গল টেস্টে জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ, জানালেন নাঈম
Published: 20th, June 2025 GMT
গল টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশ এমন এক অবস্থানে আছে, যেখান থেকে জয়, ড্র কিংবা হারতেও পারে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০ রানে পিছিয়ে থেকেও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮৭ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ। আগামীকাল গল টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিন। বাংলাদেশকে জিততে হলে স্কোরবোর্ডে ভালো পুঁজি তুলে লঙ্কানদের অলআউট করতে হবে। ড্র করতে হলেও ভালো পুঁজি দরকার। কারণ অলআউট করা না গেলেও যেন সারাদিন পার করতে পারে বাংলাদেশ। আবার পঞ্চম দিন বাংলাদেশ যদি ব্যাটিং ধসে পড়ে তাহলে ওয়ানডে স্টাইলে খেলে ম্যাচ জিততেও পারে লঙ্কানরা।
গল টেস্টের প্রথম ইনিংসে চতুর্থ দিন সকালে ৬ উইকেটে ৪৬৫ রান নিয়ে খেলতে নামে শ্রীলঙ্কা। উইকেটে ছিলেন কামিন্দু মেন্ডিস ও মিলান রত্নায়েকে। কিন্তু বিরতির পর মাঠে ফিরেই রীতিমতো ধসে পড়ে লঙ্কানরা। মাত্র ১৫ রানে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে ৪৮৫ রানে অলআউট হয় স্বাগতিক দল। স্পিন আক্রমণে নাঈম হাসান একাই তুলে নেন ৫টি উইকেট।
নাঈমের সেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দিন শেষে ৩ উইকেটে ১৭৭ রান সংগ্রহ করে দল। সব মিলিয়ে লিড এখন ১৮৭। ৩০০ রান পেরোলেই জয়ের পথ খুলে যেতে পারে বলেই মনে করছেন টাইগাররা।
দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে নাঈম জানান, জয়ের স্বপ্ন তারা দেখছেন খুব বাস্তবভাবেই। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের সামনে জেতার সুযোগ আছে। যদি আমরা ভালো একটা সংগ্রহ দাঁড় করাতে পারি, তাহলে পঞ্চম দিনে বল হাতে চেষ্টা চালানো যাবে। এমন উইকেটে শেষ দিনে অনেক কিছু হতে পারে।’
শ্রীলঙ্কার ইনিংসে শেষ দিকে কিভাবে এত দ্রুত উইকেট তুলে নিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে নাঈম বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি ভালো জায়গায় বল করতে। পেস ভ্যারিয়েশন এবং সিমের অবস্থান নিয়ে কাজ করেছি। প্রতিটা ব্যাটারকে আলাদা করে পরিকল্পনা করে বল করেছি।’
২০১৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন নাঈম। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেই এবার লঙ্কানদের বিপক্ষে জ্বলে উঠেছেন তিনি। ৫ উইকেট পাওয়া নিয়ে নাঈম বলেন, ‘ আলহামদুলিল্লাহ, খুব ভালো লাগছে। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ যে এমন সুযোগ দিয়েছেন, আমি সেটা কাজে লাগাতে পেরেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই উইকেটটা ব্যাটিংবান্ধব। তাই আমরা চেষ্টায় ছিলাম যেন দীর্ঘ সময় ধরে ভালো জায়গায় বল করি। রান না এলে ব্যাটাররা চাপে পড়ে। তখনই ভুল করার সম্ভাবনা থাকে। সেই পরিকল্পনা নিয়েই বল করেছি।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের নীরবতার কারণেই সংখ্যালঘুদের ওপর বারবার আক্রমণ হচ্ছে
বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হতে আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি মন্দির ও মণ্ডপে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। সরকারের নীরবতার কারণেই সংখ্যালঘুদের ওপর বারবার এমন আক্রমণ হচ্ছে। এ নিয়ে সংখ্যালঘুদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় দুর্গাপূজায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে হবে।
‘আসন্ন দুর্গাপূজার নিরাপত্তা, অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর, বৈষম্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাষ্ট্রের করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সনাতন পার্টি।
সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সনাতন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সুমন কুমার রায়। তিনি অনুষ্ঠান সঞ্চালনাও করেন। লিখিত বক্তব্যে সুমন কুমার বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বৈষম্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অতীতের যেকোনো সরকারের চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বেশি উপেক্ষিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত ও বৈষম্যের শিকার।
এ সময় আসন্ন দুর্গাপূজায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তাসহ তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি জানান সুমন কুমার রায়। পাশাপাশি বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ অন্যদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন তিনি।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দুর্গাপূজার নিরাপত্তার জন্য সরকারের কাছে সাহায্য চাইতে হয় উল্লেখ করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে বলেন, দুর্গাপূজার মাত্র কয়েক দিন বাকি আছে। গত সাত দিনে ছয়টি জেলায় দুর্গাপ্রতিমার ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। সরকারের নীরবতায় এ দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর বারবার আক্রমণ করা হচ্ছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘুবিষয়ক সম্পাদক মকবুল হোসাইন বলেন, পূজামণ্ডপে কেউ অপরাধ করলে তাঁদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তিনি দেশে শান্তি, সম্প্রীতি, শৃঙ্খলা, মানবতাকে রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন খান বলেন, দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টি দাবি নয়, এটি অধিকার। রাসুলের (সা.) বাণী মেনে চললে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার সুযোগ নেই।
গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, চারদিকে যখন প্রতিমা ভাঙা শুরু হয়ে যায়, তখনই বুঝবেন যে দুর্গাপূজা আসছে। আগামী দুর্গাপূজায় আর যেন এমন একটি ঘটনাও না ঘটে। বাংলাদেশে তাঁরা কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে ধর্মীয় উৎসব করতে চান না। সেটা ঈদে মিলাদুন্নবী হোক, বৌদ্ধপূর্ণিমা হোক বা দুর্গাপূজা। জনগণের সমর্থন নিয়ে নিরাপদে সমস্ত পূজা, পার্বণ, উৎসব পালন করতে চান তাঁরা।
পুলিশ, আনসার দেখে ভক্তরা বেশ ভয় পেয়ে যান উল্লেখ করে সুব্রত চৌধুরী বলেন, এখান থেকে বেরোনোর জন্য জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে দুর্গাপূজায় দুই কোটি টাকা অনুদান দিত। অন্তর্বর্তী সরকার গত বছর সেই অনুদান চার কোটি টাকা করেছে। এ বছর পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, ‘অন্যায় হচ্ছে। কারা প্রশাসনে ঢুকে আছে, আপনারা জানেন। এখানে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু করার নেই। গণতন্ত্রই পারে সব জায়গায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে।’
হাসান শাহ সুরেশ্বরী দীপু নুরি বলেন, আজকের দিনে এসে হিন্দু সম্প্রদায় সংখ্যালঘু। যাঁরা সুফিবাদী, মাজারপন্থী, অলি-আউলিয়াপন্থী, তাঁরা হিন্দু সম্প্রদায়ের থেকেও অধিক সংখ্যালঘু। এই সরকারের আমলে হিন্দু সম্প্রদায় যতটুকু আক্রান্ত হয়েছে, তার চেয়ে তাঁরা (সুফিবাদী, মাজারপন্থী, অলি-আউলিয়াপন্থী) বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। মাজারগুলো উৎসবের মতো করে ভাঙা হচ্ছে। এখন তাঁরাই সাচ্চা মুসলমান, যাঁরা অন্য ধর্মকে নিয়ে বেশি বিষোদ্গার করতে পারেন। হাসান শাহ সুরেশ্বরী দীপু নুরি বলেন, যারা (মাজারপন্থী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, নারী, খেলাধুলা, স্থাপত্য-ভাস্কর্য) সম্ভাব্য ভুক্তভোগী, তাদের একটি যোগসূত্র তৈরি করতে হবে।