সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের অগ্রগতি এখনো স্পষ্ট নয়: এবি পার্টি
Published: 15th, May 2025 GMT
সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অগ্রগতি এখনো স্পষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান। তবে তিনি বলেন, ‘কমিশন আমাদের আশ্বস্ত করেছে, কিছুদিনের মধ্যে অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দপ্তরে সংস্কার নিয়ে লিখিত মতামত দেওয়ার পর এসব কথা বলেন মজিবুর রহমান। এ সময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
এবি পার্টির প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল ওহাব মিনার, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কাসেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানী আবদুল হক, নাসরিন সুলতানা মিলি ও আলতাফ হোসেন, নারী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ফারাহ নাজ সাত্তার।
বাংলাদেশে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থাকে সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বলে মনে করে এবি পার্টি। এ ছাড়া দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ যাতে পুনর্বাসনের কেন্দ্রে পরিণত না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক করেছেন দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনো দ্বিকক্ষের জন্য প্রস্তুত নয়। তবে জাতীয় স্বার্থে আমরা এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছি।’
জাতীয় সংসদের এক-চতুর্থাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে এবি পার্টি। এ ক্ষেত্রে সংরক্ষিত আসনে বিভিন্ন পেশার নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন দলটির চেয়ারম্যান।
এর আগে গত ৭ এপ্রিল সংস্কারের প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে এবি পার্টির সঙ্গে আলোচনায় বসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ওই বৈঠকে ১৬৬টি প্রস্তাবের ৩২টি প্রস্তাবে দ্বিমত ও ২৬টি প্রস্তাবে আংশিক একমত পোষণ করেছিল দলটি। তবে আজকের লিখিত মতামতে দলটি নতুন করে ১৩৮টি প্রস্তাবে একমত, ১০টি প্রস্তাবে দ্বিমত ও ১৮টিতে আংশিক একমত পোষণ করার কথা জানায়।
এ সময় আগামী জুলাইয়ের মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের কাজ সম্পন্ন করার আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ঐকমত্য গঠনে এরই মধ্যে কমিশন প্রথম ধাপে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে।
প্রাদেশিক সরকারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তির কথা তুলে ধরে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘এটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছি। তবে আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা প্রয়োজন। বিচার বিভাগ এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আমরা দ্রুত সময়ে শেষ করার চেষ্টা করছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি রুখতে বামপন্থি সরকার গড়তে হবে: সেলিম
ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি রুখতে বামপন্থি সরকার গড়তে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম মেম্বার এবং সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবি জাতীয় সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “দেশ এক সর্বগ্রাসী সংকটে নিমজ্জিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে পাকিস্তানের জিঞ্জির থেকে মুক্ত করেছি ভারত কিংবা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নতুন শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার জন্য নয়। ক্ষমতাসীন ইউনূস সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশকে মার্কিন ভূরাজনৈতিক স্বার্থের অনুগত করছে। যা দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ বারবার স্বৈরাচারী শাসনের কবলে পড়েছে। দেশের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে স্বৈরাচারদের উৎখাত করেছে। নতুন কোনো ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচারী শাসন আমরা দেখতে চাই না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বারবার নানা আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের দিনে ‘গণভোটের’ জন্য ড. ইউনূস যে প্রস্তাবনা হাজির করেছেন তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা ঐকমত্যের কথা বলে একটি ভুয়া দলিল রচনা করেছে। সাংবিধানিক আদেশ বলবৎ করে সরকার যা করতে যাচ্ছে গণভোটের মধ্য দিয়ে তার বৈধতা হবে না। ঐকমত্যের বাইরে কোনো বিষয় চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।”
সিপিবির সাবেক সভাপতি বলেন, “ক্ষমতাসীন সরকার সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের মধ্য দিয়ে দেশকে দীর্ঘমেয়াদি এক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নতুন মোড়কে পুরাতন ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করছে বর্তমান সরকার।”
তিনি বলেন, “সর্বগ্রাসী সংকট থেকে দেশকে বাঁচাতে ফ্যাসিস্ট দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি ও উগ্র ডানপন্থা রুখতে হবে। বিকল্প বামপন্থি ও গণতান্ত্রিক শক্তির সরকার গড়তে হবে।”
সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক কমরেড আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, সাবেক সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রাগিব আহসান মুন্না, এসএ রশীদ, মো. আমিনুল ফরিদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স এবং ডা. দিবালোক সিংহ।
সমাবেশে দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বর্ষীয়ান মার্কসবাদী চিন্তাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ অসুস্থ থাকায় তার লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়।
সমাবেশে বন্ধুপ্রতীম রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের প্রধান উপদেষ্টা কমরেড খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া।
প্রান্তিক ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুরেশ্বর দরবার শরীফের পীর সাহেব শাহ সূফী হাসান শাহ সুরেশ্বরী দিপু নূরী, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি রেবেকা সরেন, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সাবেক সভাপতি কৃষ্ণলাল।
সমাবেশ পরিচালনা করেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রফিকুজ্জামান লায়েক ও জলি তালুকদার।
সমাবেশ সভাপতির বক্তব্যে কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন অবিলম্বে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তফসিল ঘোষণার দাবি জানান।
নির্বাচনে জামানতের অর্থ কমানো ও প্রার্থীদের সমতা নিশ্চিত করার দাবিতে ২৪ নভেম্বর, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও এবং জেলা ও উপজেলায় নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এছাড়াও তিনি লালদিয়া টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে হস্তান্তরের চুক্তি স্বাক্ষর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১৬ নভেম্বর, দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
২৮ নভেম্বর ঢাকায় নারীদের রাজনৈতিক কনভেনশন এবং ২৯ নভেম্বর, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশ জাসদসহ বাম-গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল দলসমূহের উদ্যোগে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় জনগণের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠানের ঘোষণা করেন।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল শাহবাগ হয়ে বাটা সিগন্যাল, সায়েন্স ল্যাব, ঢাকা কলেজ, গাউসিয়া মার্কেট থেকে বামে ঘুরে আবারও বাটা সিগন্যাল, শাহবাগ হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে শেষ হয়।
ঢাকা/আসাদ/সাইফ