ভারত ‘আরেকটি অভিযান’ চালাতে পারে, সতর্ক করলেন খাজা আসিফ
Published: 15th, May 2025 GMT
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ আশঙ্কা করছেন, ভারত শিগগিরই আরেকটি দুঃসাহসিক অভিযান চালাতে পারে। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, উস্কানি এলে পাকিস্তান কঠোর জবাব দেবে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার (১৪ মে) জিও নিউজের সঙ্গে আলাপকালে আসিফ বলেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা এবং ক্রমবর্ধমান চাপ ও রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা ধসের কারণে আবেগপ্রবণ পদক্ষেপ নিতে পারেন।”
আরো পড়ুন:
আমরা ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৭১-এর যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছি: শাহবাজ শরীফ
মোদির সময় ফুরিয়ে এসেছে: পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
আসিফ বলেন, “মোদি যদি হতাশা থেকে বেপরোয়া পদক্ষেপ নেন, তাহলে পাকিস্তান দৃঢ়ভাবে জবাব দেবে - এবং এর বিশ্বব্যাপী পরিণতি হবে।”
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, আরো উত্তেজনার ক্ষেত্রে, এমনকি ভারতের মিত্ররাও মোদির পদক্ষেপকে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকতে পারে।
তিনি জানান, “যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার জন্য পাকিস্তানের উপর কোনো বহিরাগত চাপ ছিল না। আসিফ বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো এই ধারণার সাথে একমত ছিল এবং এই ধারণাকে সমর্থন করেছিল, যে কারণে আমরা একমত হয়েছি।”
আসিফ বলেন, পাকিস্তান চার দিন ধরে সংযম প্রদর্শন করেছে, প্রত্যাশা করেছে ভারত যুক্তি দেখাবে। কিন্তু তা হয়নি। তবে আমাদের বিজয় বহুমাত্রিক।
তিনি দাবি করেন, “এটি ছিল প্রথম সংঘাত যেখানে সাইবার যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। সাইবার অভিযানের সময় ভারতের ডিজিটাল অবকাঠামো অচল হয়ে পড়েছিল।”
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, “পাকিস্তান সম্পর্কে আন্তর্জাতিক ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। যারা আমাদের গুরুত্ব সহকারে নেয়নি তারা এখন আমাদের সম্মানের সঙ্গে দেখে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের সময় পাকিস্তান পাঁচটি ভারতীয় বিমান এবং একটি ইউএভি ভূপাতিত করেছে।
কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মন্তব্য করেন যে, ভারত কিছুটা আলোচনায় আগ্রহী। তিনি বলেন, “প্রথমবারের মতো, ভারত কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে – এটি পাকিস্তানের জন্য একটি কূটনৈতিক সাফল্য।”
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১০ মে পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর আসিফের এই বক্তব্য এসেছে। পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ গত সপ্তাহে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযানের মধ্যে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। পরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তা নিশ্চিত করেন।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পহেলগাম হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে পরোক্ষভাবে দায়ী করে ভারত। ইসলামাবাদ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিক্রিয়ায়, ভারত ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেয়, ভিসা বাতিল করে এবং সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করে- এই পদক্ষেপকে পাকিস্তান ‘যুদ্ধের সমতুল্য’ বলে অভিহিত করে।
এরপর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অপারেশন সিঁদুর অভিযান শুরু করে ভারত। জবাবে পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস শুরু করে।
ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের পর, উভয় পক্ষ স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রে সামরিক তৎপরতা বন্ধ করতে সম্মত হয়।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ জাতির সঙ্গে প্রতারণা: বাম জোট
জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে জাতির সঙ্গে প্রতারণা বলে আখ্যা দিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। এই ভাষণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ বাড়িয়ে দেশকে দীর্ঘস্থায়ী সংকটে ঠেলে দেবে বলেও মন্তব্য করেছেন তাঁরা।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বাম জোটের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) একমত হওয়াকেই যদি সবার ঐকমত্য বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে তা এত দিন ধরে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠককেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।’
বাম জোটের নেতারা বলেন, সনদ বাস্তবায়নের জন্য ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণেও একই কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত মতামত উঠে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের যে ন্যূনতম সংস্কারটুকু করার সুযোগ জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল, তা–ও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১৮০ দিন জাতীয় সংসদ দ্বৈত সত্তা নিয়ে চলবে অর্থাৎ একই সঙ্গে সংসদ ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করার যে কথা বলা হয়েছে; এটাও সংবিধান পরিপন্থী। এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনে কোনো আলোচনা হয়নি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও কোনো ঐকমত্য হয়নি।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ নিয়ে যে কথা প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বলেছেন, তা একদেশদর্শী ও সংবিধানসম্মত নয়। সংবিধানে আদেশ জারি বা গণভোটের কোনো বিধান নেই। রাষ্ট্রপতি কেবল অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করে সংবিধান পরিপন্থী কাজ করা হয়েছে।
বাম জোটের নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে গণভোট ও আদেশ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তাতে দলগুলোর নোট অব ডিসেন্টের (দ্বিমতের) উল্লেখ থাকছে না। ঐকমত্য কমিশনে সংবিধানসংক্রান্ত ৪৮টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩০টিতে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন—এ তথ্যও সঠিক নয়। ৩০টি প্রস্তাবে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে, এ রকম প্রস্তাব ১১টির বেশি নয়।
এ ছাড়া বিবৃতিতে লালদিয়ার চরে ডেনমার্কের কোম্পানিকে বন্দর নির্মাণ এবং পানগাঁও টার্মিনাল সুইজারল্যান্ডের কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে আগামী রোববার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে তড়িঘড়ি করে কেন সরকার একের পর এক আমাদের লাভজনক বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে অতি তৎপর হয়ে উঠেছে, তা দেশবাসীর মনে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি করছে। এ ধরনের প্রকল্পে ভূরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক নানা ঝুঁকি থাকে। দেশের নানা মহল থেকে বারবার সেই আশঙ্কা ব্যক্ত করা হলেও সরকার সেদিকে কর্ণপাত না করে আগের স্বৈরাচার সরকারের বন্দর ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।’
বাম জোটের নেতাদের বিবৃতিতে উঠে আসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি। তাঁরা বলেন, মব সন্ত্রাস লাগামছাড়া, নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে, উগ্র মৌলবাদী তৎপরতা সমাজজীবনকে বিষিয়ে তুলছে, দিনদুপুরে ফিল্মি কায়দায় গুলি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কারখানা বন্ধ হচ্ছে, শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে, মানুষের বেঁচে থাকার উপায়ের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। আর এই সুযোগে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি নানা ধরনের গুপ্ত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে জনজীবনে এক চরম নিরাপত্তাহীন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সরকারের গত ১৫ মাসের কর্মকাণ্ডই এই পতিত শক্তিকে জনপরিসরে স্থান করে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ বাম জোটের নেতাদের।
গণভোট ও উচ্চকক্ষ অপ্রয়োজনীয় এবং জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে—এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে বাম জোটের নেতারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল একটি নির্বাচিত জাতীয় সংসদেরই। তাই কালবিলম্ব না করে দ্রুত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করুন। দেশের বন্দরসহ জাতীয় সম্পদ বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ থেকে বিরত থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলো প্রতিকারে উদ্যোগ নিন।’
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলীর পক্ষ থেকে বিবৃতিটি পাঠানো হয়েছে।