বিএনপি কি জিয়াউর রহমানের অনুসারী নাকি বিরোধী, প্রশ্ন ফরহাদ মজহারের
Published: 1st, May 2025 GMT
বাহাত্তরের সংবিধান ইস্যুতে বিএনপির অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার। বিএনপি জিয়াউর রহমানের অনুসারী নাকি বিরোধী, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘গণ–অভ্যুত্থান: রাষ্ট্রগঠন ও আমাদের দায়’ শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক হিসেবে ফরহাদ মজহার এসব প্রশ্ন তোলেন।
ভাববৈঠকি নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আওয়ামী প্রপাগান্ডা করল, এমনকি বিএনপি শুরু করল, তাঁরা (ছাত্ররা) একাত্তরকে অস্বীকার করতেছে। না, এটা কখনোই নয়। তাঁরা একাত্তরকে পুনরায় ধারণ করছে। এক গৌরবকে হরণ করার জন্য বাহাত্তরের সংবিধান চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন বিএনপির পজিশন (অবস্থান) খেয়াল করুন। এরা কি জিয়াউর রহমানের অনুসারী নাকি জিয়াউর রহমানের বিরোধী? আমাকে খারাপভাবে নেবেন না, আমি খুব ঘনিষ্ঠভাবে বিএনপির হামলা, মামলা, নির্যাতনের পক্ষে থেকেছি। আপনারা অনেকেই জানেন, আমি বেগম খালেদা জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। কিন্তু এরা কী বলছে! একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন জিয়াউর রহমান। কী জন্য করেছেন—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য। আর বিএনপি বলছে, না, বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল করা যাবে না। কেন? আমরা তো এ জন্য যুদ্ধ করিনি। কাজেই দেখতে পাচ্ছেন ইতিহাসপাঠ কত দুর্বল।’
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হলেই আপনাকে রাজনৈতিক দল বলে স্বীকার করতে আমরা বাধ্য নই। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ শেখ হাসিনার অধীনে হয়েছে, ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে হয়েছে। তাই ওই বিধান বাদ দিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক দলে নিবন্ধন নিতে হবে।ফরহাদ মজহার, কবি ও রাষ্ট্রচিন্তকআওয়ামী লীগের চাপিয়ে দেওয়া সংবিধান বাতিল চাওয়ায় ছাত্রদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এসে দিল্লির প্ররোচনায় আমাদের ওপর চাপিয়ে দিল কী—ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ। এটা কিন্তু আমাদের দাবি কিছু না। এই যে চাপিয়ে দেওয়া সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এক হলে এটাকে বলে ফ্যাসিবাদ। মুসোলিনি এটাতে বিশ্বাস করতেন, হিটলার এটাতে বিশ্বাস করতেন। ফলে জেনেশুনে একটি ফ্যাসিস্ট সংবিধান আমাদের চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫০টা বছর লেগেছে লড়াই করে এটাকে সামনে আনতে। গণ–অভ্যুত্থানের পরেও এই সংবিধান থেকে আমরা মুক্ত হতে পারছি না। আমরা লড়াইটা করলাম, তরুণরা (ছাত্র) যখন বলল, আমরা এই সংবিধান বাতিল চাই, আমাদের, ছাত্রদের বলা হলো আমরা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী। তা তো না। বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল করাটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।’
গণ–অভ্যুত্থানের পরে ‘প্রোক্লেমেশন’ ঘোষণা না হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘কী কী করতে দেন নাই ড.
বিএনপি দল হিসেবে নয়, জনগণ হিসেবে গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেল বলে মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘বিএনপি এসে বলছে, আমরা কী অংশগ্রহণ করি নাই? হ্যাঁ, আপনারা অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু দল আকারে করেন নাই। “জনগণ” আকারে করেছেন। ফলে রাজনৈতিক দল আকারে আপনারা কোনো বিশেষ প্রিভিলেজ (সুবিধা) পেতে পারেন না।’
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমরা যে নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে চাচ্ছি, সেখানে রাজনৈতিক দল বলতে কী বুঝি এটাকে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। আপনি শেখ হাসিনার গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের অধীনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হলেই আপনাকে রাজনৈতিক দল বলে স্বীকার করতে আমরা বাধ্য নই। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ শেখ হাসিনার অধীনে হয়েছে, ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে হয়েছে। তাই ওই বিধান বাদ দিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক দলে নিবন্ধন নিতে হবে।’
কবি ও রাজনীতিক চিনু কবিরের সভাপতিত্বে মঞ্চে অন্যদের মধ্যে লেখক মাহবুব সিদ্দিকী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ইলিয়াস প্রামানিক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়কারী রায়হান কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কনক রহমান।
আরও পড়ুনড. ইউনূস গণ–অভ্যুত্থানের ফসল, নেতা নন: ফরহাদ মজহার২৮ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফরহ দ মজহ র কর ছ ন ন বন ধ আম দ র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় ফুটপাত দখল করে দোকানের পসরা, কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ
বগুড়া শহরের সার্কিট হাউস-কালীবাড়ি মোড় সড়কে সারি সারি ভ্যানে হরেক খাবারের পসরা। পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন শর্মা, মিটবক্স—সবই মিলছে রাস্তার পাশের এসব দোকানে। ক্রেতারা মূলত কিশোর ও তরুণ-তরুণী।
দোকানগুলোতে নেই কোনো আলাদা শেফ। বিক্রেতারাই নিজের হাতে খাবার তৈরি করছেন, পরিবেশনও করছেন। কারও হাতে গ্লাভস নেই, শরীরে নেই অ্যাপ্রোন। বিকেল গড়াতেই এসব ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানে ভিড় জমছে। কোর্ট হাউস স্ট্রিটের পাশেই আছে ‘পিজ অ্যান্ড বার্গ’, ‘পদ্মা ফুডস’ ও ‘হিলিয়াম রেস্টুরেন্ট’-এর মতো নামীদামি খাবারের দোকান। একসময় সন্ধ্যায় এসব প্রতিষ্ঠানে ক্রেতার ঢল নামত। এখন সে ভিড় চলে গেছে রাস্তার পাশে বসা দোকানগুলোর দিকে।
পদ্মা ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদ আহমেদ বলেন, ‘অভিজাত এ এলাকায় একটি খাবারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। অন্তত ১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিতে হয়। এসব নবায়নে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। ভবন ভাড়া, দামি শেফ ও কর্মচারীর বেতন—সব মিলিয়ে খরচ বিপুল। অথচ রাস্তার পাশে ভ্যানে বসা দোকানে বিনিয়োগ মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কোনো সনদ নেই, দোকানভাড়া নেই, কর্মচারীও নেই। শুধু দামে সস্তা বলে ক্রেতারা ঝুঁকছেন ওদিকে। সড়ক দখল করে দোকান বসায় যানজটও বাড়ছে। অভিযোগ করেও প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার মিলছে না।
বগুড়া হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, জলেশ্বরীতলা অভিজাত এলাকা। এখানে দোকান দিতে বিপুল বিনিয়োগ লাগে। নামীদামি দোকানে একটি পিৎজার দাম ৫০০ টাকা হলে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও ক্রেতারা সস্তা পেয়ে সেখান থেকেই কিনছেন। এতে অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো লোকসানে পড়ছে। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, ‘আমরা স্ট্রিট ফুড ব্যবসার বিরোধী নই। তবে সেটা অভিজাত এলাকা থেকে সরিয়ে পৌর পার্ক, অ্যাডওয়ার্ড পার্কসংলগ্ন সড়ক কিংবা সরকারি আজিজুল হক কলেজের পাশের এলাকায় নিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।’
সড়কজুড়ে দোকান, ভোগান্তিতে শহরবাসীসম্প্রতি দেখা যায়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে সড়কের এক পাশে ২০-২৫টি ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসেছে। অন্য পাশে ফলের দোকান। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আদালত প্রাঙ্গণের সামনে যানজট লেগেই থাকে।
এ ছাড়া পৌরসভা লেন, জেলা খানা মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়ক, মহিলা ক্লাব মোড়, শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, সাতমাথা-সার্কিট হাউস সড়কসহ শহরের নানা সড়কেই বসছে ফুচকা, চটপটি, জুস, ফাস্ট ফুড ও ফলের দোকান।
সাতমাথায় প্রতিদিন বসছে অর্ধশতাধিক দোকান। জিলা স্কুলের সামনে চটপটি ও কাবাবের দোকানগুলোর চেয়ার বসানো হয়েছে ফুটপাত দখল করে। কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, থানা মোড়, বড়গোলা, দত্তবাড়ি, কালিতলা—সবখানেই দুই পাশে দোকান।
রাস্তা দখল করে দোকান বসানোয় বেশির ভাগ সময় যানজটে থাকে শহরে। সম্প্রতি তোলা