ফাঁদে পা না দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

শনিবার (১০ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজের ফেরিফাইড ফেসবুকে পেইজে এক স্ট্যাটাসে এই আহ্বান জানান তিনি। স্ট্যাটাসে ছাত্র-জনতার তিন দফা দাবি জানানো হয়।

তাদের দাবিসমূহ হলো-

১.

আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রদ্রোহী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে। 
২. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে।
৩. জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।

এই তিন দফার একটি বাকি থাকতেও ছাত্র-জনতা রাস্তা থেকে উঠবে না বলে স্ট্যাটাসে জানানো হয়। কোনো ষড়যন্ত্র কাজ হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

এর আগে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ (পথনকশা) না পাওয়ায় ‘মার্চ টু যমুনা’ ঘোষণা দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। শাহবাগের গণজমায়েত থেকে রাত সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘোষণা দেন তিনি।

ঢাকা/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বন্য হাতিকে ‘মামা’ ডাকলে আসলেই কি তারা ক্ষতি করে না

রাত তখন সাড়ে ১০টা। বন অফিসজুড়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার। পাহাড় থেকে ১৫–২০টি বন্য হাতির পাল নিঃশব্দে এগিয়ে আসে তাওয়াকুচি বিট অফিসের সামনে থাকা বিশাল কাঁঠালগাছের নিচে।

সেই অফিসে ছিলেন শেরপু‌রের ঝিনাইগাতী তাওয়াকু‌চি বিট কর্মকর্তা আবদুল বারী। পাশে একটি কক্ষে তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান। অন্য কক্ষে থাকা দুই কর্মী ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তাঁকে খবর দেন, ‘স্যার, হাতির পাল অফিস ঘেঁষে এসে গেছে।’

আবদুল বারী এক হাতে দুনলা বন্দুক, অন্য হাতে মোটরসাইকেলে স্টার্ট দেন। হেডলাইটের আলো গিয়ে পড়ে হাতির শরীরে। সেই মুহূর্তে ভ‌য়ে কাঁপা কণ্ঠে বারী ব‌লেন, ‘মামারা, তোমাদের কেউ ক্ষতি না করলে তোমরাও কারও ক্ষতি করো না। যদি কাঁঠাল খাইতে চাও, খাইয়া চলে যাইও।’

ঠিক সেই সময় গাছের উঁচু কাঁঠালে শুঁড় তুলছিল এক বড় হাতি। আলো, শব্দ ও অনুনয়ের কথা—সব যেন একসঙ্গে গিয়ে লাগে তাদের অনুভূতিতে। হাতিরা কাঁঠাল না ছুঁয়েই ধীরে ধীরে বনের দিকে ফিরে যেতে শুরু করে।

২০১৫ সালের সেই রাতের কথা মনে পড়লে এখনো রোমাঞ্চিত হন আবদুল বারী। বর্তমা‌নে তি‌নি না‌লিতাবাড়ীর গোপালপুর বিট কার্যাল‌য়ে কর্মরত আছেন।

শেরপুরের পাহাড়ে বসবাসকারী গারো সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠের দাবি, হাতিকে ‘মামা’ বা ‘বাবু’ সম্বোধন করলে হাতি সাধারণত উত্তেজিত হয় না। আক্রমণাত্মক আচরণ করে না।

মধুটিলা গ্রামের দিনা মারাক (৫৫) বলেন, ‘হাতিরে মামা কইলে ক্ষতি করে না। আমরা ছোটবেলা থাইকাই শুনছি, হাতিরে হাতি কইলে রাগ করে। তাই সম্মান দিয়া আমরা মামা ডাকি।’

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে ভারতের মেঘালয়ের পিক পাহাড় থেকে ২০–২৫টি বন্য হাতি শেরপুর সীমান্তে ঢোকে। এখন সেই সংখ্যা শতাধিক। বছরজুড়ে খাবারের সন্ধানে তারা শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ীসহ ময়মনসিংহ ও জামালপুরের পাহাড়ঘেঁষা জনপদে ঘুরে বেড়ায়। লোকালয়ে ঢুকলে পটকা, মশাল ও হইচই করে তাড়ানোর চেষ্টা। এতেই বেশির ভাগ সংঘাতের সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুনশেরপুরে বন্য হাতির হানা, তিন দিনে ক্ষতিগ্রস্ত ৯ একর জমির ধান০৮ অক্টোবর ২০২৫

বিশপনগরের বাসিন্দা কুবির মারাক (৬৭) প্রতিবছরই হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব দেখেন। ‌তি‌নি ব‌লেন, ‘এই জঙ্গল তো হাতি–পশুপাখির। খাবারের লাইগা হাতিরা নিচে নাইমা আসে। তাদেরে মামা বা বাবু কইয়া অনুরোধ করলে, হাতি কথা রাহে। বনে ফিইরা যায়। এ রহম মেলা ঘটনা দেখছি।’

ঢাকা আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আবদুল মোতালেব বলেন, ‘হাতির আচরণ মানুষের মতোই। আমরা কাউকে বিনয়ের সঙ্গে ডাকলে যেমন সে ইতিবাচক সাড়া দেয়, হাতিও তেমন অনুভব করতে পারে। “মামা” বলে অনুনয় করলে হাতি সেটা বুঝে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে শাবক সঙ্গে থাকলে কোনো অনুরোধই কাজে দেয় না।’

আরও পড়ুনবুনো হাতিরা এখন কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের কবলে, প্রাণ ও ফসল ঝুঁকিতে১৪ নভেম্বর ২০২৫

বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান ব‌লেন, হাতির চোখ ছোট; কিন্তু শ্রবণ ও ঘ্রাণশক্তি অসাধারণ। তারা মনে রাখতে পারে, কে কোথায় কখন গালি দিয়েছে। ‘মামা’ শব্দের মানে না বুঝলেও স্বরের ভঙ্গি ও আচরণ থেকে বোঝে—এ লোক ক্ষতি করবে না। কিন্তু একই সঙ্গে যদি কেউ ‘মামা’ বলে ঢিল ছোড়ে, হাতি তখনই বুঝে যায়, এই অনুনয় ভুয়া।

আরও পড়ুননদীতে নেমে হাতির সে কী আনন্দ, পাড়ে আসতেই চাচ্ছিল না২৯ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ