‘প্রত্যেক বছর বৈশাখ-জষ্ঠি (মে) মাস আসলি গাঙের পানি ফুঁসে ওঠে। ভয়ে বুক ধড়ফড়ানি শুরু হয়। 
বাঁধ ভাইঙে ঘরবড়ি, জমি-জায়গা ভাসায়ে নে গেলে কী করব, ছাওয়াল-মাইয়ে নে কনে থাকব, খাবো কী? এসব চিন্তায় ঘুম আসে না, ছটফট কইরে বেড়াতি হয়।’
কথাগুলো খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ পারের হরিণখোলা গ্রামের আমিরন নেছার। 
দুর্যোগে ভিটেমাটি হারিয়ে পরিবার নিয়ে বাঁধের ঢালে বাস করছেন। 
২০০৯ সালের ২৫ মে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইলার পর থেকে যত দুর্যোগ এসেছে সব বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ অর্থাৎ মে মাসে। এ কারণে এ সময়টিতে আমিরন নেছার মতো বাঁধের ঢালের বাসিন্দাদের বুকের ধড়ফড়ানি বেড়ে যায়। 
এ গ্রামের রবিউল শেখ, ইসমাইল শেখ, ফরিদা খাতুন, সাবিনা খাতুনসহ কয়েকজন জানান, আইলার পর থেকে প্রতি বছর নদীভাঙনের কবলে পড়তে হয়েছে তাদের। বেশির ভাগ মানুষ ফসলি জমি, বসতবাড়ি হারিয়েছেন। আশ্রয় নেওয়া বাঁধের জায়গা ভাঙতে ভাঙতে সরু হয়ে গেছে। 
দশহালিয়া গ্রামের দীনবন্ধু মিস্ত্রি বলেন, ‘গতবার মে মাসে রেমালের ভয়ে ঘর ছাড়তি হয়েছিল। বাঁধ না ভাঙলেও উপচে পানি ঢুকেছিল। দিন-রাত সবার চেষ্টায় কোনো রকমে রক্ষে পাইছি। শুনতিছি এবার গাঙের পানি আরও বাড়বে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড–পাউবো সূত্র জানিয়েছে, খুলনার কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলার পাউবোর বেড়িবাঁধ রয়েছে ৬৩০ কিলোমিটার। কয়রায় ১৩২, পাইকগাছায় ১৯০ ও দাকোপে ৩০৮ কিলোমিটার। কয়েক বছরে সংস্কার না হওয়ায় মাটি ধসে গিয়ে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ৪০ কিলোমিটার বাঁধ। ৯ কিলোমিটার বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়রার দুটি পোল্ডারের ৮টি স্থানে ৪ হাজার ১২০ মিটার, পাইকগাছার ৬ স্থানে ৩ হাজার ৪৪৫ মিটার ও দাকোপের ৮ স্থানে ৮৪৫ মিটার বাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বাঁধ মেরামতে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া তালিকার বাইরে নতুন নির্মাণ করা বাঁধের অনেক স্থান ধসে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। 
কয়রার ১৪/১ নম্বর পোল্ডারে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় ১২শ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩২ কিলোমিটার বাঁধ পুনঃনির্মাণের কাজ চলমান। এ প্রকল্পে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুরু থেকে ধীরগতিতে কাজ করে আসছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ২০ শতাংশ। এক বছর সময় বাড়ানোর পরও অগ্রগতি ২৬ শতাংশ। অর্থাৎ গত চার মাসে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৬ শতাংশ। 
প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, অনেক স্থানে বালুর বস্তা ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে। বাঁধের ওপর বালুর বস্তা স্তূপ করে রাখা। মূল বাঁধের উচ্চতা বাড়ানোর কাজে হাত দেওয়া হয়নি। ওইসব স্থানে পানি ছাপিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। 
প্রকল্প এলাকার গাতিরঘেরি গ্রামের বাসিন্দা শম্ভুনাথ সরকার বলেন, ‘দুই বছর ধইরে দেখতিছি গাঙের কূলে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। ভেড়ির (বাঁধ) ওপর এক চাপ মাটিও ফেলা হয়নি। দুর্যোগের সময় আইসে গেছে। ভয়ে আছি।’
পাইকগাছার ২৩ নম্বর পোল্ডারের বয়ারঝাপা এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধ প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ। ওই গ্রামের কামরুল গাজী বলেন, ‘শীতকালে নদীতে পানি কম থাকে। তখন বাঁধ মেরামতের উপযুক্ত সময়। অথচ সে সময় উদ্যোগ নেওয়া হয় না। এখন দুর্যোগের সময় বাঁধ মেরামতের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। দ্রুত মেরামত না হলি কপালে খারাবি আছে।’ 
দাকোপের শিবসা নদীপারের কালাবগীর এলাকার আশরাফ আলী বলেন, ‘ছোট কয়েকটি জায়গায় দ্রুত মেরামত কাজ করা হলি গ্রামবাসী আপাতত রক্ষা পাবে। না হলি এই ছোট জায়গা বড় ক্ষতির কারণ হবি।’ 
 উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দীন বলেন, ‘ষাটের দশকে নির্মিত বাঁধগুলো এখন পর্যন্ত পুনঃনির্মাণ করা হয়নি। নিচু ও দুর্বল বাঁধগুলো জোয়ারের পানির চাপ সামলাতে পারছে না। ফলে তা ভেঙে বা উপচে প্রতি বছর এই সময়ে প্লাবিত হয় এলাকা। এসব বিষয় মাথায় রেখে পরিকল্পিতভাবে বাঁধ মেরামতের সঙ্গে নদীগুলোও খনন করা দরকার।’ 
পাউবো খুলনা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, বিভিন্ন পোল্ডারে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ চিহ্নিত করে কাজ শুরু হয়েছে। অন্যান্য স্থানেও জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা হবে। 
চলমান প্রকল্পের কাজে ধীরগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় মাটি ও পর্যাপ্ত বালু সরবরাহ 
না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্রুত কাজ এগিয়ে নিতে পারছে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধ ম র মত প রকল প প ইকগ ছ

এছাড়াও পড়ুন:

রাতে ঢাকা আসছেন শোয়েব আখতার

পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার শোয়েব আখতার শনিবার দিবাগত রাতে ঢাকা আসছেন। আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ঢাকা ক‌্যাপিটালসের মেন্টর হিসেবে যুক্ত হয়েছেন তিনি। 

ঢাকা ক্যাপিটালসের সিইও আতিক ফাহাদ রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘‘ঢাকা ক্যাপিটালসের মেন্টর শোয়েব আখতার ১৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর এখানে কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। ১৬ তারিখ তিনি ফিরে যাবেন। পরবর্তীতে আমাদের সঙ্গে আবার যুক্ত হবেন।’’ 

ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬১.৩৭ কিলোমিটার গতির বলের মালিক শোয়েবকে নিয়ে ঢাকা ক্যাপিটালস লিখেছে, ‘‘কৌশলের সঙ্গে গতির মেলবন্ধ। আমাদের মেন্টর- শোয়েব আখতার। গর্জন শুরু হোক!।’’

গত আসর দিয়ে বিপিএলে অভিষেক হয়েছিল ঢাকা ক্যাপিটালসের। প্রথম মৌসুমে মেন্টর হিসেবে তারা সঙ্গে পেয়েছিল পাকিস্তানের অফ স্পিন কিংবদন্তি সাঈদ আজমলকে। এবার নতুন রূপে, নতুন পরিকল্পনায় মেন্টর হিসেবে যুক্ত করেছে ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’ শোয়েবকে। 

২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ শেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান শোয়েব। এরপর চ্যারিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেললেও পেশাদার কোনো টুর্নামেন্টে ৫০ বছর বয়সী সাবেক পাকিস্তানি পেসারকে আর মাঠে দেখা যায়নি। 

খেলার ছাড়ার পর ধারাভাষ্যকার ও নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ম্যাচ বিশ্লেষণ করতে দেখা যায়। 

ঢাকা ক্যাপিটালস তাদের বিপিএল অভিযান শুরু করবে ২৭ ডিসেম্বর সিলেটে। তাদের প্রথম প্রতিপক্ষ রাজশাহী ওয়ারিয়র্স।

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ