সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অগ্রগতি এখনো স্পষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান। তবে তিনি বলেন, ‘কমিশন আমাদের আশ্বস্ত করেছে, কিছুদিনের মধ্যে অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে।’

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দপ্তরে সংস্কার নিয়ে লিখিত মতামত দেওয়ার পর এসব কথা বলেন মজিবুর রহমান। এ সময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

এবি পার্টির প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল ওহাব মিনার, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কাসেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানী আবদুল হক, নাসরিন সুলতানা মিলি ও আলতাফ হোসেন, নারী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ফারাহ নাজ সাত্তার।

বাংলাদেশে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থাকে সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বলে মনে করে এবি পার্টি। এ ছাড়া দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ যাতে পুনর্বাসনের কেন্দ্রে পরিণত না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক করেছেন দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনো দ্বিকক্ষের জন্য প্রস্তুত নয়। তবে জাতীয় স্বার্থে আমরা এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছি।’

জাতীয় সংসদের এক-চতুর্থাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে এবি পার্টি। এ ক্ষেত্রে সংরক্ষিত আসনে বিভিন্ন পেশার নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন দলটির চেয়ারম্যান।

এর আগে গত ৭ এপ্রিল সংস্কারের প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে এবি পার্টির সঙ্গে আলোচনায় বসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ওই বৈঠকে ১৬৬টি প্রস্তাবের ৩২টি প্রস্তাবে দ্বিমত ও ২৬টি প্রস্তাবে আংশিক একমত পোষণ করেছিল দলটি। তবে আজকের লিখিত মতামতে দলটি নতুন করে ১৩৮টি প্রস্তাবে একমত, ১০টি প্রস্তাবে দ্বিমত ও ১৮টিতে আংশিক একমত পোষণ করার কথা জানায়।

এ সময় আগামী জুলাইয়ের মধ‍্যে ঐকমত্য কমিশনের কাজ সম্পন্ন করার আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ঐকমত্য গঠনে এরই মধ্যে কমিশন প্রথম ধাপে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে।

প্রাদেশিক সরকারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তির কথা তুলে ধরে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘এটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছি। তবে আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা প্রয়োজন। বিচার বিভাগ এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আমরা দ্রুত সময়ে শেষ করার চেষ্টা করছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব

এছাড়াও পড়ুন:

পাথর তোলায় রাজনৈতিক দলের ‘ঐকমত্য’, পরে লুট, ঘটল কীভাবে

বড় পাথর, মাঝারি পাথর, ছোট পাথর। তার মধ্য দিয়ে পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলধারা। সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের সেটাই ছিল আকর্ষণ। পর্যটকেরা গিয়ে পাথরের ওপর বসতেন, ছবি তুলতেন।

অবশ্য এখন তা অতীত। চার মাস ধরে লুট করা হয়েছে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের পাথর। এই লুটের কথা সবাই জানত। কারণ, দিনদুপুরে চলেছে লুটপাট। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তা জোরালো ছিল না। ফলে পাথর লুট ঠেকানো যায়নি।

সরেজমিনে গত মঙ্গলবার দেখা যায়, সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে যেখানে বড় বড় পাথর ছিল, সেখানে এখন গর্ত। সব জায়গায় পাথর তুলে নেওয়ার চিহ্ন। প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর লুট করা হয়েছে। ফলে সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। কমেছে পর্যটকের সংখ্যা।

বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও পাথর উত্তোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ঐকমত্য ছিল। কারণ, পাথর উত্তোলন, পরিবহন, মজুত রাখা, ভাঙা ও বিক্রির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

স্থানীয় প্রশাসনও পাথর উত্তোলনের পক্ষে সম্প্রতি মত দিয়েছে। কিন্তু সরকার সাড়া দেয়নি। পরে হয় শুরু গণলুট। লুটের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদেরই দায়ী করছেন পরিবেশকর্মীরা। প্রথম আলোর অনুসন্ধানেও তাঁদের নাম এসেছে। কেউ কেউ আত্মগোপনেও চলে গেছেন।

পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সদস্যসচিব আবদুল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পাথর লুট ঠেকাতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। এর সঙ্গে প্রকাশ্যে ও গোপনে জড়িত রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা। তিনি বলেন, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতারা যেভাবে সভা-সমাবেশে কোয়ারি চালুর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা দুঃখজনক। পাথর লুটের দায় এসব নেতা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

পাথর উত্তোলনে ‘ঐকমত্য’

সারা দেশে ৫১টি কোয়ারি (পাথর, বালু ইত্যাদি উত্তোলনের নির্দিষ্ট স্থান) রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে রয়েছে আটটি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে আরও ১০টি জায়গায় পাথর রয়েছে। যেমন সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি ও উৎমাছড়া। এসব জায়গা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

পাথর আসে সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে। বহু বছর ধরে পানির স্রোতের সঙ্গে এসব পাথর এসে কোয়ারি তৈরি হয়েছে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে সিলেটের আটটি কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের পর আর পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়নি।

বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতারা যেভাবে সভা-সমাবেশে কোয়ারি চালুর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা দুঃখজনক। পাথর লুটের দায় এসব নেতা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সদস্যসচিব আবদুল করিম চৌধুরী

উল্লেখ্য, জাফলং (জাফলং-ডাউকি নদী) পরিবেশ অধিদপ্তর ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)। জাফলংসহ অন্যান্য এলাকা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা হলে পরিবেশ আইনে জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আবার খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইনেও এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

দেশের নির্মাণ খাতে পাথরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশ থেকে প্রায় ৯৫ লাখ মেট্রিক টন পাথর আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা, যার দাম দেখানো হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। দেশের নির্মাণ খাতে পাথরের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করে মেটানো হয়। বাকিটা চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ হয় দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প ও সিলেট থেকে উত্তোলন করা পাথর দিয়ে।

সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের আগের অবস্থা। ছবিটি গত ৩০ এপ্রিল তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইনে যা-ই থাকুক, প্রাধান্য পাবে জুলাই সনদের প্রস্তাব
  • পাথর তোলায় রাজনৈতিক দলের ‘ঐকমত্য’, পরে লুট, ঘটল কীভাবে
  • নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার সুযোগ নিতে পারে পতিত ফ্যাসিস্ট
  • বাংলাদেশের ‘তরুণকম্পের’ সম্ভাবনা ও ঝুঁকি
  • সংসদে নারী আসন ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন
  • সংসদে নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান
  • ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন
  • ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আরো ১ মাস বাড়ল
  • শুল্ক বৃদ্ধি আরো ৯০ দিন স্থগিত রাখতে একমত যুক্তরাষ্ট্র-চীন