জুলাই আন্দোলনে হামলা মামলার আসামিও হলেন বাদী
Published: 29th, April 2025 GMT
গত বছরের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে হামলার অভিযোগে করা একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে তাঁকে। তিনিই আবার ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। তাঁর নাম কফিল উদ্দিন। পুলিশ জানায়, অস্ত্র, মাদক আইনে তিনটি মামলা রয়েছে কফিলের বিরুদ্ধে।
শুধু কফিল নন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হামলার অভিযোগে করা মামলার অন্তত ২০ জন বাদীর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। নানা ত্রুটিতে ভরা তাঁদের দায়ের করা মামলার এজাহার। অনেক আসামিকে চেনেন না স্বয়ং বাদী। মামলা থেকে বাদ যাননি চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকা লোকজনও।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় চট্টগ্রামে মামলা হয়েছে ১৪৮টি। এসব মামলায় ঢালাও আসামি করার অভিযোগ ওঠে শুরু থেকেই। তদন্ত চলা অবস্থায় একের পর এক আসামির নাম বাদ দিতে বাদীরা আদালতে আবেদন শুরু করেন। হলফনামা দিয়ে বাদীরা বলছেন ‘ভুলবশত’ আসামি করা হয়েছে। আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৪০ মামলা থেকে ৬৭৫ জন আসামির নাম বাদ দিতে আদালতে গেছেন বাদীরা। এ জন্য তাঁরা ৩৫৪টি আবেদন ও হলফনামা দিয়েছেন।
কফিল উদ্দিন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক উপঅর্থবিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরীর অনুসারী। গত বছরের ১০ নভেম্বর কোতোয়ালি থানায় ২৭৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন মো.
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে চট্টগ্রামে হামলা, হামলার পরিকল্পনা ও হামলার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ১৮৭ জনের বিরুদ্ধে ১৯ নভেম্বর মামলা করেন সেই কফিল উদ্দিন। সেখানে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী রাইয়ানকে আসামি করেন। কফিল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সরকারের অত্যাচারের প্রতিবাদ করেছেন। কোনো সুবিধার জন্য মামলা করেননি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত বছরের ১৮ জুলাই নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় গুলিতে আহত হওয়ার পর মারা যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া। ওই ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ ৭০০ জনের বিরুদ্ধে ২০ সেপ্টেম্বর মামলা হয়েছে। তবে যিনি এই মামলার বাদী তাঁর নিজের বিরুদ্ধেই মাদক, মারামারি, এবং পরিবেশ আইনে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে কমপক্ষে পাঁচটি মামলা রয়েছে। নিহত হৃদয় চন্দ্র ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না বাদী আজিজুল হকের। হৃদয় পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ঘটকের আন্দুয়া গ্রামের রতন চন্দ্র তরুয়া ও অর্চনা রানীর ছেলে।
জুলাই আন্দোলনের সময় অস্ত্র হাতে হামলাকারীরা। চট্টগ্রামের আসকারদীঘির পাড়েউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।