পানীয় সুস্বাদু করে তুলতে লবণ কিংবা চিনির মতো উপাদান মেশানো হয়। দীর্ঘদিন এসব উপাদান গ্রহণ করার কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাজারে এমন অনেক পানীয় পাওয়া যায়, যা সংরক্ষণের সুবিধার্থে কিংবা আকর্ষণীয় রঙের জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক মেশানো হয়। এসবের প্রভাবেও কিডনির ক্ষতি হয়। এমনটাই বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কিডনি রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.

তোফায়েল আহম্মদ

কোন পানীয় কখন সুস্থ ব্যক্তির কিডনির জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে

কোমল পানীয়

কোমল পানীয় কারও জন্যই স্বাস্থ্যকর নয়। এতে মেশানো চিনির কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ে। এভাবে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘদিন রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত থাকলে কিডনির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিডনির কার্যক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়। প্রায়ই গ্রহণ করলে এনার্জি ড্রিংকও কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

প্যাকেটজাত জুস

জুস সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক যোগ করে প্যাকেটজাত করা হয়। চিনি ও অন্যান্য রাসায়নিক থাকার কারণে এসব জুস স্বাস্থ্যকর নয়। প্রায়ই যদি কেউ এ ধরনের পানীয় খান, তাহলে এসবের কারণে তাঁর কিডনির রোগের ঝুঁকি বাড়বে।

আরও পড়ুনকিডনি ভালো রাখবে সকালের এই ৫ অভ্যাস০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শরবত

সাধারণত শরবতে চিনি, লবণ বা বিট লবণের মতো উপাদান যোগ করা হয়। চিনি তো ক্ষতিকর বটেই, যেকোনো ধরনের লবণ অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। লবণ নিঃসন্দেহেই দেহের জন্য উপকারী, তবে তা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায়। রোজকার প্রয়োজনীয় লবণ অর্থাৎ সোডিয়াম আমরা পেয়ে যাই রান্না করা খাবার থেকেই। পানীয়ে বাড়তি লবণ মিশিয়ে আপনি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সোডিয়াম গ্রহণ করলে আপনার উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়বে। বাড়বে কিডনির রোগের ঝুঁকিও। লবণ বা বিট লবণের মতোই অন্য যেকোনো লবণের বেলায় এ কথা প্রযোজ্য। বুঝতেই পারছেন, বাড়িতে বানানো হলেও শরবত আপনার কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে যখন শরীর থেকে প্রয়োজনীয় সোডিয়াম বেরিয়ে যায়, তখন লবণ মেশানো পানীয় আপনার কিডনির উপকার করে। যেমন গরমের সময় অতিরিক্ত ঘাম হলে আপনি সামান্য লবণ মেশানো পানীয়ে উপকার পাবেন। এমনিতে ফলের রস খেতে চাইলে চিনি–লবণ ছাড়াই খাবেন।

আরও পড়ুনআপনার কিডনি কি সুস্থ আছে১৩ মার্চ ২০২৫

ওরস্যালাইন, ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক, স্পোর্টস ড্রিংক ও গ্লুকোজ

এসব পানীয় নির্দিষ্ট পরিস্থিতির জন্য তৈরি করা হয়, যেমন ওরস্যালাইন বা ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকে যে সোডিয়াম থাকে, সুস্থ–স্বাভাবিক অবস্থায় তা নিয়মিত গ্রহণ করলে আপনার জন্য অতিরিক্ত হয়ে দাঁড়াবে। অতিরিক্ত ঘাম হলে আবার ওরস্যালাইন বা ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক থেকে উপকার পাবেন। স্পোর্টস ড্রিংকের উপাদানগুলোও অ্যাথলেটিকস বা অন্যান্য খেলাধুলার সময়ই প্রয়োজন হয়। খেলাধুলার মতো শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া এসব স্পোর্টস ড্রিংক গ্রহণ থেকেও বিরত থাকুন। আবার যখন আপনি পর্যাপ্ত খাবার খেতে পারছেন না কিংবা যখন অন্য কোনো কারণে আপনার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেছে, তখন গ্লুকোজের পানিতে আপনার জীবন বাঁচতে পারে। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়মিত গ্লুকোজের পানি গ্রহণ করলে আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাবে। একসময় এই কারণে ঝুঁকিতে পড়বে আপনার কিডনি। আরও মনে রাখবেন, ডায়রিয়ার সমস্যায় স্যালাইন খাওয়া প্রয়োজন। গ্লুকোজের পানি কিন্তু স্যালাইন নয়।

অ্যালকোহল

অ্যালকোহলজাতীয় পানীয় দেহের বহু ক্ষতির জন্য দায়ী। এসব পানীয় সেবনের ফলে কিডনির কার্যক্ষমতাও ধীরে ধীরে কমে আসে। এ ধরনের পানীয় যেকোনো অবস্থাতেই বর্জনীয়।

আরও পড়ুনএই ৭ বদভ্যাসে আপনার কিডনি হতে পারে বিকল১৪ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ রহণ করল স য ল ইন উপ দ ন উপক র

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ