নিখোঁজের এক দিন পর রেললাইনের পাশে লাশ উদ্ধার, স্বজনদের অভিযোগ হত্যাকাণ্ড
Published: 27th, April 2025 GMT
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে নিখোঁজের এক দিন পর রেললাইনের পাশ থেকে ইকবাল হোসাইন (৩০) নামে এক যুবকের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রোববার সকালে উপজেলা রেলগেইট এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। ওই যুবক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, নাকি পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে রহস্য।
নিহত ইকবাল কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের চৈত্রঘাট এলাকার বড়চেগ গ্রামের বাসিন্দা। বছরখানেক আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি। গতকাল শনিবার বিকেল থেকে ইকবালের সঙ্গে তাঁর পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। পরে রাতেই এ বিষয়ে কমলগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
আজ সকাল আটটার দিকে রেললাইনের পাশে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে লোকজন থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। লাশের দুটি পা আলাদা ছিল। শরীরের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ছিল রেললাইনের পাশে।
নিহত ইকবালের ফুফাতো ভাই সোহান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাইটা গতকাল বিকেলে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ভেড়াছড়া গ্রামে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পর তাঁর আর কোনো খোঁজ মিলছিল না। আজ সকালে তাঁর লাশ পেলাম। আমরা মনে করি, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাঁকে মেরে রেললাইনে ফেলে রাখা হয়েছিল, যেন এটি দুর্ঘটনা মনে হয়।’
ইকবালের মৃত্যুর পেছনে তাঁর স্ত্রী জড়িত থাকতে পারেন বলে ধারণা স্বজনদের। কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, গতকাল নিহত ব্যক্তির পরিবার থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিল। সেটির খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছিল। এর মধ্যে আজ সকালে লাশ পাওয়া গেছে। বিষয়টি রেলওয়ে পুলিশ দেখছে। কমলগঞ্জ থানার পুলিশ তাঁদের সহযোগিতা করছে।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রেললাইন থেকে লাশ উদ্ধার করেছি। মৃতদেহ থেকে পাগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পুরো শরীর ছিন্নভিন্ন। আমরা লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠাচ্ছি। এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সেটি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও তদন্ত করে জানা যাবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লিবিয়ায় তিন বাংলাদেশিকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবি
লিবিয়ায় মুক্তিপণের দাবিতে তিন বাংলাদেশি নাগরিককে অপহরণের পর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। তাদের দাবি, অপহরণকারীরা নির্যাতনের ভিডিও ও অডিও পাঠিয়ে একটি ব্যাংক নম্বরের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছে। এতে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে স্বজনদের। ইতিমধ্যে মুক্তিপণের কিছু অর্থ পাঠিয়েছে দুটি পরিবার।
ওই তিন প্রবাসী হলেন আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের গুডুম্বা গ্রামের গোলাম রব্বানী, একই ইউনিয়নের পুন্ডুরিয়া দক্ষিণ মণ্ডলপাড়া গ্রামের আবদুল করিম ও সোনামুখী ইউনিয়নের রামশালা গ্রামের রুহুল আমিন। প্রায় ১৫ দিন আগে গোলাম রব্বানীকে এবং ৬-৭ দিন আগে অন্য দুজনকে অপহরণ করা হয়। রুহুল আমিন ও আবদুল করিম সম্পর্কে শ্যালক-ভগ্নিপতি।
গোলাম রব্বানীর স্ত্রী মোছা. জুথি আক্তার জানান, তাঁর স্বামী ২০১৫ সালে লিবিয়ায় যান এবং ২০২৩ সালে ছুটি কাটিয়ে আবার সেখানে ঠাঁই নেন। জিলথান শহরে রঙের কাজের কথা বলে স্থানীয় একটি বাঙালি মাফিয়া চক্র তাঁকে অপহরণ করে। গত ৩০ নভেম্বর রব্বানীর ফোন থেকেই তাঁকে কল দিয়ে অপহরণের কথা জানানো হয় এবং ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের মতিঝিল করপোরেট শাখার একটি হিসাব নম্বরে এই টাকা জমা দিতে বলা হয়। এর পরপরই নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয়। এখন অপহরণকারীরা ১৫ লাখ টাকা চাইছে বলে জানান তিনি।
জুথি আক্তারের ভাষ্য, ‘ওই টাকা না দিলে তারা (অপহরণকারীরা) আমার স্বামীকে হত্যা করবে, বলে হুমকি দিচ্ছে। স্বামীকে উদ্ধারে প্রবাসী কল্যাণের ওয়েজ অর্নার বোর্ডের সহযোগিতা চেয়ে মহাপরিচালকের কাছে আমি ৮ ডিসেম্বর একটি আবেদন করেছি।’
অপহৃত আবদুল করিমের স্ত্রী তাসলিমা বিবি বলেন, দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে লিবিয়ায় থাকা তাঁর স্বামী গত বছর প্রায় আট মাস দেশে ছিলেন। প্রায় সাত মাস আগে তিনি আবার লিবিয়ায় ফিরে যান। ৬ ডিসেম্বর রঙের কাজ দেখানোর কথা বলে তাঁকে ডেকে নেওয়া হয়। পরে আটকে রেখে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরিবারের সদস্যরা এরই মধ্যে কিছু টাকা ওই ব্যাংক নম্বরে পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন।
অপহৃত রুহুল আমিনের স্ত্রী আছিয়া বেগম বলেন, ঘটনার দিনে স্বামী ফোন করে জানিয়েছিলেন, তিনি কাজ দেখতে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর একটি গাড়ির ছবি পাঠান। পরদিন তাঁর ফোন থেকেই নির্যাতনের অডিও পাঠিয়ে ৩০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। কষ্ট করে এক লাখ টাকা পাঠিয়েছেন তাঁরা।
আক্কেলপুর থানার এসআই গণেশ চন্দ্র বলেন, গোলাম রব্বানীর স্ত্রী নির্যাতনের ভিডিও ও মুক্তিপণের বিষয়টি নিয়ে থানায় এসেছিলেন। তাঁকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনলিবিয়া থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হলো ১৭০ জনকে১৮ নভেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনলিবিয়া টু ইতালি: ‘মৃত্যুর পথে’ কেন মরিয়া যাত্রা১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫