বিনিয়োগ সক্ষমতা ফিরে পেতে বিশেষ তহবিল চায় আইসিবি
Published: 22nd, May 2025 GMT
ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। প্রতি মাসে প্রতিষ্ঠানটিকে ৭০ কোটি টাকার মতো ঋণের সুদ দিতে হচ্ছে।সুদ পরিশোধের সক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি। সেই সঙ্গে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সক্ষমতা ফিরে পেতে বিশেষ তহবিল চাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড.
অর্থ মন্ত্রণালয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে আইসিবির একটি প্রতিনিধিদল বৈঠক করেছেন।তবে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আইসিবির প্রতিনিধিদের কথা শুনেছেন। তিনি শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বেশ ওয়াকিবহাল। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলবেন।”
তিনি বলেন, “আইসিবির পক্ষ থেকে একটি বিশেষ তহবিল গঠনের জন্য একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সমস্যার কথা আইসিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে নেওয়া আইসিবির উচ্চ সুদ হারের কিছু ঋণ রয়েছে। আইসিবির পক্ষ থেকে এটাকে প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।”
আইসিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, “আগের সরকারের সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং সরকার ও অন্যান্য এজেন্সি উৎসাহ দিয়ে আইসিবিকে দিয়ে ঋণ করিয়েছে এবং সেই ঋণের অর্থ দিয়ে শেয়ার কিনতে বাধ্য করিয়েছে। দাম কমে যাওয়ায় ওসব শেয়ারের বিপরীতে আইসিবির লোকসান দাঁড়িয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। এই সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা প্রভিশন করতে হলে আইসিবি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে চিন্তা করেন।”
তিনি বলেন, “আইসিবির এখন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার সক্ষমতা নেই। এমনকি উচ্চ সুদের যে ঋণের রয়েছে, সেই ঋণ পরিশোধ করার সক্ষমতাও আইসিবি হারিয়ে ফেলেছে। এ জন্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সক্ষতা ফিরে পেতে সরকারের কাছে একটি বিশেষ তহবিল গঠানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যে তহবিলের অর্থ আইসিবি বিনিয়োগ করবে, তবে তহবিল পরিচালনা করবে সরকারের গঠন করে দেওয়া নিরপেক্ষ পর্ষদ। এ ধরনের একটি কাঠামো তৈরি করে আমরা একটি প্রস্তাব দিয়েছি।”
তিনি বলেন, “আইসিবির উচ্চ সুদ হারের ১২ হাজার কোটি টাকার মতো ঋণ ছিল। সম্প্রতি ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এখনো ১০ হাজার কোটি টাকার মতো ঋণ রয়ে গেছে। বর্তমানে আইসিবির যে আয় তা নিয়ে এই ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব না। এজন্য আইসিবির এই পরিশোধের জন্য পুনর্ভরণের একটা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কারণ যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে এই ঋণ করা হয়েছে, তারা তো তা মওকুফ করবে না।”
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, “বৈঠকে মার্কেটকে কিভাবে সাপোর্ট দেওয়া যায়, বিনিয়োগকারীরা কিভাবে বেনিফিট পেতে পারে এবং আইসিবির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা হয়েছে। সরকার এখন শেয়ারবাজারের বিষয়গুলো জানে।”
তিনি বলেন, “আমরা তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ও অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কর হারের পার্থক্য ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী বাজাটে এটা থাকতে পারে। আরো কিছু প্রণোদনা থাকবে বলে আমরা আশা করছি।”
আইসিবির জন্য বিশেষ ফান্ড গঠনের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা নিয়ে এখন প্রাথমিক আলোচনা হচ্ছে। এটা আইসিবির নিজের জন্য না। সরকার যদি বিশেষ ফান্ড গঠন করে, তাহলে হবে কি আইসিবি হয় তো এটার বাস্তবায়ন করবে, কিন্তু ওটা দেখভালের জন্য একটা নিরপেক্ষ ম্যানেজমেন্ট কমিটি সরকার গঠন করে দিতে পারে। তাহলে হবে কি যখন প্রয়োজন পড়বে তখন, ওই ফান্ড থেকে ক্রয় করলো। আর যখন প্রয়োজন মনে করবে না, তখন ওই ফান্ড ব্যবহার করবে না। অথবা মার্কেট ওভার হিট হলে বিক্রিও করল।”
তিনি বলেন, “এ ধরনের একটি ফান্ড হলে ভালো হবে, বাজার মোটামুটি একটা পর্যায়ে রাখার জন্য। ওটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে এটা প্রাথমিক পর্যায়ে। এখানে টাকার ব্যাপার আছে। কারণ সরকার রাজি হতে হবে, এই অর্থ কিভাবে দেবে এগুলোর ব্যাপার আছে। এই আইডিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”
বর্তমানে আইসিবি কি ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে-এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আইসিবিকে প্রতি মাসে ৭০ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। সম্প্রতি ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। এখনো ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়ে গেছে। যেগুলোর সুদ হার গড়ে ১২ শতাংশের মতো। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এই ঋণ নেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে ৭০ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করার মতো আয় তো আইসিবির নেই।”
আইসিবিকে ঋণমুক্ত করেতে আপনারা কোনো পরিকল্পনা করেছেন কি-এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এটার বিষয়ে একটা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এটা কিন্তু সবাই জানে আইসিবিতে যেসব অঘটন বা দুষ্কর্ম হয়েছে তা আগে হয়েছে।এই সরকারের আমলে বা আমি আইসিবিতে যোগ দেওয়ার পর কোনো অনিয়ম হয়নি।”
আবু আহমেদ বলেন, “চলতি অর্থবছরের মুনাফা থেকে প্রভিশন না রেখেই মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর ইউনিটহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আমরা চলতি অর্থবছরের অর্জিত মুনাফার ২০ শতাংশ প্রভিশনের জন্য রেখে বাকি ৮০ শতাংশ ইউনিটহোল্ডারদের মাঝে লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করার একটা প্রস্তাব দিয়েছি।”
ঢাকা/হাসনাত/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ ষ তহব ল শ য় রব জ র প রস ত ব দ আইস ব র প ন সমস য সরক র র র জন য র একট
এছাড়াও পড়ুন:
আরও কিছু সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনার উদ্যোগ
আরও কিছু সরকারি কোম্পানির শেয়ার সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আনতে চায় সরকার। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় সরকারি কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়। আর এসব কোম্পানিকে বাজারে আনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি)। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, আপাতত এসব কোম্পানির ৫ শতাংশ করে শেয়ারবাজারে ছাড়া হবে। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার ‘পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত অর্থ উপদেষ্টা বৈঠকে ছিলেন না। এমনকি বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, শিল্পসচিব মো. ওবায়দুর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানেরও উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তারা কেউই বৈঠকে ছিলেন না।
শেষ পর্যন্ত বৈঠকে অংশ নেন অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ প্রমুখ।
এর আগে ১১ মে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা, বিএসইসির চেয়ারম্যান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ওই বৈঠকে পুঁজিবাজার উন্নয়নে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেন। সেসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সময়সীমা নির্ধারণ এবং কোনো দপ্তর কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে, তা–ও ঠিক করা হয়েছে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়েই আজকের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। নির্দেশনা বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরকে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। তবে অনেকেই শেষ পর্যন্ত বৈঠকে ছিলেন না।
সরকারি যেসব কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে, এর মধ্যে রয়েছে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস সিস্টেম, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি, সোনারগাঁও হোটেল, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, লিকুফায়েড পেট্রোলিয়ম গ্যাস, সিলেট গ্যাসফিল্ড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ, চিটাগাং ডকইয়ার্ড, কর্ণফুলী পেপার মিলস, বাংলাদেশ ইনস্যুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার ফ্যাক্টরি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, টেলিটক ও টেলিফোন শিল্প সংস্থা।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ১১ মের বৈঠকে যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন, এর মধ্যে রয়েছে—যেসব বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারি মালিকানা রয়েছে, সেগুলোকে দ্রুত বাজারে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ; দেশের বেসরকারি খাতের ভালো ও বড় বড় কোম্পানিকে বাজারে আনতে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করপোরেট করহারের ব্যবধান বাড়ানো; বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ এনে পুঁজিবাজার সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া; পুঁজিবাজার–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বড় কোম্পানিগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকের বদলে পুঁজিবাজারমুখী করা। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোকে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
বিএসইসির পক্ষ থেকে আগামী বাজেটে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করহারের ব্যবধান ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএসইসি।
বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, ভালো ও বড় কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে না চাইলে সরকার জোর করবে না। তাই প্রণোদনা দিয়ে তাদের বাজারে আনার চেষ্টা চলছে।