বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) আয়োজনে দক্ষিণ এশীয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের (সাইথ এশিয়ান টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরস কাউন্সিল) অংশগ্রহণে ঢাকায় শুরু হয়েছে পলিসি, রেগুলেশন ও সেবা সংক্রান্ত তিন দিনব্যাপী কর্মশালা।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) এই কর্মশালার উদ্বোধন হয়। চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত কর্মশালায় আয়োজক বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান, মালদ্বীপ এবং ইরান এর টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক রেগুলেটরি সংস্থার প্রতিনিধি, টেলিকম অপারেটর, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের প্রায় ২০০ প্রতিনিধি অংশ নেন।

এশিয়া প্যাসিফিক টেলিকমিউনিটির (এপিটি) সহযোগী সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে অংশগ্রহণ করে চায়নার হুআইয়ে টেকনোলজিস, অ্যামাজন ইন্ডিয়া, সিংগাপুরের ইন্টারনেট সোসাইটি এশিয়া লিমিটেড এবং বেলজিয়ামের কুলেন ইন্টারন্যাশনাল।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.

) মো. এমদাদ উল বারীর সভাপতিত্বে কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে এশিয়া-প্যাসিফিক টেলিকমিউনিটির মহাসচিব মাসানরি কুন্ড এবং পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন অথরিটির সদস্য ও এসএটিআরসি ওয়ার্কশপ অন পলিসি, রেগুলেশন অ্যান্ড সার্ভিসেসের সভাপতি ড. খাওয়ার সিদ্দিক খোকার উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, “প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশই প্রায় একই ধরনের সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। টেলিকম শিল্পেও ব্যাপক পরিবর্তন আসছে এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের জন্য আমাদের মানসম্মত গ্রাহক সেবা ও ডিজিটাল সার্ভিস নিশ্চিতে কাজ করতে হবে, এক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বের চেয়ে দক্ষিণ এশিয়ার রেগুলেটরি চ্যলেঞ্জ সবচেয়ে বেশি।”

তিনি বলেন, “ডিজিটাল রূপান্তরে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব বিষয় চিহ্নত করে আমাদের সুযোগ গুলো খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য সবাই মিলে একটি উত্তম নীতি প্রণয়নের বিকল্প নেই।”

তিনি বলেন, “আমরা টেলিকমিউনিকেশন এবং নগর ব্যবস্থাপনার নীতিমালার মাধ্যমে এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই, যেখানে কেউ যেন পিছিয়ে না পড়ে। একই সঙ্গে, আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা একটি বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের অংশ, তাই আমাদের বৈশ্বিক লক্ষ্যগুলোর প্রতিও দায়বদ্ধ থাকতে হবে-বিশেষত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোর (এসডিজি) প্রতি। আমাদের এমনভাবে অবদান রাখতে হবে যেন আমরা একটি শিল্প গড়ে তুলতে পারি যা নিশ্চিত করে:শূন্য কার্বন নির্গমন, শূন্য দূষণ এবং শূন্য বেকারত্ব। এই "থ্রি-জিরো" ধারণা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সবসময় প্রচার করেন, যেখানে তিনি এমন একটি পৃথিবীর স্বপ্ন দেখান। এই ধারণাগুলোই প্রযুক্তিকে এমন এক পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে, যা আমাদের সমাজে এবং বৈশ্বিক সমাজেও বাস্তব ও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।”

এশিয়া-প্যাসিফিক টেলিকমিউনিটির মহাসচিব মাসানরি কুন্ডু বলেন, “কর্মশালার উদ্দেশ্য হলো সদস্য দেশসমূহের মধ্যে অন্তর্দৃষ্টি, অভিজ্ঞতা ও সর্বোত্তম অনুশীলন ভাগ করে নেওয়া। এর মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের মধ্যে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সুযোগ এবং সম্ভাব্য অগ্রগতির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত উঠে আসবে, যা সদস্য দেশসমূহের রেগুলেটরি ও পলিসি প্রণয়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।”

সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য তিনি বিটিআরসিকে ধন্যবাদ জানান।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারীবলেন, “এই অঞ্চলের দেশসমূহ ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নত করা ও ভোক্তা সুরক্ষা জোরদারের পাশাপাশি ফাইভজি, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংগস এর মত প্রযুক্তি গ্রহণ করছে। এসব পদক্ষেপগুলো বিচ্ছিন্নভাবে না নিয়ে একটি পারস্পরিক আঞ্চলিক সমন্বয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করা হলে তা জাতীয় অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।”

তিনি বলেন, “প্রতিবেশি অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও মোবাইল কাভারেজ সম্প্রসারণ, পরিষেবা ডিজিটালাইজেশন এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করেছে।”

তিন দিনব্যাপী কর্মশালার প্রথম দিনের বিভিন্ন সেশনে ভবিষ্যৎ উদীয়মান প্রযুক্তির যুগে ফিক্সড এবং মোবাইল ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির জন্য ইউনিভার্সেল সার্ভিস রেগুলেশন তহবিলের যথাযথ ব্যবহার, ‍সুপারিশ, কৌশল ও প্রভাব এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য আইসিটি ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়।

দ্বিতীয় দিনে ডিজিটাল গ্রাহকদের সুরক্ষা: অনলাইন স্ক্যাম এবং আর্থিক জালিয়াতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা; ভবিষ্যতের ট্যারিফ নীতিমালা গঠন: দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে কানভার্জেন্স এবং উদীয়মান টেলিযোগাযোগ/আইসিটি পরিষেবার প্রভাব বিশ্লেষণ ; স্মার্ট সিটি এবং সোসাইটি: আইওটি, বিগ ডেটা এবং অনুরূপ প্রযুক্তি স্থাপনে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলিতে অভিজ্ঞতা এবং কেস স্টাডিজ বিষয়ে বিভিন্ন সেশনে বিশেষজ্ঞগণ মতামত প্রদান করবেন। তৃতীয় দিনে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে নেট নিরপেক্ষতা: চ্যালেঞ্জ, সুযোগ এবং নীতি নির্দেশনা; দক্ষিণ এশীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের আওতায় থাকা দেশগুলিতে ডিজিটাল রূপান্তর বিষয়ে আলোচনা হবে।

১৯৯৭ সালে দক্ষিণ এশিয়ার টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে সাউথ এশিয়ান টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কাউন্সিল (SATRC) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংস্থা বেতার তরঙ্গ সমন্বয়, স্টান্ডার্ডাইজেশন, রেগুলেটরি প্রবণতা, টেলিযোগাযোগ খাত উন্নয়নের কৌশল এবং টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত আঞ্চলিক সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী সম্পর্কে কর্মকৌশল নির্ধারণ করে থাকে। সদস্য দেশগুলোর স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে প্রতি বছর এ কাউন্সিলের সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মশালা ও সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ট আরস র জন য আম দ র গ রহণ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ