পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ আশঙ্কা করছেন, ভারত শিগগিরই আরেকটি দুঃসাহসিক অভিযান চালাতে পারে। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, উস্কানি এলে পাকিস্তান কঠোর জবাব দেবে।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার (১৪ মে) জিও নিউজের সঙ্গে আলাপকালে আসিফ বলেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা এবং ক্রমবর্ধমান চাপ ও রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা ধসের কারণে আবেগপ্রবণ পদক্ষেপ নিতে পারেন।”

আরো পড়ুন:

আমরা ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৭১-এর যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছি: শাহবাজ শরীফ

মোদির সময় ফুরিয়ে এসেছে: পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

আসিফ বলেন, “মোদি যদি হতাশা থেকে বেপরোয়া পদক্ষেপ নেন, তাহলে পাকিস্তান দৃঢ়ভাবে জবাব দেবে - এবং এর বিশ্বব্যাপী পরিণতি হবে।”

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, আরো উত্তেজনার ক্ষেত্রে, এমনকি ভারতের মিত্ররাও মোদির পদক্ষেপকে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকতে পারে।

তিনি জানান, “যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার জন্য পাকিস্তানের উপর কোনো বহিরাগত চাপ ছিল না। আসিফ বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো এই ধারণার সাথে একমত ছিল এবং এই ধারণাকে সমর্থন করেছিল, যে কারণে আমরা একমত হয়েছি।”

আসিফ বলেন, পাকিস্তান চার দিন ধরে সংযম প্রদর্শন করেছে, প্রত্যাশা করেছে ভারত যুক্তি দেখাবে। কিন্তু তা হয়নি। তবে আমাদের বিজয় বহুমাত্রিক।

তিনি দাবি করেন, “এটি ছিল প্রথম সংঘাত যেখানে সাইবার যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। সাইবার অভিযানের সময় ভারতের ডিজিটাল অবকাঠামো অচল হয়ে পড়েছিল।” 

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, “পাকিস্তান সম্পর্কে আন্তর্জাতিক ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। যারা আমাদের গুরুত্ব সহকারে নেয়নি তারা এখন আমাদের সম্মানের সঙ্গে দেখে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের সময় পাকিস্তান পাঁচটি ভারতীয় বিমান এবং একটি ইউএভি ভূপাতিত করেছে।

কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মন্তব্য করেন যে, ভারত কিছুটা আলোচনায় আগ্রহী। তিনি বলেন, “প্রথমবারের মতো, ভারত কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে – এটি পাকিস্তানের জন্য একটি কূটনৈতিক সাফল্য।”

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১০ মে পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর আসিফের এই বক্তব্য এসেছে। পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ গত সপ্তাহে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযানের মধ্যে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। 

এমন পরিস্থিতির মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। পরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তা নিশ্চিত করেন।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি

গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পহেলগাম হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে পরোক্ষভাবে দায়ী করে ভারত। ইসলামাবাদ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিক্রিয়ায়, ভারত ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেয়, ভিসা বাতিল করে এবং সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করে- এই পদক্ষেপকে পাকিস্তান ‘যুদ্ধের সমতুল্য’ বলে অভিহিত করে।

এরপর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অপারেশন সিঁদুর অভিযান শুরু করে ভারত। জবাবে পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস শুরু করে। 

ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের পর, উভয় পক্ষ স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রে সামরিক তৎপরতা বন্ধ করতে সম্মত হয়।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পদক ষ প

এছাড়াও পড়ুন:

যদি শতভাগ প্রস্তাবে একমত হতে বলেন, তাহলে আলোচনার জন্য ডাকা হলো কেন: সালাহউদ্দিন

সংস্কারের যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে, সে বিষয়গুলো একত্র করে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘এখন এখানে যদি আমাদেরকে বাধ্য করা হয় যে এখানে একমত হতেই হবে, তাহলে সেটা তো সঠিক হলো না।’

যদি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শতভাগ প্রস্তাবে একমত হতে বলা হয়, তাহলে আলোচনার জন্য ডাকা হলো কেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

আজ রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের সপ্তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথাগুলো বলেন তিনি।

নির্বাচন কমিশন, সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই আলোচনার ভিত্তিতে মতৈক্যের বিষয়গুলো নিয়ে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আজ সকালে আলোচনার শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতির বিষয়ে হাতাশা প্রকাশ করেন। সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ ওই মত ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতিত্বে বিরোধী দল, যেকোনো ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সারা জীবনে ১০ বছর, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এমপিদের গোপন ব্যালটে ভোট দেওয়াসহ এমন অনেকগুলো বিষয়ে বিএনপি ঐকমত্য পোষণ করেছে। তাহলে ঐকমত্য তো হচ্ছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) পরিবর্তে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এ প্রস্তাবে বিএনপির বক্তব্য আগের মতোই। সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর স্ব স্ব আইন ও গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কথা বলেছে বিএনপি। যাতে আরও জন–আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মাণ করা যায়। সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব।

প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে চায় বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিতের কথা বলেছি আমরা। আরও অন্যান্য কমিশন ও আইনের দ্বারা নির্ধারিত আরও যদি সংস্থা থাকে, সকল বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা নিয়োগবিধি প্রণয়নের কথা বলেছি।’

বিএনপি সব ক্ষেত্রে ভারসাম্যমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং আইনসভার আওতাধীন তাদের আইনানুগ স্বাধীন কর্মকাণ্ড যাতে পরিচালনা করতে পারে, সেই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষে ১০০ সদস্যের পার্লামেন্ট গঠনের প্রস্তাব করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নিম্নকক্ষের প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের আসন নির্বাচিত হবে। তবে গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে আমরা এখনো একমত হতে পারিনি। কারণ, এখানে বিভিন্ন রকমের প্রস্তাব এসেছে। বিষয়টি এখনো অনিষ্পত্তি থেকে গেছে। তবে উচ্চকক্ষ গঠনের জন্য যদি আরও কোনো সুন্দর প্রস্তাব আসে, গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব আসে, দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে আমরা সেটা বিবেচনা করব। তবে সে রকম কোনো প্রস্তাব এখন পর্যন্ত উঠে আসেনি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কার প্রশ্নে দলগুলোর ঐকমত্য নিয়ে সংশয়
  • যদি শতভাগ প্রস্তাবে একমত হতে বলেন, তাহলে আলোচনার জন্য ডাকা হলো কেন: সালাহউদ্দিন
  • সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে, ঐকমত্য হয়নি: আলী রিয়াজ