দিনাজপুরে যক্ষ্মা না থাকলেও রোগী, কফের নমুনায় জালিয়াতি
Published: 12th, December 2025 GMT
দিনাজপুর জেলায় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে অনিয়ম ধরা পড়েছে। সেখানে ভুয়া যক্ষ্মারোগী তৈরি ও কফের নমুনা জালিয়াতি করা হয়। ওষুধ বিতরণেও আছে অনিয়ম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো দিনাজপুর জেলার সিভিল সার্জনের প্রতিবেদনে এই অনিয়মের কথা বলা হয়েছে। গত বুধবার দিনাজপুরের সিভিল সার্জন মো. আসিফ ফেরদৌস স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককে (এমবিডিসি) এ প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।
১ ডিসেম্বর দিনাজপুর শহরে ব্র্যাকের যক্ষ্মানির্ণয় কেন্দ্রে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালায়। আদালত ব্র্যাকের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির জেলা ব্যবস্থাপক মো.
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযানের পর থেকে দিনাজপুরের সব উপজেলা ও মাঠপর্যায়ে ব্র্যাক নিজ উদ্যোগে সব ধরনের সেবা বন্ধ রেখেছে। দিনাজপুরের সিভিল সার্জন মো. আসিফ ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্র্যাকের স্থানীয় দু-একজন কর্মকর্তা ও কর্মী অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। আমার মনে হয় না ব্র্যাকের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে জড়িত বা তাঁরা এসব বিষয়ে অবগত আছেন।’
যে মানুষের যক্ষ্মা নেই, তাঁকে যক্ষ্মারোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা। এই কাজ করতে গিয়ে কফের নমুনায় জালিয়াতি করা হয়। অর্থাৎ যক্ষ্মা আছে, এমন রোগীর কফ সুস্থ মানুষের কফের সঙ্গে মিশিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং সুস্থ মানুষকে যক্ষ্মারোগী হিসেবে তালিকাবদ্ধ করা হয়।কী অনিয়ম জানা গেল
সিভিল সার্জনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য যক্ষ্মারোগী নির্বাচনে অসততা আছে। এর অর্থ হচ্ছে, যে মানুষের যক্ষ্মা নেই, তাঁকে যক্ষ্মারোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা। এই কাজ করতে গিয়ে কফের নমুনায় জালিয়াতি করা হয়। অর্থাৎ যক্ষ্মা আছে, এমন রোগীর কফ সুস্থ মানুষের কফের সঙ্গে মিশিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং সুস্থ মানুষকে যক্ষ্মারোগী হিসেবে তালিকাবদ্ধ করা হয়।
সিভিল সার্জন আসিফ ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, রোগীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এটা করা হচ্ছে। যাঁর যক্ষ্মা হয়নি, তাঁকে যক্ষ্মার ওষুধ খাওয়ানো হয়। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। এটি অপরাধ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযানের সময় ব্র্যাক ভবনের বিভিন্ন তলা থেকে পরিত্যক্ত ওষুধ ও ওষুধের পাত্র উদ্ধার করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। দিনভর পরিচালিত এ অভিযানে ভুয়া রোগী তৈরি, নিয়মবহির্ভূত ওষুধ মজুত, ওষুধের স্টক লেজার ঘষামাজা, তদন্তে অসহযোগিতা, আক্রমণাত্মক আচরণ—সবকিছুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমলে নেন।
সিভিল সার্জন আসিফ ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, রোগীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এটা করা হচ্ছে। যাঁর যক্ষ্মা হয়নি, তাঁকে যক্ষ্মার ওষুধ খাওয়ানো হয়। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। এটি অপরাধ।কেন এই অভিযান
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ে কাজ করে ব্র্যাকের নেতৃত্বে বেশ কিছু এনজিও। দিনাজপুরের সিভিল সার্জন তাঁর প্রতিবেদনে বলেছেন, যক্ষ্মা কার্যক্রমে অস্বচ্ছতা, তথ্যগত অসংগতি দেখা দেওয়ায় সিভিল সার্জন কার্যালয় বিষয়টি নজরদারিতে নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়।
কর্মীদের নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় কয়েকটি এলাকায় আমাদের কিছু কার্যক্রম সাময়িকভাবে সীমিত করা হয়েছে, তবে প্রয়োজনীয় সব পরিষেবা অব্যাহত আছে।ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক আকরামুল ইসলামব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক আকরামুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দিনাজপুরে ব্র্যাকের যক্ষ্মানির্ণয় কেন্দ্রের ঘটনাটি সম্পর্কে তাঁরা অবগত। এ ঘটনায় ব্র্যাকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলমান। কেউ অনিয়ম করে থাকলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ‘কর্মীদের নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় কয়েকটি এলাকায় আমাদের কিছু কার্যক্রম সাময়িকভাবে সীমিত করা হয়েছে, তবে প্রয়োজনীয় সব পরিষেবা অব্যাহত আছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স ভ ল স র জন প রথম আল ক পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর, প্রচার শুরু ২২ জানুয়ারি
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন রেখে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই তফসিল ঘোষণা করেন তিনি।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়পত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর। এর পরদিন অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাই করা হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশের বিরুদ্ধে প্রার্থীরা আপিল করতে পারবেন ১১ জানুয়ারি। আর আপিল নিষ্পত্তি হবে ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে।
নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। এর পরদিন ২১ জানুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ করা হবে।
নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে ২২ জানুয়ারি। প্রচার শেষ হবে নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে, অর্থাৎ ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটায়। আর ১২ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ৩০০ সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১২ কোটি ৭৬ লাখের বেশি। প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারেরাও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। নির্বাচনে কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৩ লাখের বেশি প্রবাসী ভোটার ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ১৬ মাসের মাথায় জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলো ইসি।
সময় ব্যবস্থাপনার জন্য এবার ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
অন্যদিকে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সরকার জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনী নির্বাচনী পরিবেশ যাতে নিশ্চিত হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন, যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে রেকর্ডসংখ্যক দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।