পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক অভূতপূর্ব বৈঠক করেছেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই বৈঠকটি এক ঘণ্টার জন্য নির্ধারিত থাকলেও তা দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে। প্রথমে ক্যাবিনেট রুমে দুপুরের খাবারের সময় ও পরে ওভাল অফিসে।

পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী গণসংযোগ অধিদপ্তর (আইএসপিআর) গতকাল বৃহস্পতিবার জানায়, ট্রাম্পের সঙ্গে এক ঘণ্টার নির্ধারিত বৈঠকের সময় থাকলেও দুজন দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠকে মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চার দিনের সংঘর্ষের পর ট্রাম্প যুদ্ধবিরতিতে সহায়তা করায় মুনির তাঁর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। ট্রাম্পও ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে’ পাকিস্তানের সহযোগিতার প্রশংসা করেন।

অবশ্য হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি। দুজনের বৈঠকে সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার সুযোগ ছিল না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি মুনিরের সঙ্গে বৈঠক করে ‘সম্মানিত বোধ’ করছেন।

তবে এই বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের মধ্যেও ট্রাম্প বৈঠকে ইরান-ইসরায়েল চলমান যুদ্ধের প্রসঙ্গ তোলেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রও জড়াতে পারে বলে তিনি আগে জানিয়েছেন।

ট্রাম্প বলেন, পাকিস্তানিরা ইরানকে খুব ভালোভাবে চেনে। অনেক দেশের চেয়েও ভালো। তিনি দাবি করেন, ‘তারা (পাকিস্তান) খুশি নয়।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের এই নতুন অধ্যায় পাকিস্তানের জন্য কঠিন হবে, বিশেষ করে ইরান ও চীন সংক্রান্ত ইস্যুতে। পাকিস্তানকে কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও ইসলামাবাদকে বিপরীতমুখী টানাপোড়েনে ফেলতে পারে।

ট্রাম্প ও মুনির কী নিয়ে আলোচনা করলেন

আইএসপিআর জানিয়েছে, মুনির ও ট্রাম্প অর্থনৈতিক উন্নয়ন, খনিজ সম্পদ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জ্বালানি, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং নতুন প্রযুক্তির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে কথা বলেন।

তবে দুই নেতা ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দেন।

আসিম মুনিরের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিক। ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ মার্কিন আলোচক স্টিভ উইটকফ।

সাংবাদিকদের উপস্থিতি না থাকায় বিশেষজ্ঞ মারভিন ওয়েইনবাউম মনে করছেন, এই বৈঠকের বিষয়বস্তু ছিল এতটাই সংবেদনশীল যে

দুই পক্ষই গণমাধ্যমে কিছু প্রকাশ করতে চাননি।

গত বুধবার সন্ধ্যায় ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে নীতিনির্ধারক ও গবেষকদের সঙ্গে এক নৈশভোজে অংশ নেন। সেই নৈশভোজে যোগ দেওয়া কয়েক ব্যক্তি আল–জাজিরাকে বলেন, মুনির বৈঠক সম্পর্কে বিশদ কিছু না বললেও এটিকে ‘অসাধারণ ও অত্যন্ত ইতিবাচক’ বলে উল্লেখ করেছেন।

ওই নৈশভোজে যোগ দেওয়া একজন বলেন, আসিম মুনির মন্তব্য করেছেন, বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ছিল।

আরেকজন বলেন, নৈশভোজে মুনির বলেছেন, ইরান বিষয়ে কী করা উচিত—যুক্তরাষ্ট্র তা ভালো করেই জানে। পাকিস্তান বিশ্বাস করে, ‘প্রতিটি সংঘাত আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে সমাধানযোগ্য করা যায়।

সম্পর্কোন্নয়নের সম্ভাবনা

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈঠক পাকিস্তানের জন্য এক বড় কূটনৈতিক সাফল্য।

পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় আফগানিস্তানে এবং ৯/১১-এর পর আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করেছে পাকিস্তান।

দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে ৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি সাহায্য দিলেও ইসলামাবাদকে ‘বিশ্বস্ত নয়’ বলেও বারবার অভিযোগ করেছে ওয়াশিংটন।

পাকিস্তানও বলেছে, ওয়াশিংটন সব সময় ‘আরও কিছু করতে হবে’ বলে চাপ দেয়। কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করে না।

স্টিমসন সেন্টারের এলিজাবেথ থ্রেলকেল্ড বলেন, এই সফর ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতির স্পষ্ট ইঙ্গিত’।

ওয়াশিংটনভিত্তিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সাহার খান বলেন, এখনই সম্পর্ক ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ বলা না গেলেও এটি স্পষ্টতই সম্পর্ক উষ্ণ হওয়ার দিকেই যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দেয়। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ট্রাম্পের স্বভাব অনুযায়ী চুক্তির আগে বাস্তবতা বুঝে নেওয়া দরকার।

এই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনকে এখন বুঝতে হবে, পাকিস্তানকে শুধু ভারত, চীন বা আফগানিস্তানের চশমায় দেখলে হবে না।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং (বাঁয়ে) ও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র আস ম ম ন র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বনানীতে গুলিবিদ্ধ সেই হাসপাতালকর্মীর মৃত্যু

রাজধানীর বনানীতে গুলিতে আহত হওয়া বক্ষব্যাধি হাসপাতালের এক সাবেক কর্মী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা গেছেন। সোমবার রাত সোয়া ১০টার দিকে তিনি মারা যান।

নিহত জামান হোসেন (৪০) বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন এবং একসময় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংগঠনের (অফিস ক্লাব) সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

জামান হোসেনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সোমবার রাত সোয়া ১০টার দিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি বনানী থানা-পুলিশকে জানানো হয়েছে।

জামানের বড় ভাই সালাউদ্দিন জানান, গত শুক্রবার রাত সোয়া আটটার দিকে বনানী থানাধীন বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির অফিস ক্লাবের সামনে চা খেতে যান জামান। এ সময় হঠাৎ মুখোশধারী দুই দুর্বৃত্ত দূর থেকে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়।

জামানের ডান চোখের পাশে গুলি লাগে। পরে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

নিহত জামান হোসেন মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ