কারাগারে কয়েদির মৃত্যু, ১৩ ঘণ্টা পর জানানো হলো পরিবারকে
Published: 30th, April 2025 GMT
নরসিংদী জেলা কারাগারে রোকন মিয়া (৩৫) নামের এক কয়েদির মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে স্বজনের দাবি, তাঁকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। রাত ৯টার দিকে রোকনের মৃত্যু হলেও ১৩ ঘণ্টা পর সকাল ১০টায় তাঁর স্বজনকে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে স্বজন ও এলাকাবাসী নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভিড় করেন। নিহত রোকন মিয়া নরসিংদী সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
স্বজনের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাত ৯টায় রোকন মারা যান। অথচ পরিবারকে জানানো হয়েছে পরদিন বুধবার সকাল ১০টায়। সে অসুস্থ হয়ে পড়লেও পরিবার ও স্বজনকে জানানো হয়নি। এমনকি মৃত্যুর ১৩ ঘণ্টা পর জানানোর কারণ জিজ্ঞাসা করলে কারা কর্তৃপক্ষ বলে, তাদের ভুল হয়েছে। তাঁকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্বজন।
নরসিংদী জেলা কারাগারের জেল সুপার শামীম ইকবাল বলেন, ২০২৩ সালের একটি মাদক মামলায় তিনি কারাগারে ছিলেন। মঙ্গলবার রাতে রোকন নামে ওই কয়েদি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ডায়াবেটিস বা মাদকাসক্তের কোনো কারণে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।
তিনি বলেন, নিহতের স্বজন অভিযোগ করতেই পারে। কারাগারে এতগুলো মানুষ থাকে, এখানে কাউকে মেরে ফেলার ঘটনা কারাগারের ইতিহাসে কোনো দিনই ছিল না। এটা মানুষের একটি ভ্রান্ত ধারণা।
নরসিংদীর সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট রাফিউর রহমান বলেন, হাসপাতালের প্রতিবেদনে পরিষ্কার বলা আছে, তাঁকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, সে মৃত ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে মৃত অবস্থায় পেয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।
পুলিশ জানায়, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।