শাপলা চত্বরের ঘটনা তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি এনসিপি নেতাদের
Published: 6th, May 2025 GMT
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরের ঘটনা তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। পাশাপাশি ওই ঘটনায় নিহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের স্বীকৃতি, দোষীদের কঠোর শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে দলটি।
মঙ্গলবার রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় এসব দাবি জানান এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। ‘শাপলা হত্যাকাণ্ডের এক যুগ: বিচার, সুষ্ঠু তদন্ত, শহীদদের স্বীকৃতি ও ক্ষতিপূরণে রাষ্ট্রের দায়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখা।
সভায় আখতার হোসেন বলেন, ‘এক যুগ পরে এসে আমরা যখন শাপলা গণহত্যার স্মৃতিচারণা করি, তখন দৃশ্যমান হয়ে ওঠে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, তাদের সাংস্কৃতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক দোসররাও এ ঘটনায় সমানভাবে দায়ী। অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাস পেরিয়ে গেলেও শাপলা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কোনো বিচারপ্রক্রিয়া এবং স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।’
এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আওয়ামী লীগ, তাদের দোসর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের স্বাধীন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। যাঁরা শাহাদাত বরণ করেছেন, আহত হয়েছেন; তাঁদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির আওতায় আনা হোক। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।
শাপলা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সমাবেশের আয়োজকদের প্রশ্নের মুখোমুখি করার দাবি জানান এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। তিনি বলেন, ‘সেদিনের সমাবেশ ঘিরে আয়োজক হেফাজতে ইসলাম এবং তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে রাজনৈতিক আলাপ ছিল। সেই আলাপ কেন বাস্তবায়ন হয়নি? নিরীহ মাদ্রাসার ছাত্রদের সমাবেশে আনা হয়েছে কোনো রকম রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি ছাড়া। রাজনৈতিক এই ভুল সিদ্ধান্ত শত শত মানুষকে হত্যার মুখোমুখি করেছে।’
শাপলা গণহত্যার ঘটনায় বিশিষ্ট নাগরিকের বেশে যাঁরা সম্মতি উৎপাদন করেছেন, তাঁদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান আরিফুল ইসলাম আদীব।
২০১৩ সালের ৫ মে থেকে চব্বিশের জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পিওর (নিখুঁত) সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। তাই এ দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার আর অধিকার নেই। করতে হলে তাদের আগে প্রমাণ করতে হবে যে তারা রাজনৈতিক দল।’
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নেই বলেও মন্তব্য করেন সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, যাঁরা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে নেওয়ার ফন্দি করছেন, তাঁরা আসলে বাংলাদেশকে আবারও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সদস যসচ ব ন এনস প র র জন ত ক আওয় ম স গঠক ঘটন য় তদন ত র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
জামায়াতের নিবন্ধন: আপিল শুনানির জন্য চলতি সপ্তাহে কার্যতালিকায় উঠছে
রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আংশিক শ্রুত হিসেবে রয়েছে উল্লেখ করে তা শুনানির জন্য আজ আপিল বিভাগে উত্থাপন করা হয়েছে।
বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে আজ রোববার সকালে বিষয়টি উত্থাপন করেন আপিলকারী পক্ষের আইনজীবী।
আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘কার্যতালিকা ওয়াচ (নজর রাখবেন) করবেন। মঙ্গলবার বা বুধবার কার্যতালিকায় আসবে।’
আদালতে আপিলকারী পক্ষে বিষয়টি উত্থাপন করেন আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
পরে আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপিল বিভাগ কার্যতালিকায় নজর রাখতে বলেছেন। মঙ্গলবার বা বুধবার আপিলটি কার্যতালিকায় আসবে। সেদিন শুনানি হতে পারে বলে আশা করছি।’
রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দলটির করা আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) গত বছরের ১৯ নভেম্বর খারিজ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আপিলকারীর পক্ষে সেদিন কোনো আইনজীবী না থাকায় আপিল বিভাগ ওই আদেশ (ডিসমিসড ফর ডিফল্ট) দেন। পরে দেরি মার্জনা করে আপিল ও লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে দলটির পক্ষ থেকে পৃথক আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে গত বছরের ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ আবেদন মঞ্জুর (রিস্টোর) করে আদেশ দেন। এরপর জামায়াতের আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। গত ৩ ডিসেম্বর শুনানি শুরু হয়। এরপর আরও কয়েক দিন শুনানি হয়।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ। একই সঙ্গে আদালত এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সনদ দেন, যা ওই বছরই আপিল হিসেবে রূপান্তরিত হয়। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে দলটি।
তবে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে জামায়াত আবেদন করে, যা ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের তৎকালীন চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। এরপর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।