ন্যায়বিচারের জন্য কিছুটা অপেক্ষা করতে হতে পারে: ধর্ষণ প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা
Published: 28th, April 2025 GMT
জুলাই গণআন্দোলনে শহীদের মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা এবং মাগুরার সেই শিশুটিকে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘আপনাদের মতো আমিও শোকাচ্ছন্ন। কিন্তু ন্যায়বিচারের জন্য আমাদের কিছুটা অপেক্ষা করতে হতে পারে। নরপশু ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর।’
রোববার রাত ১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এ কথা বলেন তিনি।
স্ট্যাটাসে আসিফ নজরুল লেখেন, ‘জুলাই গণআন্দোলনে একজন শহীদের মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পটুয়াখালীর দুমকিতে গ্রামের বাড়িতে বাবার পাশে তাকে দাফন করা হয়েছে। এই গভীর বেদনাময় ঘটনা আমাদের স্তদ্ধ করেছে। আমরা যত দ্রুত সম্ভব এর বিচার করব। এই পৈশাচিক ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে এবং বন্দি আছে (তাদের জামিনের খবরটি ভুল)। তাদের ডিএনএ স্যাম্পল নেওয়া হয়েছে। পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে খোঁজ নিয়েছি। তারা অল্প কয়েকদিনের মধ্যে চার্জশিট দেবে। এরপরই বিচার শুরু হবে, সংশোধিত আইন অনুসারে বিচার শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে রায় প্রদান করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে ডিএনএ স্যাম্পল অনুকূলে থাকলে এর অনেক আগেই বিচার শেষ হওয়ার কথা।’
মাগুরায় সেই শিশু ধর্ষণের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা লেখেন, ‘মাগুরায় ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের চার্জশিট পাওয়ার পর গত বুধবার বিচার শুরু হয়েছে। ডিএনএ স্যাম্পল ও ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি থাকার কারণে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলাম যে বিচারকাজ শুরু হওয়ার ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন হবে। আশা করি এর ব্যত্যয় হবে না।’
তিনি আরও লেখেন, ‘বিচারকাজে দু’চারদিন দেরি হলে আপনাদের কষ্ট হয়। সেটা বোধগম্য। কিন্তু বিচার যদি ঠিকমতো না হয়, তাহলে উচ্চ আদালতে আপিলে গেলে রায়টা টিকবে না। এটা যদি হয়, এর চেয়ে শোচনীয় আর কিছুই হতে পারে না। আপনাদের মতো আমিও শোকাচ্ছন্ন, কিন্তু ন্যায়বিচারের জন্য আমাদের কিছুটা অপেক্ষা করতে হতে পারে। নরপশু ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।