময় বাজারে ধস নামতে শুরু করে। তাতে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে কমতে থাকে এবং ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর দেওয়া বিপুল পরিমাণ ঋণ আটকে যায়।
এত দিনেও কেন শেয়ারবাজারের ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের স্থায়ী কোনো সমাধান হলো না, সেটি এক বড় প্রশ্ন। যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান দরকার। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রয়োজনে সময় বেঁধে দিয়ে এসব অনাদায়ি ঋণ অবলোপনের ব্যবস্থা নিতে হবেফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক চেয়ারম্যান, বিএসইসিএই ধসে পুঁজি হারিয়ে ও নিঃস্ব হয়ে ঋণগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের বড় অংশই বাজার ছেড়ে চলে যান। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো পরে আর এসব বিনিয়োগকারীকে খুঁজে পায়নি। আবার ২০১০ সালের ধসের পর বাজারে পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ফোর্সড সেল’ বা ‘জোরপূর্বক বিক্রি’ বন্ধ ঘোষণা করে। ফলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করে অনাদায়ি ঋণ আদায়ে সময়মতো উদ্যোগ নিতে পারেনি।
বিষয়টি একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যেতে পারে। ধরা যাক, একজন বিনিয়োগকারী ঋণযোগ্য কোনো এক কোম্পানির শেয়ার কিনতে নিজের ১০০ টাকার (ঋণসীমা ১ অনুপাত ২ হারে) বিনিয়োগের বিপরীতে ২০০ টাকা ঋণ নিয়ে মোট ৩০০ টাকা বিনিয়োগ করেন। তখন ওই শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ১০০ টাকা। ফলে ওই বিনিয়োগকারী যেখানে নিজের বিনিয়োগের টাকায় একটি শেয়ার কেনার সামর্থ্য ছিল, সেখানে ২০০ টাকা ঋণসুবিধা পাওয়ায় তিনি তিনটি শেয়ার কিনতে সক্ষম হন। এভাবে ব্যাপক হারে শেয়ারের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু পরে যখন বাজারে ধস নামে, তখন শেয়ারের দাম নেমে আসে ৫০ টাকা বা তারও নিচে। তাতে ৩০০ টাকার তিনটি শেয়ারের দাম কমে হয় ১৫০ টাকা বা এর চেয়ে কম। তখন ওই শেয়ার ১৫০ টাকায় বিক্রি করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পুরো ঋণ আদায়ের সুযোগ ছিল না। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীর নিজের ১০০ টাকার পুঁজির পুরোটাই লোকসানের খাতায় চলে যায়। উল্টো ঋণের আসল ও সুদ মিলিয়ে বড় দেনা তৈরি হয়। এ অবস্থায় অনেক বিনিয়োগকারী নিজের পুঁজি হারিয়ে আর বাজারমুখী হননি। এরই মধ্যে শেয়ারের দাম আরও কমে। তাতে ঋণাদাতা প্রতিষ্ঠানের অনাদায়ি ঋণের পরিমাণও সুদে–আসলে কাগজে–কলমে বাড়তে থাকে। এভাবে শেয়ারবাজারে বড় অঙ্কের ঋণাত্মক ঋণ বা মন্দ ঋণ বা নেগেটিভ ইকুইটির বোঝা ভারী হয়ে ওঠে।
বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, দেশের শেয়ারবাজারে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মোট অনাদায়ি ঋণাত্মক ঋণের পরিমাণ ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক হিসাবমান নিয়ম অনুযায়ী, ঋণদাতা যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রতিবছর তার অনাদায়ি ঋণের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। সাধারণত প্রতিষ্ঠানের মুনাফা থেকে এই নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। তাতে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা কমে যায়। ২০১০ সালের পর শেয়ারবাজারে দীর্ঘ সময় ধরে মন্দাবস্থা চলে। তাতে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বড় অংশই মুনাফার দেখা পায়নি। ফলে তাদের পক্ষে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের আর্থিক সামর্থ্যও ছিল না। এই অবস্থায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে দফায় দফায় নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে সময় বাড়িয়ে ছাড় দেওয়া হয়।
এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান দরকার। বছর বছর সময় বাড়িয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। এ ছাড়া ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের অনিয়ম রোধে তদারকি ব্যবস্থা জোরালো করতে হবে। তদারকির দুর্বলতার কারণেই আমরা বাজারে ঋণাত্মক ঋণ হিসাব নিয়ে নানা ধরনের অনিয়মের কথা শুনতে পাইসাইফুল ইসলাম, সভাপতি, ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)ব্রোকারেজ হাউস মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ঋণাত্মক ঋণ হিসাবগুলোকে অবলোপনের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বিএসইসির কাছে আবেদন করেছি। আমরা মনে করি, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান দরকার। বছর বছর সময় বাড়িয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। এ ছাড়া ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের অনিয়ম রোধে তদারকি ব্যবস্থা জোরালো করতে হবে। তদারকির দুর্বলতার কারণেই আমরা বাজারে ঋণাত্মক ঋণ হিসাব নিয়ে নানা ধরনের অনিয়মের কথা শুনতে পাই।’
ঋণাত্মক ঋণ যেভাবে অনিয়মের হাতিয়ার
এদিকে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিপুল অনাদায়ি ঋণ অনেকের কাছে অনিয়মের হাতিয়ারে পরিণত হয়। লাভের আশায় অনেক প্রতিষ্ঠান এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ না নিয়ে সময় বাড়ানোর চাপ তৈরি করার মাধ্যমে দেড় দশক ধরে সমস্যাটি জিইয়ে রেখেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও তাতে সহায়তা দিয়ে গেছে। অনাদায়ি ঋণ মূলত ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের দায়। তাই যে প্রতিষ্ঠানের এই দায় বেশি, সেটি তত দুর্বল হয়েছে। আর প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই ঋণের দায় বাড়িয়ে দুর্বল করার পেছনে কিছু কিছু কর্মকর্তারও ব্যক্তিগত স্বার্থ ছিল। তাঁরা এসব ঋণাত্মক ঋণ হিসাবকে নিজেদের স্বার্থে অনিয়মের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। কীভাবে সেটি করলেন তার একটি ধারণাভিত্তিক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।
ধরা যাক, কোনো একজন বিনিয়োগকারী ৫০ টাকা দামে একটি কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন। পরে বাজারে সেই শেয়ারের দাম নেমে এসেছে ২০ টাকায়। এ রকম পরিস্থিতিতে ওই বিনিয়োগকারী ঋণদাতা ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু কর্মকর্তার শরণাপন্ন হলেন। দুজনের মধ্যে একধরনের সমঝোতা হলো। বাজারমূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি দামে (যেমন ২৫ বা ২৭ টাকা) ওই বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে সেই শেয়ার কিনে নেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব হিসাবে। বিনিময়ে ওই কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে শেয়ারপ্রতি নগদে নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করেন। তাতে বিনিয়োগকারী বাজারমূল্যের চেয়ে কিছু টাকা বেশি পান। অন্যদিকে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করে নিজে নগদ অর্থ কামিয়ে নেন। পরে ওই সব শেয়ার নেগেটিভ ইকুইটি বা ঋণাত্মক ঋণ হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায় এবং আর্থিক সক্ষমতা কমে যায়। বেসরকারি মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশেও (আইসিবি) এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ফলে ২০১০ সালের পর থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের নেগেটিভ ইকুইটির বোঝা কেবলই বেড়েছে।
সমস্যার স্থায়ী সমাধান কী
বাজার–সংশ্লিষ্ট একটি পক্ষ বলছে, এখন আর শুধু নিরাপত্তা সঞ্চিতির সময় বাড়িয়ে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যাটির সমাধান করতে হলে সব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তারপর সেসব হিসাবকে ব্লক হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে এসব হিসাবে অনুমোদন ছাড়া শেয়ার কেনাবেচা বন্ধ রাখতে হবে। এরপর প্রতিষ্ঠানভেদে সুনির্দিষ্ট তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে এসব অনাদায়ি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ধাপে ধাপে প্রভিশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ–ও বলছেন, ব্যাংকে যে পন্থায় খেলাপি ঋণ অবলোপন বা রাইট অফ করা হয়, শেয়ারবাজারেও সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে কিছু কিছু অনাদায়ি ঋণের ক্ষেত্রে। কারণ, এসব ঋণ আদায়ের বাস্তব সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। অনেক বিনিয়োগকারীকে এখন আর খুঁজে পাওয়াও যাবে না। আবার শেয়ারবাজারে ঋণের ক্ষেত্রে শেয়ার ছাড়া আর কোনো জামানতও থাকে না। ফলে হয় শেয়ার বিক্রি করে এসব অনাদায়ি ঋণ সমন্বয় করতে হবে ধাপে ধাপে, অন্যথায় অবলোপনের পথে যেতে হবে। এটি করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন নতুন করে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য সরকারি কিছু নীতি সহায়তাও দিতে হবে।
সর্বশেষ বিএসইসি সময় বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের প্রভিশনিংয়ের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আলাদা কর্মপরিকল্পনা তৈরির শর্তারোপ করা হয়েছে। সেই শর্ত পরিপালনের মাধ্যমে শেয়ারবাজারের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান যেন হয়, সেটিই প্রত্যাশা বাজার অংশীজনদের। কারণ, এই সমস্যার স্থায়ী নিরাময় চায় বাজার–সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ। আর সেই নিরাময়ে বিএসইসিকে চিকিৎসকের ভূমিকায় থেকে সুচিন্তিত ও বাস্তবভিত্তিক কার্যকর সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, এত দিনেও কেন শেয়ারবাজারের ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের স্থায়ী কোনো সমাধান হলো না, সেটি এক বড় প্রশ্ন। যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান দরকার। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রয়োজনে সময় বেঁধে দিয়ে এসব অনাদায়ি ঋণ অবলোপনের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিষ্ঠানভেদে ও ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে সমাধান করতে হবে। আর এসব হিসাবে অনিয়ম রোধেও কার্যকর পদক্ষেপ দরকার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই সমস য র স থ য় র শ য় রব জ র শ য় রব জ র র ২০১০ স ল র সময় ব ড় য় ব এসইস র কর মকর ত র পর ম ণ র ব পর ত সমস য ট ব যবস থ দ র বল গ রস ত ন র অন র সময় ধরন র ঋণদ ত
এছাড়াও পড়ুন:
বাবা হওয়ার কোনো বয়স আছে? সত্তরে কেলসির চমক
নারীদের মেনোপজ ৪৫-৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত হয়ে থাকে। তারপর ডিম্বাশয় নারী হরমোন ইস্ট্রোজেন প্রজেস্টেরন উৎপাদনের ক্ষমতা হারায়। ফলে নারীরা প্রজনন ক্ষমতা হারান। পুরুষেরও কি তেমনটা হতে পারে? কত বছর বয়স পর্যন্ত পুরুষ বাবা হতে পারেন? যদিও এর নির্ধারিত বয়স সীমা নেই।
তবে কোনো কোনো পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন ৪৫-৫০ বছর বয়সেই কমতে শুরু করে। এসব সংকটকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সত্তর বছর বয়সে বাবা হয়ে চমক দেখালেন ‘গোল্ডেন গ্লোব’ বিজয়ী মার্কিন অভিনেতা কেলসি গ্রামার। কয়েক দিন আগে তার চতুর্থ স্ত্রী কেট ওয়াশ পুত্রসন্তান জন্ম দিয়েছেন। কেট ওয়াশের বয়সও নেহায়েত কম নয়, এখন তার বয়স ৪৬ বছর। এ দম্পতি ছেলের নাম রেখেছেন ক্রিস্টোফার। কেলসির এটি অষ্টম সন্তান।
আরো পড়ুন:
সিনেমাটির ভরাডুবি আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে: অনুপমা
বিয়ের আসরে দেখা দিলেন নিপুণ
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পিপল জানিয়েছে, পরিবারে নতুন সদস্যের আগমনে আনন্দে ভাসছেন কেলসি গ্রামার-কেট দম্পতি। তাদের পরিবারের সদস্যরাও এ খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। কেলসি-কেট দম্পতির আরো তিনটি সন্তান রয়েছে।
স্ত্রী কেট ওয়াশের সঙ্গে কেলসি
কয়েক দিন আগে ‘পড মিটস ওয়ার্ল্ড’ পডকাস্টে অতিথি হিসেবে হাজির হন কেলসি গ্রামার। এ আলাপচারিতায় ‘ফ্রেইজা’ তারকা বলেন, “আমরা (কেলসি-কেট) আমাদের চতুর্থ সন্তানকে পেয়েছি। ক্রিস্টোফার আমাদের পরিবারে সদ্য যোগ দিয়েছে। এখন আমাদের মোট আট সন্তান।”
কেলসির চতুর্থ স্ত্রী কেট ওয়াশের বয়স এখন ৪৬ বছর। ২০১১ সালে বিয়ে করেন এই দম্পতি। কেলসি বলেন, “আমাদের (কেলসি-কেট) প্রথম সন্তানের (কন্যা) নাম ফেইথ, তার বয়স ১২ বছর, দ্বিতীয় সন্তানের (পুত্র) নাম গ্যাব্রিয়েল, তার বয়স ১০, তৃতীয় সন্তানের (পুত্র) নাম জেমস, তার বয়স ৮ বছর। আমাদের চতুর্থ সন্তান (পুত্র) ক্রিস্টোফার।”
১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট থমাসে জন্মগ্রহণ করেন কেলসি। ১৯৮২ সালে ডোরিন অল্ডারম্যানকে প্রথম বিয়ে করেন এই অভিনেতা। ১৯৮৩ সালে প্রথম বাবা হন কেলসি। এই কন্যার নাম রাখেন স্পেন্সার গ্রামার। ১৯৯২ সালে দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হন কেলসি। অভিনেত্রীর বান্ধবী ব্যারি বাকনা এ সন্তানের মা। তারা কন্যার নাম রাখেন গ্রিয়া গ্রামার।
স্ত্রী কেট ওয়াশের সঙ্গে কেলসি
দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হওয়ার কয়েক মাস পর নৃত্যশিল্পী লে-অ্যান চুহানিকে বিয়ে করেন কেলসি। এ সংসারে কোনো সন্তান নেই। বিয়ের এক বছর পরই ভেঙে যায় তাদের সংসার। ১৯৯৭ সালে মডেল-অভিনেত্রী ক্যামিল গ্রামারকে বিয়ে করেন কেলসি। এ দম্পতির দুটো সন্তান রয়েছে। তাদের নাম রাখেন—ম্যাসন, জুড। ২০১০ সালে এ সংসারও ভেঙে যায়। তৃতীয় সংসার ভাঙার এক বছর পর কেট ওয়াশকে বিয়ে করেন এই অভিনেতা।
২০২২ সালে পিপলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেলসি গ্রামার বলেন—“প্রতিদিন আমার সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানোর আনন্দ, পৃথিবীর সেরা অনুভূতি। সন্তানেরাই আমার জীবনের বড় অংশ।”
১৯৮৩ সালের ৯ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন কেলসির প্রথম সন্তান স্পেন্সার গ্রামার। তার বয়স এখন ৪২ বছর। মাত্র ৯ বছর বয়সে অভিনয় দুনিয়ায় পা রাখেন তিনি। তারপর থেকে সফল অভিনয় ক্যারিয়ার উপভোগ করছেন এই অভিনেত্রী। জেমস হেস্কেথকে বিয়ে করেছেন স্পেন্সার। এ সংসারে তাদের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। অর্থাৎ অভিনেতা কেলসি গ্রামার যখন চতুর্থ বিয়ে করেন, তখন তার বড় কন্যা প্রথম সন্তানের মা হন।
কেলসির কন্যা স্পেন্সার গ্রামার
১৯৯২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন কেলসি গ্রামারের দ্বিতীয় সন্তান গ্রিয়া গ্রামার। তার এই কন্যার বয়স এখন ৩৩ বছর। বাবা ও বড় বোনের পথ অনুসরণ করে বিনোদন দুনিয়ায় পা রেখেছেন গ্রিয়া। ২০১০ সালে অভিনয়ে অভিষেক ঘটে তার। দারুণ সব কাজ উপহার দিয়ে নজর কেড়েছেন এই তরুণ অভিনেত্রী।
২০০১ সালের ২৪ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন কেলসির তৃতীয় কন্যাসন্তান ম্যাসন গ্রামার। তার বয়স এখন ২৪ বছর। ২০১০ সালে ম্যাসনের মা ক্যামিল গ্রামারের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে কেলসির। সেই সময়ে পেজ সিক্স-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ম্যাসন বলেছিলেন—“বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ আমার উপরে ভীষণ প্রভাব ফেলেছিল। সেটা আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল। তারপর আমাকে দ্রুত বড় হতে হয়েছিল। কারণ আমার অনেক দায়িত্ব ছিল।”
ম্যাসনও শোবিজ অঙ্গনে পা রেখেছেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকের রানওয়েতে হাঁটেন তিনি। যদিও তার মনোযোগ ছিল পড়াশোনায়। ২০২৪ সালে বোস্টনের এমারসন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ম্যাসন। এখন মডেলিং চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
কেলসির কন্যা গ্রিয়া গ্রামার
২০০৪ সালের ২৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন কেলসির চতুর্থ সন্তান জুড। সারোগেসির মাধ্যমে তার জন্ম হয়। এখন জুডের বয়স ২১ বছর। কেলসির সঙ্গে ক্যামিল গ্রামারের বিবাহবিচ্ছেদের পর জুড ও তার বোন ম্যাসন তার মায়ের সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়াতে বসবাস শুরু করেন। ২০১৮ সালে পেজ সিক্স-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুত্রকে নিয়ে কেলসির তৃতীয় স্ত্রী ক্যামিল বলেন, “আমি জানি সে (জুড) তার বাবার মতো একজন অভিনেতা হতে চায়।”
ঢাকা/শান্ত