জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা প্রায় সাত বিঘা আয়তনের একটি পুকুরে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করে আসছেন। এ থেকে পাওয়া আয়ে তাঁদের সংসার চলে; গুচ্ছগ্রামের একমাত্র মসজিদ পরিচালনার ব্যয়ভারও বহন করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি স্থানীয় ১১ জন প্রভাবশালী পুকুরটির মালিকানা দাবি করে সেখানে মাছ চাষে বাধা দিচ্ছেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

গুচ্ছগ্রামের লোকজনের দাবি, পুকুরটি খাস খতিয়ানভুক্ত। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে পুকুরটি নিজেদের বলে দাবি করছেন। পুকুরের দখল না ছাড়লে লাশ পড়বে বলেও তাঁদের হুমকি দিয়েছেন। পুকুর নিয়ে ‘যন্ত্রণায়’ আছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

রায়কালী গুচ্ছগ্রাম ভূমিহীন সমবায় সমিতির সদস্য আবদুল আলীম বলেন, ১৯৮৮ সালে গুচ্ছগ্রামটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় ১৯টি ভূমিহীন পরিবারকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং ২৪৪ শতক আয়তনের একটি খাস খতিয়ানভুক্ত পুকুর বন্দোবস্ত দেওয়া হয় মাছ চাষের জন্য। বর্তমানে সেখানে তিন শতাধিক মানুষ বাস করছেন। পুকুর থেকে আয় করা অর্থের একটি অংশ মসজিদের খরচে ব্যয় করা হয়।

আবদুল আলীম অভিযোগ করেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে এলাকার প্রভাবশালী মোজাহার আলী, মতিউর রহমান, আফের আলীসহ ১১ জন পুকুরটি নিজেদের দাবি করে মাছ চাষে বাধা দিচ্ছেন। তাঁরা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে পুকুরের মালিকানা দাবি করছেন এবং হুমকি দিচ্ছেন।

সমিতির সভাপতি রায়হান আলী সরদার বলেন, ‘আমাদের পুকুরটি ২৪৪ শতক। কিন্তু তাঁরা এখন এটিকে ৩৪৪ শতক দেখিয়ে মালিকানা দাবি করছেন। আমাদের গুচ্ছগ্রামের একজন বেঁচে থাকা পর্যন্ত পুকুর ছাড়ব না।’

অন্যদিকে মালিকানা দাবিদার রায়কালী গ্রামের বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন, ‘পুকুরটিতে আমার মালিকানা রয়েছে। আমি সেখানে মাছ চাষ করতাম। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় আমাকে সেখান থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। এ নিয়ে মামলা চলছে।’

আক্কেলপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানা বলেন, পুকুরটি রায়কালী গুচ্ছগ্রামের দখলে আছে। এটি আগে এমআরআরসি হিসাবে খাসজমি ছিল। এখন ৭৬ শতক খাস রয়েছে। কীভাবে বাকি অংশ খাস থেকে বাদ পড়ল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলেন, গুচ্ছগ্রামে ভূমিহীন লোকজন বাস করেন। তাঁদের জীবনমান উন্নয়নে খাস পুকুরগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক

জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।

গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’

২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।

থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।

জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
  • মৎস্য অধিদপ্তরের দশম গ্রেডের মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ