হিন্দি টিভি সিরিয়াল ও তেলেগু সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সানা মকবুল খান লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সম্প্রতি তার এ রোগ শনাক্ত হয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের পক্ষ থেকে সানা মকবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এ আলাপচারিতা তিনি বলেন, “আমি বেশ কিছু দিন ধরে অটোইমিউন হেপাটাইটিসে ভুগছি। সম্প্রতি আমার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। আমার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমার লিভারকে মারাত্মকভাবে আক্রমণ করতে শুরু করেছে। এখন আমার লিভার সিরোসিস ধরা পড়েছে।”
ইমিউনোথেরাপি শুরু করেছেন সানা মকবুল। এ তথ্য উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী বলেন, “আমি শক্ত রাখার চেষ্টা করছি। একদিন পর পর চিকিৎসা নিচ্ছি।”
আরো পড়ুন:
তারকাবহুল ‘হাউজফুল ৫’ কত টাকা আয় করল?
কারিশমা কাপুরের প্রাক্তন স্বামী সঞ্জয় মারা গেছেন
লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করাতে চাচ্ছেন না ৩১ বছরের সানা। তা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, “চিকিৎসক এবং আমি লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট এড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আমি ইমিউনোথেরাপি শুরু করেছি, সত্যি এটি কঠিন এবং ক্লান্তিকর। কিছু সময় অন্য সময়ের তুলনায় কঠিন। তবে আমি আশায় বুক বেঁধে আছি। লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের মতো বড় পদক্ষেপ ছাড়াই আমি সুস্থ হতে চাই। যদিও এটা সহজ হবে না। কিন্তু আমি এত সহজে হাল ছেড়ে দিতে রাজি নই।”
সানার বাবা-মা তার পাশে আছেন। তা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, “এ পরিস্থিতিতে আমার পরিবার আমার পাশে রয়েছে। তবে আমার জন্য তাদেরকে কষ্টে থাকতে দেখা, আমার বেঁচে থাকার চেয়েও কঠিন। তারা আমাকে ভেঙে পড়তে দেখছে। আমার মা খুব বেশি কিছু বলেন না। কিন্তু তার নীরবতা শক্তিতে ভরপুর। আমার বাবা চিন্তিত থাকলেও আমার সামনে তার সাহসী মুখটাই দেখান। তারা আমাকে কখনো একা বোধ করতে দেন না। আরোগ্য লাভ করা কেবল ওষুধের উপর নির্ভর করে না; এটি ভালোবাসার উপরও নির্ভর করে।”
লিভার সিরোসিস কী?
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, যখন লিভারের রোগের নানা পর্যায়ের পর কোষগুলো এমনভাবে আক্রান্ত হয় যে, লিভার আর কাজ করতে পারে না, সেই পর্যায়কে লিভার সিরোসিস বলে বর্ণনা করা হয়। যখন এই রোগে আক্রান্ত হয়, তখন লিভার বা যকৃৎ তার স্বাভাবিক কাজগুলো, যেমন বিপাক ক্রিয়া, রক্ত জমাট বাঁধার উপকরণ তৈরি, ওষুধ ও রাসায়নিকের শোষণ, খাদ্যের পুষ্টি উপাদানের ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি করতে পারে না।
লিভার সিরোসিস একটি মারাত্মক ও অনিরাময়যোগ্য রোগ। লিভারের নানারকম রোগের মধ্যে এটিকে চূড়ান্ত পর্যায়ের একটি রোগ বলে গণ্য করা হয়। এই রোগে আক্রান্ত হলে যকৃতের ট্রান্সপ্লান্ট বা প্রতিস্থাপন ছাড়া পুরোপুরি আরোগ্য হয় না। এ কারণে রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের প্রতি গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
মডেলিংয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেন সানা মকবুল। বিগ বস ওটিটি’র তৃতীয় সিজনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। বেশ কয়েকটি দক্ষিণী সিনেমায় অভিনয় করেছেন সানা মকবুল। ‘নেমেসিস’ সিনেমার মাধ্যমে তার বলিউডে অভিষেক হওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ভ ন টক মকব ল
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।