ভারত মিসাইল হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের ওপর। পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে তা নিয়ে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এখন দুই দেশের নিজেদের সীমানা নিয়ে উদ্বেগ স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের আক্রমণকে সরাসরি ‘যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সেই সূত্র ধরে পাকিস্তান প্রতিশোধ নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে। (ইতিমধ্যে পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালিয়েছে।)

এই সংঘাতের নতুন করে সূত্রপাত ঘটে গত এপ্রিলে ভারতের কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার মধ্য দিয়ে। ২৬ জন সাধারণ ভারতীয় পর্যটক নিহত হওয়ার পর, আন্তর্জাতিকভাবেও প্রতিক্রিয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে ‘হতাশাজনক’ বলে আখ্যায়িত করে সমস্যার দ্রুত সমাধান আশা করেন।

পাকিস্তানের জন্য আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের অর্থনৈতিক অভিঘাত সামলানো কঠিন হবে। ভারতের তুলনায় সেই আঘাত হবে অনেক বেশি। সেই সংঘাত যত দীর্ঘ হবে, পাকিস্তানের জন্য তা হবে তত বেশি ভয়াবহ। বিনিয়োগ বিষয়ে আগাম অবস্থা জানানোর জন্য মুডিস ইনভেস্টরস সার্ভিস নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। তারা এ বিষয়ে ৫ মে জানিয়েছে যে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা আছে। এতে পাকিস্তানের রাজস্ব কমবে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। আইএমএফের কাছ থেকে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়ে পাকিস্তানের অর্থনীতি কিছুটা সামলে আসার সম্ভাবনা ছিল। ভারতের সঙ্গে সংঘাত সেই সুযোগ লন্ডভন্ড করে দিতে পারে।

ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় যে এ ধরনের সংঘাত পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করে দেয়। আফগানিস্তান যুদ্ধ পাকিস্তানের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। দেশে দেখা দিয়েছিল সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। অস্ত্র আর মাদক চোরাচালান সেই যে বেড়েছে, তা আজও সামলানো যায়নি। সন্ত্রাসীগোষ্ঠীগুলো এখনো খোদ পাকিস্তান রাষ্ট্রের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।

বর্তমানে পাকিস্তানের অর্থনীতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের বৈদেশিক ঋণ ১৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অথচ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র ১০ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে তিন মাসের আমদানি খরচই ঠিকমতো মেটানো যাবে না। এ অবস্থায় যুদ্ধ বা সামরিক উত্তেজনা বাড়লে বিদেশি বাজার থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। ফলে ঋণ পরিশোধ আরও জটিল হয়ে উঠবে, আর রিজার্ভেও চাপ পড়বে। এমনকি আইএমএফের পুনরুদ্ধার কর্মসূচিও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

অবশ্য পাকিস্তানের এই দুর্বলতা আজকের নয়। ২০২১ সালে সেই সময়ের সেনাপ্রধান কামার বাজওয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন যে তাঁদের ট্যাংক চালানোর মতো ডিজেল পর্যন্ত নেই। সামরিক যানবাহন বা অস্ত্র সচল রাখার জন্য রক্ষণাবেক্ষণ করার টাকাও নেই তহবিলে। সেই দুর্বলতা আজও কাটেনি।

ভারতের অবস্থা একেবারে ভিন্ন। ২০২৪ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের রপ্তানি ছিল ভারতের মোট রপ্তানির শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের কম। অর্থাৎ দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের সামরিক উত্তেজনা হলেও ভারতের অর্থনীতি তেমন প্রভাবিত হবে না।

তবে ভারতের ক্ষেত্রেও কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়লে বাজেটঘাটতি বাড়তে পারে। তাহলে উন্নয়ন ও সামাজিক খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া ভারতের জন্য নিরাপত্তাচাপ কেবল পশ্চিম সীমান্তেই নয়, চীন সীমান্তেও রয়েছে। দুই সীমান্তে একসঙ্গে প্রস্তুত থাকতে হলে অনেক খরচ হয়। তাই ভারতেরও সাবধানতা অবলম্বন করা ছাড়া উপায় নেই।

কিন্তু এই সব চাপ পাকিস্তানের বিপদের সঙ্গে তুলনীয় নয়। পাকিস্তানের জন্য যুদ্ধ মানে কেবল সাময়িক রাজনৈতিক উত্তেজনা নয়, বরং অর্থনৈতিক ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো। চীনের কাছে থেকে তারা সম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ নবায়ন করেছে। কিন্তু এর ফলে পাকিস্তান চীনের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। আর তা পশ্চিমা মিত্রদের (বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের) সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক জটিল করে তুলতে পারে।

এ ছাড়া পাকিস্তানের কৃষি খাত সামরিক উত্তেজনায় বড় ধাক্কা খেতে পারে। ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে। এটা বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার সংকেত। অথচ কৃষিই পাকিস্তানের মূল অর্থনৈতিক খাত। এই খাতে তাদের ৪০ শতাংশের মতো মানুষ কাজ করে। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারেনি দেশটি। এ অবস্থায় আরেকটি বড় সংকট এলে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছাড়াবে।

তাই পাকিস্তানের জন্য বড় ধরনের সামরিক সংঘাত এড়িয়ে চলা কেবল কৌশলগত নয়, বরং টিকে থাকার প্রশ্ন।

এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মহল জরুরি হস্তক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। আর তখন শুধু ভারত-পাকিস্তান অঞ্চলে নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়বে। দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস। এখানে মানুষ প্রতিদিন ৩ দশমিক ৬৫ ডলারের কম আয় করে কোনোমতে টিকে থাকে। যুদ্ধ হলে এই সব দরিদ্র মানুষের জীবন আরও বিপন্ন হবে।

পুরোদস্তুর যুদ্ধ না হলেও সীমিত মাত্রায় সংঘাত হতে পারে। আর তা হচ্ছেও। দুই দেশের মধ্যে এমন সংঘাত নতুন কিছু নয়। এমন ছোটখাটো সংঘর্ষেও বিপুল অর্থনৈতিক ও মানবিক ক্ষতি হতে পারে। আর তা পাকিস্তানের মতো দুর্বল দেশের জন্য কম মারাত্মক হবে না।

ইউসুফ নজর পাকিস্তানি লেখক

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ক স ত ন র জন য ধরন র র ওপর অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রবাসী কর্মীর মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি, আবেদন শেষ ২৫ নভেম্বর

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রবাসী কর্মীর সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করবে। এটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শিক্ষাবৃত্তি।

শিক্ষাগত যোগ্যতা

১. এসএসসি ও সমমান–২০২৫

# প্রবাসে কর্মরত কর্মীর সন্তানের ক্ষেত্রে:

বিজ্ঞানে জিপিএ–৫.০০, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ–৪.৭৫।

# প্রবাসে মৃত প্রবাসী কর্মীর সন্তানের ক্ষেত্রে:

বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ–৪.০০।

২. এইচএসসি ও সমমান–২০২৪

# প্রবাসে কর্মরত কর্মীর সন্তানের ক্ষেত্রে:

বিজ্ঞানে জিপিএ–৪.৮০, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ–৪.৫০।

# প্রবাসে মৃত প্রবাসী কর্মীর সন্তানের ক্ষেত্রে:

বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ–৪.০০।

আরও পড়ুনসাইনবোর্ডে ‘কলেজ’, লেখাপড়া নেই ৫ ঘণ্টা আগে

৩. ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং–২০২৪

# প্রবাসে কর্মরত কর্মীর সন্তানের ক্ষেত্রে:

জিপিএ–৩.৫০।

# প্রবাসে মৃত প্রবাসী কর্মীর সন্তানের ক্ষেত্রে:

জিপিএ–৩.০০।

শর্তাবলি

১. মা–বাবা প্রবাসী কর্মী হওয়ার সপক্ষে প্রমাণ।

২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের মুঠোফোন নম্বরসহ প্রত্যয়নপত্র।

৩. প্রবাসে মৃত কর্মীর সন্তানদের ক্ষেত্রে দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র।

৪. শিক্ষার্থীর যেকোনো ব্যাংকের হিসাব নম্বর ও রাউটিং নম্বরসহ স্টেটমেন্ট।

৫. শিক্ষার্থীর এক কপি ছবি ও স্বাক্ষর।

৬. শিক্ষার্থীর এনআইডি কার্ডের কপি।

আরও পড়ুনজাপানে জাতিসংঘের ইন্টার্নশিপ, চলছে আবেদন৯ ঘণ্টা আগেশিক্ষাবৃত্তি প্রদানের মেয়াদ

১. এসএসসি ও সমমান ক্যাটাগরিতে শিক্ষাবৃত্তির জন্য মনোনীত শিক্ষার্থীদের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত দুই বছর ও ডিপ্লোমা শ্রেণিতে অধ্যয়নরতদের জন্য চার বছর।

২. এইচএসসি ও সমমান ক্যাটাগরিতে শিক্ষাবৃত্তির জন্য মনোনীত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে স্নাতক পর্যায়ে তিন বছর বা স্নাতক সম্মান পর্যায়ে চার বছর ও মেডিকেলের জন্য পাঁচ বছরের বৃত্তি প্রদান করা হবে।

৩. ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাটাগরিতে বৃত্তির জন্য মনোনীত শিক্ষার্থীদের চার বছরের বৃত্তি প্রদান করা হবে।

আবেদনের প্রক্রিয়া

১. অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদনের লিংক:

২. অনলাইনে আবেদনের সময়সীমা: ২৫ নভেম্বর ২০২৫।

# বিস্তারিত তথ্য পেতে ওয়েবসাইট

আরও পড়ুনট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটিতে চারটি সার্টিফিকেট কোর্স, যোগ্যতা এইচএসসি পাস১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিয়ে ও বাবা হওয়ার খবর জানালেন জেমস
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে দ্বিতীয় রিলিজ স্লিপের মেধাতালিকা প্রকাশ, চূড়ান্ত ভর্তির তারিখ
  • বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই–অক্সাইডের মাত্রা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, কারণ কী
  • মেসি–রোনালদোর তুমুল লড়াই হ্যাটট্রিক করায়ও
  • প্রবাসী কর্মীর মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি, আবেদন শেষ ২৫ নভেম্বর