দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত শিশু-কিশোরী ধর্ষণের বেশ কয়েকটি খবর যেইভাবে সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসিয়াছে, উহা উদ্বেগজনক। আরও হতাশার বিষয়, কুষ্টিয়ায় নিতান্তই চপেটাঘাত দিয়া শিশু ধর্ষণের ন্যায় অপরাধের ‘বিচার’ সম্পন্ন হইয়াছে।
আমরা মনে করি, এহেন অপরাধের বিস্তারের পশ্চাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কুপ্রভাব রহিয়াছে। উপরন্তু ধর্ষণের বিচারের ক্ষেত্রে কুষ্টিয়া যেই উদাহরণ তৈয়ার করিয়াছে, উহাতে দুঃখজনক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও পরিস্ফুট।
মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রবিবার হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে চলন্ত বাসে কলেজছাত্রী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হইয়াছে। একই দিবসে গাজীপুরের শ্রীপুরে এটিএম বুথে ধর্ষণের শিকার হইয়াছে পোশাক শ্রমিক। রাজবাড়ীর পাংশায় দুই স্কুলছাত্রীকে জিম্মি ও ধর্ষণ করা হইয়াছে। শনিবার নাটোরের বড়াইগ্রামে কিশোরী ধর্ষণের শিকার হইয়াছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ঘটনা আরও ভয়ানক। তথায় গত বৃহস্পতিবার প্রেম ও ধর্ষণে ব্যর্থ হইয়া স্কুলছাত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হইয়াছে। এই সকল অঘটন প্রমাণ করিতেছে, ধর্ষণ মহামারির রূপ পরিগ্রহ করিয়াছে।
গত মার্চ মাসে ধর্ষণের শিকার মাগুরার শিশু আছিয়ার হৃদয়বিদারক মৃত্যু দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়াছিল। ইহার পর সরকার শিশু ধর্ষণের বিচার দ্রুত সম্পন্নকরণের লক্ষ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছিল। ঐ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাইয়া অত্র সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা বলিয়াছিলাম, ন্যায়বিচারের স্বার্থে শুধু ধর্ষণের তদন্ত ও বিচারের সময় সংক্ষিপ্ত করাই যথেষ্ট নহে; তদন্ত ও বিচারকার্যে নিয়োজিতদেরও নারী অধিকার সম্পর্কে সংবেদনশীল করিয়া তোলা জরুরি। বলা বাহুল্য, নাগরিক ও সমাজপতিদেরও যে এই সংবেদনশীলতা গুরুত্বপূর্ণ, কুষ্টিয়ার কথিত সালিশই উহার প্রমাণ।
কেবল দ্রুত বিচারের আইন করিলেও যে ধর্ষণের ঘটনা হ্রাস পাইবে না– সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহই উহার সাক্ষ্যবহ। আমরা জানি, ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষণ কিংবা নারী নির্যাতনের ঘটনায় মামলাই হয় না। মামলা হইলেও আইনের মারপ্যাঁচে অপরাধী নিষ্কৃতি পায়। অনেক দিন ধরিয়াই ধর্ষণ আইন কঠোর করা ও দ্রুত বিচারের দাবি ছিল। অবশেষে উহা হইয়াছে, কিন্তু ধর্ষণ হ্রাস পাইতেছে না কেন? মার্চ মাসে মাগুরায় শিশু আছিয়ার ধর্ষণের প্রতিবাদে তরুণ প্রজন্ম ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করিয়াছিল। আমরা মনে করি, তারুণ্যের এই জাগরণ ও প্রতিবাদ অব্যাহত রাখিতে হইবে।
সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখিবার বিকল্প নাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকিলে সড়ক-মহাসড়কে চলন্ত বাসে ধর্ষণের অঘটনা ঘটিবার কথা নহে। প্রশাসন কঠোর হইলে সমাজপতিরা চপেটাঘাতে ধর্ষণের ন্যায় অপরাধের বিচার সম্পন্ন করিতে সাহস করিত না। যথায় শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হইবার কথা, তথায় এহেন মীমাংসা সালিশের নামে প্রহসন বৈ কিছু নহে। বলা বাহুল্য, সামাজিক এহেন দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই ধর্ষণের শিকার হইয়াও আত্মহত্যার ন্যায় অঘটন ঘটিয়া থাকে। এমনকি কন্যা ধর্ষিত হইবার পর পিতা মামলা করিলে পিতাকে হত্যার ঘটনাও এই সমাজে ঘটিয়াছে।
নারী ভুক্তভোগী হওয়া সত্ত্বেও কেন আদালতের দ্বারস্থ হইতে ভয়– তাহার জবাবও ইহাতে স্পষ্ট। আমরা চাই কেবল কথায় নহে, কাজেও ধর্ষণ-নির্যাতন রোধের দায়িত্বটি সরকার অগ্রাধিকারে রাখিবে। বিশেষ নির্দেশনার মাধ্যমে প্রশাসন ও পুলিশ এই ব্যাপারে আরও তৎপর হইতে পারে। সাম্প্রতিক প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনার আসামিকে গ্রেপ্তার করিয়া দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারের ব্যবস্থা করিতে হইবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণের ন্যায় অপরাধ যদ্রূপ বর্ধমান, তদ্রূপ অপরাধী আরও বেপরোয়া হইতেছে। আমরা প্রত্যাশা করি, প্রশাসনের দীর্ঘ হস্ত দিয়া সেই অপরাধীদের হস্তে লৌহবেড়ি পরাইতেই হইবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর য় ছ অপর ধ হইয় ছ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
বাম দলগুলোর প্রতিক্রিয়া: ‘তফসিল হয়েছে, তবে সামনে বড় চ্যালেঞ্জ’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশের বাম দলগুলো।
তারা দাবি করছেন, তারিখ ঘোষণার পরও মাঠে এখনো কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি,বরং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। তাই ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বিত ও দায়িত্বশীল ভূমিকা এখন জরুরি।
আরো পড়ুন:
অসত্য তথ্য ছড়ানোও শাস্তিযোগ্য অপরাধ: সিইসি
তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “১৭ বছর পর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে পারে এই তফসিল। জনগণও নিজেদের দল ও প্রতীকে ভোট দেওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। ১২ ফেব্রুয়ারি সেই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।”
তিনি মনে করেন, “একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট-বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে নতুন অভিযাত্রার ইঙ্গিত হলেও সামনে বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে।”
“একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশ প্রয়োজন, তা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে এনে কঠোর নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের আস্থা ফেরানো জরুরি। ভোটে টাকার খেলা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে”, বলেন সাইফুল হক।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স তফসিল ঘোষণায় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এখন থেকে প্রতিটি মুহূর্তে ইসি ও সরকারকে এমন সব পদক্ষেপ নিতে হবে, যা দেখলে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবে, এবার সত্যিকার অর্থে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।”
তিনি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “প্রার্থী হওয়া ও ভোট দেওয়ার সমান সুযোগ সবার জন্য নিশ্চিত করতে ইসিকে আরো সক্রিয় হতে হবে। প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদকে পুনর্গঠন করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতার বার্তা আরো দৃশ্যমান করতে হবে।”
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “বহুল প্রত্যাশিত তফসিল ঘোষণায় স্বস্তি এসেছে, তবে অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ এখনো মসৃণ নয়।”
“নির্বাচনকে টাকার প্রভাব, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা এবং প্রশাসনিক কারসাজিমুক্ত করতে হবে। সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলার অবনতিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে”, যোগ করেন তিনি।
সরকার, ইসি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা এবং জরুরি উদ্যোগ ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন বজলুর রশীদ ফিরোজ।
ঢাকা/এএএম/রাসেল