একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বেশ কিছু অংশীজনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে প্রথম এবং প্রধান অংশীজন হলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি সাংবিধানিকভাবে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, যার দায়িত্ব সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যেই সংবিধানে তাদের দায়িত্ব সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাদের অগাধ ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে।

পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হলো সরকার অর্থাৎ সরকারের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়।

তারপর গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হলো রাজনৈতিক দল এবং তাদের প্রার্থীরা। রাজনৈতিক দল যদি সদাচরণ বজায় রাখে এবং প্রার্থীরা যদি ছলে-বলে-কৌশলে নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার জন্য ব্যাকুল না হন, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, এখন নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকার রয়েছে। এ সরকারের আমলে বর্তমান ইসি নিয়োগপ্রাপ্ত। ফলে তারা কোনো দলের প্রতি অনুগত নয় বলেই বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো মনোনয়ন নিয়ে যে বিরোধ, সহিংসতা এবং বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করছে, তা নির্বাচনী পরিবেশকে অনেকটা কলুষিত করছে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

গতকাল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। এখন প্রার্থী চূড়ান্ত করার পালা শুরু হবে। এই পর্যায়ে অশুভ প্রতিযোগিতা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। মনোনয়ন পাওয়ার জন্য প্রতিযোগীরা ছলে-বলে-কৌশলে সর্বশক্তি নিয়োগ করলে তা সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে। তাই এখন বলটা রাজনৈতিক দলের কোর্টেই।

নির্বাচনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হলো নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম। নাগরিক সমাজকে ‘ওয়াচডগ’-এর ভূমিকা পালন করে জনগণকে সচেতন ও সোচ্চার করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেশের নাগরিক সমাজের একটি বড় অংশ এখন ‘ওয়াচডগ’ না হয়ে ‘ল্যাপডগে’ পরিণত হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে নাগরিক সমাজকে দুর্বল করা হয়েছে। গণমাধ্যমেও পক্ষপাতিত্ব দেখা যায়।

সব অংশীজনের মধ্যে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাজনৈতিক দলের। তারা যদি সদাচরণ বজায় রাখে, সহিংসতা থেকে দূরে থাকে এবং নিজেদের মধ্যকার অশুভ প্রতিযোগিতা পরিহার করে, তাহলে নির্বাচনের পথ সুগম হবে।

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও তারা সাহসিকতা দেখাতে পারবে কি না—এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তারা আইনকানুন যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারবে কি না, সেটিও অনিশ্চিত। এরই মধ্যে দেখা গেছে, আরপিও অনুযায়ী তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে প্যানেল গঠন করে মনোনয়ন দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো দলই এই প্যানেল তৈরি করেনি। এটি সুস্পষ্ট আরপিও লঙ্ঘন, কিন্তু নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে যে সন্দেহ ছিল, তফসিল ঘোষণার পর তার অনেকটাই দূর হয়েছে। তবে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে সহিংসতায় লিপ্ত হলে নির্বাচন নিয়ে আবার অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। একই সঙ্গে যারা পরাজিত বা পলাতক শক্তি রয়েছে, তারাও নির্বাচন ভন্ডুল করার চেষ্টা করতে পারে। যদিও তারা খুব বেশি কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না, তবে রাজনৈতিক দলগুলোর অশুভ প্রতিযোগিতা যদি বন্ধ না হয়, তাহলে পরাজিত শক্তিও সুযোগ পাবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক দল অ শ জন হল সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা রয়েছে, সংশয়ও আছে

প্রথম আলোর জনমত জরিপে সার্বিকভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে যে মতামত উঠে এসেছে, তা আমার বিবেচনায় বাস্তবতার প্রতিফলন।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এখন মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা রয়েছে। নির্বাচিত সরকারের সময়ে তাঁরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছেন। পাশাপাশি তাঁরা আশা করছেন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, বিনিয়োগ বাড়ানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, নারীর চলাফেরায় নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রাখার ক্ষেত্রে নির্বাচিত সরকার সফল হবে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৬ বছর পর মানুষ ভোট দিতে পারবেন, সেই প্রত্যাশা তো রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা সেভাবে আশা রাখতে পারছেন না। একই সঙ্গে তাঁদের মধ্যে সংশয়ও রয়েছে। তাঁরা দুর্নীতি দমন এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে নির্বাচিত সরকারের ওপর আশাবাদী হতে পারছেন না। ফলে জরিপে মানুষের ভাবনার একধরনের মিশ্র চিত্র উঠে এসেছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৭৩ শতাংশ আশা করছেন, নির্বাচিত সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সফল হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলতে যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বোঝায়, তাদের নৈতিকভাবে বড় ধরনের অধঃপতন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছে বলেও দেখতে পাচ্ছি না। নির্বাচিত সরকার আসার পর চট করে এই বাহিনীর মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে, সেটা ভাবাটা খুব যৌক্তিক মনে করি না। একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পুনর্গঠন হতে হবে।

আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি যেভাবে চলে আসছে, তাতে নির্বাচনের পর যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা প্রশাসন বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণভাবে দলীয় প্রভাবমুক্ত করার মানসিকতা দেখাতে পারবেন, সেই আস্থা বাংলাদেশে গড়ে ওঠেনি।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নির্বাচিত সরকার সফল হবে বলে আশা করছেন ৬৯ শতাংশের বেশি মানুষ। এই আশা করাটা খুব অযৌক্তিক না বলে আমি মনে করি। এই যে দেড় বছর পার হয়ে গেল, এর মধ্যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, বাণিজ্যব্যবস্থায় তেমন একটা উন্নতি হয়নি। এটার অন্যতম কারণ, যখন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকে, অনিশ্চয়তা থাকে, তখন বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়ে না। ফলে সবাই আশা করছে যে নির্বাচনের পর পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে। একই ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলেও ভাবা হচ্ছে।

প্রথম আলো গ্রাফিকস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দিনাজপুরে যক্ষ্মা না থাকলেও রোগী, কফের নমুনায় জালিয়াতি
  • বাম দলগুলোর প্রতিক্রিয়া: ‘তফসিল হয়েছে, তবে সামনে বড় চ্যালেঞ্জ’
  • তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে জামায়াত, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি
  • জাতীয় নির্বাচন ১২ ফেব্রুয়ারি
  • ৩৫ ফুট নিচে ক্যামেরা পাঠিয়েও দেখা যায়নি শিশুটিকে
  • এভারকেয়ারের সামনে কড়া নিরাপত্তা, বিএনপি নেতা–কর্মীদের ভিড় নেই
  • ‘১০ বছর ধরে অপেক্ষা করছি, মৃত্যুর আগে ছেলেকে ফেরত চাই’
  • নরসিংদীর রায়পুরায় বিশেষ কম্বিং অপারেশন করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা রয়েছে, সংশয়ও আছে