আশঙ্কাকে সত্যি করে দিয়ে মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। ‘অপারেশন সিদুঁর’ নামের এই সামরিক অভিযানের আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ভারত। 

গভীর রাতে ভারতের এই হামলাকে কাপুরুষের কাজ হিসেবে বর্ণনা করে এর কড়া জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রীর বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ তার জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডেকেছেন।

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানের যেসব স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারত

পাকিস্তানে ভারতের হামলা নিয়ে সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে

মঙ্গলবার গভীর রাতে, ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নয়টি স্থানে হামলা চালিয়েছে। দিল্লি বলেছে, যে পহেলগামে জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে। ভারতের হামলায় পাকিস্তানে শিশুসহ অন্তত ৮ জন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন। 

পাকিস্তান বলেছে, তারা তাদের পছন্দের স্থান এবং সময়ে এর জবাব দেবে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তানের নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে: দার

রাতভর হামলা ও পাল্টা হামলার পর ২৪ ঘণ্টা সামরিক উত্তেজনার মধ্যে দিনশেষে পাকিস্তান জানাচ্ছে, ভারতের সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার নিশ্চিত করেছেন, উদ্ভূত সামরিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে।

টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসহাক দারকেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রাতের বেলায় হওয়া অভিযানের পর দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা কি কথা বলেছেন? জবাবে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, তাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ট্রাম্প চান, ভারত-পাকিস্তান থেমে যাক

ভারত-পাকিস্তান কি সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়াচ্ছে?

সম্প্রতি পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আসিম মালিককে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে শাহবাজ সরকার। আর ভারতের পক্ষে এই দায়িত্বে রয়েছেন অজিত দোভাল।

পাকিস্তানে হামলার পর ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভারপ্রাপ্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা  মার্কো রুবিওর সঙ্গেও কথা বলেন। তখন তিনি হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতির ওপর তারা নজর রাখছে। সেই সঙ্গে উভয় পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানায় দেশটি।

৭ মে রাতে পাকিস্তানের ৯টি স্থানের কয়েকটি জঙ্গি আস্তানায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপরাশেন সিঁদুর’। কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়া ২৬ জন ব্যক্তির স্ত্রীরা বিধবা হওয়ায় ধর্মমতে তারা আর মাথায় সিঁদুর পরতে পারবেন না। এই নারীদের সম্মানে অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে অপরাশেন সিঁদুর।

হামলা নিয়ে দুই দেশের উত্তপ্ত বাক্য চালাচালির মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছে তার দেশের সেনাবারা। ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে তারা। এই ঘটনাকে জবাব হিসেবে ব্যাখ্যা করে সময়মতো প্রতিশোধ নিতে সামরিক বাহিনীকে অনুমতি দিয়েছেন তিনি। 

এর আগে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি বৈঠক করে সামরিক বাহিনীকে তাদের ‘নিজস্ব সময় ও পন্থায়’ ভারতকে জবাব দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে ভারত সরকার বলেছে, পাকিস্তান যদি কোনো ধরনের পাল্টা হামলা চালায় তাহলে আরো কঠিন হামলা চালানো হবে।

যুদ্ধের ডামাডোলে দুই দেশে বহু বেসামরিক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, শেয়ারবাজারে পতন হয়েছে; বন্ধ করা হয়েছে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 

ভারত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উভয় অংশের বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন, অনেক পরিবারকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যেতে দেখা গেছে। 

বুধবারের রাতের হামলায় পাকিস্তানে ৭০ জন নিহতের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এলেও পাকিস্তান সেনাবাহিনী বলেছে, নিহতের সংখ্যা ২৬ জন। আহত হয়েছেন ৫০ জনের মতো। 

এদিকে ভারত বলেছে, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে কাশ্মীরে ১৫ জন বেসামরিক ভারতীয় নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩৬ জনের মতো। 

নতুন করে যুদ্ধের শঙ্কা এখনই উড়িয়ে দেওয়া না গেলেও দুই দেশের ভাষায় সেই ইঙ্গিত নেই। ভারত বলছে, হামলার মধ্য দিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা সন্ত্রাসী স্থাপনায় হামলা চালিয়ে তাদের খতম করে দিয়েছে।

পাকিস্তান বলছে, তারা হামলার সমুচিত জবাব দিয়েছে, অভিযানের সময় ভারতের কয়েকটি বিমান ভূপাতিত করে এটি করা হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক বিশ্ব ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ চায় না বলে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে। বাংলাদেশও একই বার্তা দিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি উন্নতির ইঙ্গিত স্পষ্ট।

এমন অবস্থায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানালেন, দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে।  

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ