কোন পানীয় কখন আপনার কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
Published: 28th, April 2025 GMT
পানীয় সুস্বাদু করে তুলতে লবণ কিংবা চিনির মতো উপাদান মেশানো হয়। দীর্ঘদিন এসব উপাদান গ্রহণ করার কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাজারে এমন অনেক পানীয় পাওয়া যায়, যা সংরক্ষণের সুবিধার্থে কিংবা আকর্ষণীয় রঙের জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক মেশানো হয়। এসবের প্রভাবেও কিডনির ক্ষতি হয়। এমনটাই বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কিডনি রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.
তোফায়েল আহম্মদ।
কোমল পানীয়
কোমল পানীয় কারও জন্যই স্বাস্থ্যকর নয়। এতে মেশানো চিনির কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ে। এভাবে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘদিন রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত থাকলে কিডনির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিডনির কার্যক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়। প্রায়ই গ্রহণ করলে এনার্জি ড্রিংকও কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
প্যাকেটজাত জুস
জুস সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক যোগ করে প্যাকেটজাত করা হয়। চিনি ও অন্যান্য রাসায়নিক থাকার কারণে এসব জুস স্বাস্থ্যকর নয়। প্রায়ই যদি কেউ এ ধরনের পানীয় খান, তাহলে এসবের কারণে তাঁর কিডনির রোগের ঝুঁকি বাড়বে।
আরও পড়ুনকিডনি ভালো রাখবে সকালের এই ৫ অভ্যাস০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫শরবত
সাধারণত শরবতে চিনি, লবণ বা বিট লবণের মতো উপাদান যোগ করা হয়। চিনি তো ক্ষতিকর বটেই, যেকোনো ধরনের লবণ অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। লবণ নিঃসন্দেহেই দেহের জন্য উপকারী, তবে তা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায়। রোজকার প্রয়োজনীয় লবণ অর্থাৎ সোডিয়াম আমরা পেয়ে যাই রান্না করা খাবার থেকেই। পানীয়ে বাড়তি লবণ মিশিয়ে আপনি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সোডিয়াম গ্রহণ করলে আপনার উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়বে। বাড়বে কিডনির রোগের ঝুঁকিও। লবণ বা বিট লবণের মতোই অন্য যেকোনো লবণের বেলায় এ কথা প্রযোজ্য। বুঝতেই পারছেন, বাড়িতে বানানো হলেও শরবত আপনার কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে যখন শরীর থেকে প্রয়োজনীয় সোডিয়াম বেরিয়ে যায়, তখন লবণ মেশানো পানীয় আপনার কিডনির উপকার করে। যেমন গরমের সময় অতিরিক্ত ঘাম হলে আপনি সামান্য লবণ মেশানো পানীয়ে উপকার পাবেন। এমনিতে ফলের রস খেতে চাইলে চিনি–লবণ ছাড়াই খাবেন।
আরও পড়ুনআপনার কিডনি কি সুস্থ আছে১৩ মার্চ ২০২৫ওরস্যালাইন, ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক, স্পোর্টস ড্রিংক ও গ্লুকোজ
এসব পানীয় নির্দিষ্ট পরিস্থিতির জন্য তৈরি করা হয়, যেমন ওরস্যালাইন বা ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকে যে সোডিয়াম থাকে, সুস্থ–স্বাভাবিক অবস্থায় তা নিয়মিত গ্রহণ করলে আপনার জন্য অতিরিক্ত হয়ে দাঁড়াবে। অতিরিক্ত ঘাম হলে আবার ওরস্যালাইন বা ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক থেকে উপকার পাবেন। স্পোর্টস ড্রিংকের উপাদানগুলোও অ্যাথলেটিকস বা অন্যান্য খেলাধুলার সময়ই প্রয়োজন হয়। খেলাধুলার মতো শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া এসব স্পোর্টস ড্রিংক গ্রহণ থেকেও বিরত থাকুন। আবার যখন আপনি পর্যাপ্ত খাবার খেতে পারছেন না কিংবা যখন অন্য কোনো কারণে আপনার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেছে, তখন গ্লুকোজের পানিতে আপনার জীবন বাঁচতে পারে। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়মিত গ্লুকোজের পানি গ্রহণ করলে আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাবে। একসময় এই কারণে ঝুঁকিতে পড়বে আপনার কিডনি। আরও মনে রাখবেন, ডায়রিয়ার সমস্যায় স্যালাইন খাওয়া প্রয়োজন। গ্লুকোজের পানি কিন্তু স্যালাইন নয়।
অ্যালকোহল
অ্যালকোহলজাতীয় পানীয় দেহের বহু ক্ষতির জন্য দায়ী। এসব পানীয় সেবনের ফলে কিডনির কার্যক্ষমতাও ধীরে ধীরে কমে আসে। এ ধরনের পানীয় যেকোনো অবস্থাতেই বর্জনীয়।
আরও পড়ুনএই ৭ বদভ্যাসে আপনার কিডনি হতে পারে বিকল১৪ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ রহণ করল স য ল ইন উপ দ ন উপক র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।