চট্টগ্রাম মহানগরীর মুরাদপুরে পুলিশের সঙ্গে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার ঢাকা মহানগরীর সাবেক সভাপতি ও গাজীপুরের এক মসজিদের ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ রঈস উদ্দিনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মুরাদপুরে থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়। এতে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় পুলিশ অন্তত ১৫ জনকে আটক করেছে। 

চট্টগ্রাম মহানগরীর মুরাদপুর মোড়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অবরোধ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও তাদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার নেতাকর্মীরা। সকাল ১০টার দিকে তাদেরকে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। জবাবে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

মুরাদপুরে মোড়ে পরিস্থিতি সাময়িক নিয়ন্ত্রণে আসার পর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মূল কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররা মুরাদপুর রেলগেট এলাকায় এসে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় সেনাবাহিনীর একটি দল।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেছেন, পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। 

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মিডিয়া সেলের প্রধান ফরিদুল ইসলাম বলেছেন, “আমাদের দিক থেকে প্রথমে হামলা হয়নি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছিলাম। পুলিশ আমাদেরকে বাধা দিয়েছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। অনেককে আটক করা হয়েছে।” 

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেছেন, সকাল ৯টা থেকে কয়েকশ লোক সড়ক অবরোধ করেছেন। আমরা তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। ঘণ্টাখানেক বোঝানোর পরও তারা মানেননি। তারা রোড ব্লক করবেনই। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয় এবং লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।

ঢাকা/রেজাউল/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রস ন র ন ক ষ প কর ত কর ম স ঘর ষ ইসল ম অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াত নতুন নতুন মত নিয়ে হাজির হয়: মেজর (অব.) হাফিজ

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী জামায়াতে ইসলামী নতুন নতুন মত নিয়ে হাজির হয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ।

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘এই যে দল জামায়াতে ইসলামী, তারা সেদিন বলেছে যে জাতীয় ঘোষণাপত্রে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকে অত্যন্ত গৌরবের সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়নি। তারা ভেবেছে যে বাংলাদেশের মানুষের স্মরণশক্তি খুবই দুর্বল। তারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এখন তারা নতুন নতুন মত নিয়ে হাজির হয়।’

জুলাই ২৪ গণ–অভ্যুত্থানের ‘বর্ষপূর্তিতে দ্রুত বিচার সম্পন্ন, মৌলিক সংস্কার ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে অগ্নিসেনা সোশাল ফাউন্ডেশন ও আমাদের নতুন বাংলাদেশ।

নির্বাচন বিলম্বিত হয় কিংবা নির্বাচন যাতে না হয়, এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা কাম্য নয় উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তবে বিচারের ভার জনগণের কাছে। গণতন্ত্রে প্রত্যেকে নিজেদের বক্তব্য দেওয়ার অধিকার আছে।’

আগামী সংসদ নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় আসবে, তারাই সংস্কার নিয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এত দিন ভোট দিতে পারেনি। কিন্তু কিছু দল ধরে নিয়েছে, নির্বাচন হলে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে, তারা নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে পিআর সিস্টেমের কথা বলে। আমি মনে করি, আগামী নির্বাচন বিদ্যমান পদ্ধতিতে আয়োজন করা উচিত, যাতে মানুষ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে।’

ইভিএম প্রসঙ্গে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, দেশের মানুষ এখনো ইভিএমের সঙ্গেও পরিচিত নয়। জনগণ এখনো সচেতন হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোও এখনো এতটা পরিপক্বতার পরিচয় দিতে পরেনি যে একটি প্রতীকে ভোট দিলে তাদের অবস্থার পরিবর্তন হবে। বরং মানুষ এখনো স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে সব সুখ–দুঃখ নিয়ে হাজির হন।

বর্তমান সরকারের কাছে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ছিল উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, বিগত সময়ে দেশে পুলিশ বাহিনী একটি পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। বাংলাদেশ একটি পুলিশ স্টেটে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু একটি বছর পার হলেও পুলিশ বাহিনীর কোনো সংস্কার করা হয়নি। এই বাহিনী সঠিকভাবে একটি নির্বাচন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে জনগণের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, র‍্যাবকে নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে না, তাহলে এই বাহিনীকে রাখা হলো কেন?

সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবস্থা নিজেই একটি স্বৈরাচারী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার মধ্যে যে–ই ক্ষমতায় যায়, তাকেই স্বৈরাচারী বানিয়ে দেয়।

চব্বিশের অভ্যুত্থান বড় ঘটনা উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে যারা নিজেদের বদলাতে পারবে না, আগামী দিনে তারা আর প্রাসঙ্গিক থাকবে না। নতুন ব্যবস্থার জন্ম এখন একটা অনিবার্য ঘটনা। এটা ঘটতেই হবে। কাজেই নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে যারা নিজেদের পরিবর্তন করতে পারবে, তারাই আগামী দিনে প্রাসঙ্গিক থাকবে।

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়েও এই পুলিশ ও প্রশাসনের তেমন পরিবর্তন হয়নি। বরং বিভিন্ন দলকে ব্যবহার করে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রশাসনে পুনর্বাসিত হচ্ছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজ শেষ হতে সর্বোচ্চ ছয় মাস সময় লাগার কথা। কিন্তু আমরা দেখেছি, বিভিন্ন ধরনের ইস্যু সামনে টেনে নিয়ে আসা হলো। সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে নাকি জাতীয় নির্বাচন আগে। বিচার আগে নাকি নির্বাচন আগে। পর্যায়ক্রমে একেক সময় একেক ইস্যু সামনে আনছে।’

অগ্নিসেনা সোশাল ফাউন্ডেশনের সভাপতি জহিরুল হক সভায় সভাপতিত্ব করেন। আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহসভাপতি গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী, জাতীয় নাগরিক ফোরামে চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ