বাহাত্তরের সংবিধান ইস্যুতে বিএনপির অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার। বিএনপি জিয়াউর রহমানের অনুসারী নাকি বিরোধী, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘গণ–অভ্যুত্থান: রাষ্ট্রগঠন ও আমাদের দায়’ শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক হিসেবে ফরহাদ মজহার এসব প্রশ্ন তোলেন।

ভাববৈঠকি নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আওয়ামী প্রপাগান্ডা করল, এমনকি বিএনপি শুরু করল, তাঁরা (ছাত্ররা) একাত্তরকে অস্বীকার করতেছে। না, এটা কখনোই নয়। তাঁরা একাত্তরকে পুনরায় ধারণ করছে। এক গৌরবকে হরণ করার জন্য বাহাত্তরের সংবিধান চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন বিএনপির পজিশন (অবস্থান) খেয়াল করুন। এরা কি জিয়াউর রহমানের অনুসারী নাকি জিয়াউর রহমানের বিরোধী? আমাকে খারাপভাবে নেবেন না, আমি খুব ঘনিষ্ঠভাবে বিএনপির হামলা, মামলা, নির্যাতনের পক্ষে থেকেছি। আপনারা অনেকেই জানেন, আমি বেগম খালেদা জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। কিন্তু এরা কী বলছে! একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন জিয়াউর রহমান। কী জন্য করেছেন—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য। আর বিএনপি বলছে, না, বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল করা যাবে না। কেন? আমরা তো এ জন্য যুদ্ধ করিনি। কাজেই দেখতে পাচ্ছেন ইতিহাসপাঠ কত দুর্বল।’

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হলেই আপনাকে রাজনৈতিক দল বলে স্বীকার করতে আমরা বাধ্য নই। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ শেখ হাসিনার অধীনে হয়েছে, ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে হয়েছে। তাই ওই বিধান বাদ দিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক দলে নিবন্ধন নিতে হবে।ফরহাদ মজহার, কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক

আওয়ামী লীগের চাপিয়ে দেওয়া সংবিধান বাতিল চাওয়ায় ছাত্রদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এসে দিল্লির প্ররোচনায় আমাদের ওপর চাপিয়ে দিল কী—ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ। এটা কিন্তু আমাদের দাবি কিছু না। এই যে চাপিয়ে দেওয়া সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এক হলে এটাকে বলে ফ্যাসিবাদ। মুসোলিনি এটাতে বিশ্বাস করতেন, হিটলার এটাতে বিশ্বাস করতেন। ফলে জেনেশুনে একটি ফ্যাসিস্ট সংবিধান আমাদের চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫০টা বছর লেগেছে লড়াই করে এটাকে সামনে আনতে। গণ–অভ্যুত্থানের পরেও এই সংবিধান থেকে আমরা মুক্ত হতে পারছি না। আমরা লড়াইটা করলাম, তরুণরা (ছাত্র) যখন বলল, আমরা এই সংবিধান বাতিল চাই, আমাদের, ছাত্রদের বলা হলো আমরা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী। তা তো না। বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল করাটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।’

গণ–অভ্যুত্থানের পরে ‘প্রোক্লেমেশন’ ঘোষণা না হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘কী কী করতে দেন নাই ড.

ইউনূস। প্রোক্লেমেশন করতে দেন নাই। এত বড় গণ–অভ্যুত্থানের পরে তিনি আমাদের একটা ঘোষণা করতে দেন নাই। এটা ঠিক না। দেখেন, বিনয়ের সঙ্গে বারবার বলছি, আবার বলছি, অবশ্যই ঘোষণা দিতে হবে। এটা তথাকথিত কোনো জাতীয় ঘোষণা হতে পারে না। কারণ, আপনি কেন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে তারা কিসে একমত হবে তারপরে ঘোষণা দেবেন? কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে গণ–অভ্যুত্থান ঘটে নাই।’

আরও পড়ুনযে পন্থীই হোন না কেন, একাত্তর আমার ইতিহাসের অংশ: ফরহাদ মজহার৮ ঘণ্টা আগে

বিএনপি দল হিসেবে নয়, জনগণ হিসেবে গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেল বলে মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘বিএনপি এসে বলছে, আমরা কী অংশগ্রহণ করি নাই? হ্যাঁ, আপনারা অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু দল আকারে করেন নাই। “জনগণ” আকারে করেছেন। ফলে রাজনৈতিক দল আকারে আপনারা কোনো বিশেষ প্রিভিলেজ (সুবিধা) পেতে পারেন না।’

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমরা যে নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে চাচ্ছি, সেখানে রাজনৈতিক দল বলতে কী বুঝি এটাকে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। আপনি শেখ হাসিনার গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের অধীনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হলেই আপনাকে রাজনৈতিক দল বলে স্বীকার করতে আমরা বাধ্য নই। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ শেখ হাসিনার অধীনে হয়েছে, ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে হয়েছে। তাই ওই বিধান বাদ দিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক দলে নিবন্ধন নিতে হবে।’

কবি ও রাজনীতিক চিনু কবিরের সভাপতিত্বে মঞ্চে অন্যদের মধ্যে লেখক মাহবুব সিদ্দিকী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ইলিয়াস প্রামানিক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়কারী রায়হান কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কনক রহমান।

আরও পড়ুনড. ইউনূস গণ–অভ্যুত্থানের ফসল, নেতা নন: ফরহাদ মজহার২৮ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফরহ দ মজহ র কর ছ ন ন বন ধ আম দ র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ