আসামে মন্দিরে কারা রেখে গেল গরুর মাংস, এ নিয়ে দুই পক্ষে ঘিরে উত্তেজনা
Published: 11th, June 2025 GMT
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের পশ্চিম অংশের ধুবড়ি জেলায় একটি মন্দিরের চত্বরে পশুর মাংস পড়ে থাকা নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এ ঘটনার পর সেখানে মানুষের জমায়েত এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, এই মাংস গরুর। এ ঘটনার জেরে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গত রোববার সকালে ধুবড়ি শহরের একটি হনুমান মন্দির চত্বরে পশুর মাংস পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর গত সোমবার সকাল থেকে এলাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। মন্দির–সংলগ্ন একটি রাস্তা অবরোধ করেন বাসিন্দারা। তাঁরা স্লোগান দেন এবং টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান।
স্থানীয় প্রশাসন প্রাণীর দেহাবশেষ সরাতে গেলে তাদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। বিক্ষোভকারীরা দাবি করেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত দেহাবশেষ সরাতে দেওয়া হবে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, এ নিয়ে তৃতীয়বার ওই মন্দিরে এমন ঘটনা ঘটল। আসাম বিজেপিশাসিত রাজ্য।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রশাসনের ঘোষণা দিয়েছে, ওই এলাকায় সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ধুবড়ি টাউনে সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। কেবল চিকিৎসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দমকল ও জরুরি পরিষেবা প্রভৃতি খোলা থাকবে। পুলিশ, সেনাবাহিনী, আধা–সামরিক বাহিনী এবং নিরাপত্তাবিষয়ক অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের ছাড় দেওয়া হবে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’–কে ধুবড়ির জেলা শাসক দিবাকর নাথ বলেছেন, সন্দেহ করা হচ্ছে, স্থানীয় হনুমান মন্দিরের কাছে গরুর দেহাবশেষ পাওয়া যায়। এর জেরে সোমবার থেকে সেখানে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলেও গতকাল রাতে উত্তেজনা অনেকটাই কমে এসেছে। সব সম্প্রদায়কে নিয়ে শান্তি কমিটি গঠন করার পাশাপাশি এলাকায় পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা আজ বুধবার এই বিষয়ে উসকানিমূলক বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুসলিমরা গরুর মাংস খায়, হিন্দু এলাকায় ফেলে দেয়, হিন্দুদের তাড়িয়ে দেয়, তারপর জায়গা দখল করে। গরুর মাংসকে একটা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা আমরা সহ্য করব না। আমরা এটা কখনই হতে দেব না।’
হিমন্তের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্সে’ প্রকাশ করেছেন আসামের স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ এবং সেচ মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী অশোক সিংঘল।
অশোক ঘটনার সময় থেকে ধারাবাহিকভাবে উত্তেজনায় মদদ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি ধারাবাহিকভাবে ‘এক্সে’ যা লিখছেন, তার বিষয়বস্তু নিয়ে সর্বভারতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যম একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সিংঘল রোববার থেকে নিয়মিত যা লিখছেন, তার মোটামুটি বিষয়বস্তু হলো—ধুবড়িতে যে ঘটনা ঘটছে, তা হঠাৎ ঘটছে না। তা দীর্ঘদিন ধরে চলা কংগ্রেসের রাজনীতির ফল। এখন মুসলিম সম্প্রদায় গরু খেয়ে তার দেহাবশেষ হিন্দুদের মন্দিরে ফেলছে। সিংঘলের মতে, এর কারণ ধুবড়ির হিন্দু জনসংখ্যা ক্রমশ কমছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ডাকসুর বিবৃতি: বিএনপি তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে
জুলাই সনদে সই করলেও বিএনপি ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে, এমন বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। রোববার বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার সম্মিলিত বিপ্লব। শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ ও একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোনো প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না। কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে সই করলেও বিএনপি ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে।
ডাকসুর বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে, যা সরাসরি ছাত্র-জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহাহিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়। কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে ছাত্র-জনতা সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে।