বজ্রপাতকে নিয়ন্ত্রিত শক্তিতে পরিণত করতে সক্ষম ড্রোন–প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন জাপানের নিপ্পন টেলিগ্রাফ অ্যান্ড টেলিফোন করপোরেশনের (এনটিটি) বিজ্ঞানীরা। নতুন এ প্রযুক্তির মাধ্যমে বজ্রপাতের সময় সঞ্চিত শক্তিকে গতিশীল ও চুম্বকীয় আকারে রূপান্তরিত করা যায়।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, নতুন এই প্রযুক্তিতে বজ্রপাত–প্রতিরোধী ইউএভি বা মানবহীন আকাশযান ব্যবহার করা হয়েছে। বজ্রপাতের কাছাকাছি উড়ে কন্ডাক্টরের মাধ্যমে বজ্রপাতকে নিরাপদে মাটিতে আকর্ষণ করতে পারে এই ড্রোন, যা বজ্রপাত থেকে মানুষ ও ভবনকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। শুধু তা–ই নয়, প্রয়োজনে সংকুচিত বাতাস ও অন্যান্য চার্জিংয়ের পদ্ধতি ব্যবহার করে বজ্রপাতের শক্তিকে আবার ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণও করা যাবে।
বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা পেতে এরই মধ্যে ড্রোন ব্যবহার করে সফলও হয়েছেন এনটিটির বিজ্ঞানীরা। গবেষণায় দেখা গেছে, বজ্রপাত সুরক্ষা খাঁচার মধ্যে রাখা নতুন প্রযুক্তিনির্ভর ড্রোন বজ্রপাতের গতিপথ পরিবর্তন বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে। নতুন এই প্রযুক্তি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের সঞ্চালনাকে ব্যবহার করে বজ্রপাত থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে রক্ষা করতে পারে।
বর্তমানে প্রতি মিনিটে বিশ্বব্যাপী প্রায় ছয় হাজার বজ্রপাত মাটিতে আঘাত হানে। বজ্রপাতের শক্তি নিয়ন্ত্রণ করে শহর ও অবকাঠামোর ক্ষতি কমানো গেলে নতুন এ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বজ্রপাত সুরক্ষায় বিপ্লব আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর
এছাড়াও পড়ুন:
দুপুর ১টা বাজলেই ছুটির ঘণ্টা
ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১টা পেরোলেই ঢংঢং করে বেজে ওঠে ছুটির ঘণ্টা। খানিক বাদেই স্কুলের শ্রেণিকক্ষগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কোলাহলের পরিবর্তে নেমে আসে সুনসান নীরবতা। এটি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিদিনকার চিত্র।
শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে ক্লাস শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় ছুটি দেওয়ার কথা। কিন্তু হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলে প্রধান শিক্ষকের খেয়ালখুশিমতো। সেখানে নিয়মিতভাবে দুপুর ১টা বাজলেই পড়ে ছুটির ঘণ্টা। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হয় না। শিক্ষকরা
বিদ্যালয়ে এসে ক্লাসে না গিয়ে কার্যালয়ে বসে থাকেন। দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি দিয়ে চলে যান যে যাঁর মতো।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রাহুল হোসেন জানায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাম ডাকে। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে স্কুল ছুটি হয়ে যায়।
নবম শ্রেণির ছাত্রী শাকিলা খাতুনের ভাষ্য, প্রতিদিনই একটা-দুটো ক্লাস নেন শিক্ষকরা। দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি দেওয়া হয়। সামনে পরীক্ষা তবুও অন্যান্য ক্লাস হয় না। একই ভাষ্য ওই শ্রেণির অনন্যা খাতুনেরও।
অভিভাবক মোহাম্মদ আলী বলেন, ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে আগের মতো লেখাপড়া হয় না। শিক্ষকরা সবাই দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।
বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩০ গজ দূরে ব্যবসায়ী আব্দুর রহিমের দোকান। তাঁর মেয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আব্দুর রহিম জানান, স্কুলে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। প্রতিদিন দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি হয়ে যায়। এসব দেখার যেন কেউ নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য হাসানুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ে ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক নানা অনিয়মে জড়িত। স্কুলের বিষয়ে কিছু বলতে গেলে দুর্ব্যবহার করেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি শিগগিরই ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেবেন।
বিদ্যালয়ের পাশেই সহকারী শিক্ষক আবু খোকনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন দুপুর ১টার দিকে বিদ্যালয় ছুটি হয়। এটা প্রধান শিক্ষকের ব্যাপার।’
গত রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী। পরিচ্ছন্নতাকর্মী পতাকা নামাচ্ছেন। শ্রেণিকক্ষগুলোতে তালা ঝুলছে। শিক্ষক কক্ষে শূন্য চেয়ার-টেবিল।
বিকেল ৪টার আগে ছুটি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক আশরাফুল আলম বলেন, ‘ছুটির বিষয়ে হেড স্যারের (প্রধান শিক্ষক) সঙ্গে কথা বলেন।’
এসএসসি পরীক্ষার অজুহাত দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে প্রতিদিন বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার কথা স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক মো. নুর উদ্দিন।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক জানান, বিকেল ৪টার আগে বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।