রাজধানীর উত্তরা এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে একটি রাইফেল ও গুলি উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গভীর রাতে এই অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানায় সেনাবাহিনী।

শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত উত্তরা এলাকার বিভিন্ন সেক্টরে অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পরিচালিত এ অভিযানে ১৬ নম্বর সেক্টর থেকে একটি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল, শটগানের ১৮টি কার্তুজ ও দুটি গুলি উদ্ধার করা হয়।

আইএসপিআর আরও জানায়, অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। প্রাপ্ত অবৈধ অস্ত্র ও গুলি রাজধানীর তুরাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং বেআইনি কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে পেশাদারি ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মব ভায়োলেন্সের চ্যালেঞ্জ

গত বছরের ৫ আগস্ট একদিকে যেমন দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক স্থবিরতা ভেঙে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি মব সন্ত্রাস বা গণপিটুনির মতো এক গভীর সামাজিক ব্যাধি নতুনরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। 

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত গণপিটুনিতে ১১৯ জন নিহত হয়েছেন; আহত ৭৪ জন। গত ১০ বছরে গণপিটুনিতে মোট ৭৯২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ২০২৪ সালে। গত বছর এ ধরনের ঘটনায় ১৭৯ জন নিহত হয়েছেন।

সারাদেশে মব ভায়োলেন্সের যে চিত্র উন্মোচিত হয়েছে, তা কেবল আইনশৃঙ্খলার সংকট নয়, বরং রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, সামাজিক সংহতির অভাব এবং মানবিক মূল্যবোধের এক গভীর অবক্ষয়কে নির্দেশ করে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গণরোষ বা স্বতঃস্ফূর্ত জনতার প্রতিক্রিয়া নতুন নয়। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে, বিশেষ করে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে আইনের শাসনের দুর্বলতা এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থাহীনতা গণপিটুনির মতো ঘটনাকে ইন্ধন জুগিয়েছে। ঔপনিবেশিক আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন সরকার পরিবর্তনের সময়েও এমন প্রবণতার নজির পাওয়া যায়।

৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে মব সন্ত্রাসের যে ব্যাপকতা ও নির্মমতা দেখা গেছে, তা পূর্ববর্তী সব ঘটনাকে ছাড়িয়ে গেছে। 

এটা দুঃখজনক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে নির্ভয়ে রাজপথে যে তরুণ সমাজ নেমেছিল, তাদেরই একটি অংশকে গণপিটুনির মতো অমানবিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। এটি যেমন তাদের মহান ত্যাগের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তেমনি আইনের শাসনের প্রতি তাদের নিজেদেরই বিশ্বাসের দুর্বলতা ফুটিয়ে তোলে। সম্ভবত দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, বিচারহীনতার হতাশা এবং তাৎক্ষণিক আবেগের বশবর্তী হয়ে তারা এমন কাজ করেছে, যা তাদের মূল লক্ষ্য ও আদর্শের পরিপন্থি।

এটি গভীর সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক সংকট, যেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা নিজেই অন্যায়ের পথে পরিচালিত হচ্ছে। মব ভায়োলেন্স থেকে পরিত্রাণের পথ প্রথমত, সুসংহত রাজনৈতিক ও সামাজিক রোডম্যাপ। দ্বিতীয়ত, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। তৃতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ ও সহনশীলতার বার্তা প্রদান। চতুর্থত, গুজব ও ভুয়া তথ্য প্রতিরোধে কার্যকর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়ানো ও সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে উস্কানিমূলক বা মিথ্যা তথ্য দ্রুত চিহ্নিত করে অপসারণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সাইবার অপরাধ দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সক্ষমতা বাড়ানো এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। 

মব ভায়োলেন্স ঠেকাতে সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা নাগরিক সমাজ, মানবাধিকারকর্মী এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। 

এটা সত্য, ৫ আগস্টের ঘটনা প্রবাহ বাংলাদেশকে কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এ সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা এবং সাধারণ জনগণের সুরক্ষায় জনতার পাশে থেকে কাজ করে গেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

সম্প্রতি জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের মবতন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান সাধারণ মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তির আভাস দিয়েছে। বিশেষ করে রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বাসায় হামলার পর সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থানকে অনেকেই মব সংস্কৃতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী বার্তা হিসেবে মনে করছেন।

আশা করা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম, সঠিক আইনি অবকাঠামো, সংবাদমাধ্যমের জোরালো ভূমিকা, একই সঙ্গে ব্যাপক জনসচেতনতা মব ভায়োলেন্সের ক্ষত সারিয়ে তুলবে। 

রাজু আলীম: কবি ও লেখক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বরিশালে কোস্ট গার্ডকে ‘হুমকি’, গ্রেপ্তার ২
  • জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত, অংশ নিলেন প্রধান উপদেষ্টা
  • রাজধানীর নিরাপত্তা নিয়ে আমরা ১০০ ভাগ কনফিডেন্ট: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • যৌথ অভিযানে ‘সীমান্তের ডন’ খ্যাত শাহীন ডাকাতসহ গ্রেপ্তার ৩
  • যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযানে সারা দেশে গ্রেপ্তার ৩৮৪
  • যৌথ বাহিনীর অভিযানে আট দিনে গ্রেপ্তার ৩৮৪
  • নিয়ম মানলে আইনশৃঙ্খলা-যানজট নিয়ন্ত্রণে থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ঈদযাত্রা: কমলাপুরে ঘরমুখো মানুষের ঢল
  • মব ভায়োলেন্সের চ্যালেঞ্জ