তুলনা আর তর্কের বাইরে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন লুসাইলে সেই রাতে বিশ্বকাপ স্পর্শ করে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে তাঁর যে অদৃশ্য লড়াই ছিল, কয়েক বছর হলো সেটাও আগ্রহ হারিয়েছে ফুটবল বাজারে। ইউরোপের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফুটবলের রক্তচাপ কমাতে একরকম নিরিবিলিতেই আছেন মায়ামিতে। তার পরও পায়ে যখন বুট চড়ে, গায়ে দলের জার্সি, তখন সাঁইত্রিশের শরীরেও সতেরোর বিদ্যুৎ ছুটে যায়। ফুটবলের মাঝে পারিজাতের গন্ধ খুঁজে পান লিওনেল মেসি।
ক্লাব বিশ্বকাপে মায়ামির হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে এমন মায়াবী মেসিকেই খুঁজে পেল ফুটবল বিশ্ব। বাঁ পায়ে তাঁর নেওয়া ফ্রিকিক থেকেই ক্ষয়ে যাওয়া প্রেম জাগ্রত হলো ভক্তকুলের। পর্তুগালের ক্লাব এফসি পোর্তোর বিপক্ষে মেসির বাঁকানো ধনুকই যেন ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের দাম্ভিকতায় আঘাত হানল। কেননা ইউরোপের কোনো ক্লাবকে যে ফিফার আসরে আমেরিকার কোনো দল হারাতে পারে, সেটি কল্পনাতেই ছিল না কারও। কিন্তু যে দলে মেসির মতো ‘ফ্রিকিক কিং’ রয়েছে, সেখানে জাদুকরী কিছু যে ঘটবে না, সে দাবি জোর গলায় কেউই বলে দিতে পারে না। ফ্রিকিকের এই শিল্প যে তাঁর ‘গুরুবিদ্যা’। এক সময় দিয়েগো ম্যারাডোনার গুরুকুল থেকেই তা আত্মস্থ করেছিলেন। সহজে কি আর তা ভোলা যায়?
নিজের সময়ে স্পট কিকে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। ৬২টি গোল করেছিলেন তিনি শুধু ফ্রিকিকে ডিফেন্সের দেয়াল ভেঙে। ফুটবল ইতিহাসে আর্জেন্টিনার এ কিংবদন্তি এখনও ফ্রিকিক থেকে গোল স্কোরারদের বৈশ্বিক তালিকায় আট নম্বরে। সেখানে তাঁর শিষ্য মেসি আছেন তিন নম্বরে ৬৮টি গোল করে। তালিকার শীর্ষে আছেন ব্রাজিলের জুনিনহো। ৭৭টি গোল করেছেন ফ্রিকিক থেকে। তবে বছর পঞ্চাশের সাবেক এ মিডফিল্ডার তাঁর ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময়ই খেলেছেন স্বদেশি ক্লাব ভাস্কো দ্য গামার হয়ে। সে কারণে এ অঞ্চলের অনেকেই টেলিভিশনে তাঁর ‘কুনুকলেবল’ কৌশলের গোলগুলো উপভোগ করতে পারেনি টেলিভিশনে। সেদিক থেকে পেলের কিছু বিস্ময়কর ফ্রিকিক ইউটিউবে সার্চ দিয়ে দেখা যায়। একটি প্রজন্মের কাছে পেলেই ছিলেন ফুটবলের এ আকর্ষণীয় গোলের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার। ৭০টি গোল করে এই তালিকায় মেসির ঠিক ওপরেই তিনি।
ফুটবলে ফ্রিকিক থেকে গোল করা অন্যতম কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটি। গোলপোস্ট থেকে কিক নেওয়ার দূরত্ব, নির্ভুলতা, ডিফেন্ডার এবং গোলরক্ষকের সমন্বয়ে দেয়াল দিয়ে দৃশ্যমানতা আটকানোর চেষ্টা– এসব ভেদ করে তারাই গোলে রংধনু সৃষ্টি করতে পারে, যাদের মধ্যে অনন্য প্রতিভা রয়েছে। তবে এর সঙ্গে চেষ্টা এবং অনুশীলনেরও দরকার আছে। ইন্দ্রিয় সজাগ রেখে দূরত্ব আর বাতাসের বেগের সঙ্গে অঙ্ক কষার মতো নিষ্ঠা আছে। ঠিক এমন কথাই এক বিকালে মেসিকে কাছে ডেকে বলেছিলেন ম্যারাডোনা।
ঘটনাটা বছর ১৬ আগের। সে সময় আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের প্রধান কোচ ম্যারাডোনা মার্শেইয়ে ক্যাম্প বসিয়েছেন। এক দিন পর স্থানীয় একটি দলের সঙ্গে ম্যাচ। সেখানে অনুশীলনে মাশ্চেরানো, তেভেজ আর মেসি শট প্র্যাকটিস করছিলেন। বারবার মেসির ভুল হচ্ছিল। গোলকিপার হয় বল ঠেকিয়ে দিচ্ছিল, না হয় পোস্টের ওপর দিয়ে তা বেরিয়ে যাচ্ছিল। বিরক্ত মেসি সেখান থেকে বেরিয়ে লকাররুমে দিকে শাওয়ার নিতে যাচ্ছিলেন। সে সময় আর্জেন্টিনা দলের ফিটনেস কোচ ফার্নান্দো সিগনোরনি তাঁর একটি বইয়ে ঘটনাটির বর্ণনা দেন এভাবে। তখন ম্যারাডোনা এসে কাঁধে হাত রাখেন মেসির। বলতে থাকেন, ‘শট নিতে এত তাড়াহুড়া করো না। একটু সময় নাও। তোমার দৌড়ানোর গতি কমিয়ে দাও, তা নাহলে বলও জানবে না যে তুমি কী চাও।’
আর্জেন্টিনার সেই ফিটনেস কোচ লেখেন, ‘তারপর থেকে প্রতিদিন অনুশীলনের পর মেসি ফ্রিকিক নিয়ে বাড়তি সময় দিতে থাকে। সেটা সে যেমন বার্সেলোনাতেও করে, তেমনি আর্জেন্টিনা দলের অনুশীলনেও করে। এভাবে ফ্রিকিকে নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেয় মেসি।’
এরপর বার্সাতে পেনাল্টি কিকের চেয়েও ফ্রিকিক থেকে বেশি গোল পান মেসি। ৫০টি গোল করেছিলেন তিনি বার্সায় থাকতে, পিএসজিতে এসে দুটি, মায়ামিতে এসে পাঁচটি। আর্জেন্টিনার জার্সিতে করেছেন ১১টি। এভাবেই মেসির প্রতিটি ফ্রিকিকের সঙ্গেই যেন জড়িয়ে থাকে ম্যারাডোনার প্রতি তাঁর ‘গুরুদক্ষিণা’।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন ক ল ব ব শ বক প ইন ট র ম য ম আর জ ন ট ন ফ টবল র গ ল কর
এছাড়াও পড়ুন:
আল্লাহর ৯৯ নাম ও তার ফজিলত
মানুষ তার রবকে যত বেশি চেনে, তার ইমান তত দৃঢ় হয়, ভালোবাসা তত গভীর হয়, আমল তত নিখুঁত হয়। আল্লাহর পরিচয় জানার সর্বোত্তম উপায় হলো তাঁর সুন্দর নাম ও গুণাবলি জানা। কোরআনে আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেছেন, “আল্লাহরই সবচেয়ে সুন্দর নামসমূহ রয়েছে। সুতরাং তোমরা তাঁকে সে নামগুলোর মাধ্যমে ডাকো।” (সুরা আ’আরাফ, আয়াত: ১৮০)
হাদিসে এসেছে, “আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম রয়েছে। যে এগুলো মুখস্থ করে, বুঝে ও আমল করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৭৩৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৭৭)
এ থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর নামগুলো জানা, সেগুলো দিয়ে দোয়া করা ও জীবনে প্রয়োগ করা হলো ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আরও পড়ুনইসমে আজমের শক্তি ও রহস্য৩০ জুন ২০২৫আল্লাহর ৯৯ নামের তালিকা১. আল্লাহ – উপাসনার একমাত্র যোগ্য
২. আর-রহমান – অসীম দয়ালু
৩. আর-রহিম – পরম করুণাময়
৪. আল-মালিক – জগতের একচ্ছত্র মালিক
৫. আল-কুদ্দুস – পরম পবিত্র
৬. আস-সালাম – শান্তি ও নিরাপত্তার উৎস
৭. আল-মুমিন – নিরাপত্তা দানকারী
৮. আল-মুহাইমিন – অভিভাবক ও রক্ষক
৯. আল-আজিজ – পরাক্রমশালী
১০. আল-জাব্বার – ইচ্ছামতো সবকিছু নিয়ন্ত্রণকারী
১১. আল-মুতাকাব্বির – মহিমাময়
১২. আল-খালিক – স্রষ্টা
১৩. আল-বারি – নিখুঁতভাবে সৃষ্টিকারী
১৪. আল-মুসাওয়ির – আকৃতি দানকারী
১৫. আল-গফ্ফার – অপরাধ ক্ষমাকারী
১৬. আল-কাহহার – প্রভাবশালী
১৭. আল-ওয়াহ্হাব – সীমাহীন দানশীল
১৮. আর-রাযযাক – রিজিকদাতা
১৯. আল-ফাত্তাহ – উন্মোচনকারী
২০. আল-আলিম – সর্বজ্ঞ
২১. আল-ক্বাবিদ – সংযমকারী
২২. আল-বাসিত – প্রাচুর্যদানকারী
২৩. আল-খাফিদ – মর্যাদা হ্রাসকারী
২৪. আর-রাফি – মর্যাদা উন্নীতকারী
২৫. আল-মুই’জ্জ – সম্মান দানকারী
২৬. আল-মুযিল্ল – অপমান দানকারী
২৭. আস-সামি – সর্বশ্রোতা
২৮. আল-বাসীর – সর্বদ্রষ্টা
২৯. আল-হাকাম – বিচারক
৩০. আল-আদল – ন্যায়পরায়ণ
৩১. আল-লতিফ – সূক্ষ্মদর্শী ও সদয়
৩২. আল-খবির – সব বিষয়ে অবহিত
৩৩. আল-হালিম – সহনশীল
৩৪. আল-আজিম – মহান
৩৫. আল-গফুর – ক্ষমাশীল
৩৬. আশ-শাকুর – কৃতজ্ঞতা গ্রহণকারী
৩৭. আল-আলী – সর্বোচ্চ
৩৮. আল-কবির – মহত্তম
৩৯. আল-হাফিজ – সংরক্ষণকারী
৪০. আল-মুকিত – জীবিকার যোগানদাতা
৪১. আল-হাসিব – হিসাব গ্রহণকারী
৪২. আল-জলিল – গৌরবময়
৪৩. আল-করিম – উদার দাতা
৪৪. আর-রকিব – তত্ত্বাবধায়ক
৪৫. আল-মুজিব – সাড়া দানকারী
৪৬. আল-ওয়াসি – সীমাহীন
৪৭. আল-হাকিম – প্রজ্ঞাময়
৪৮. আল-ওয়াদুদ – প্রেমময়
৪৯. আল-মাজিদ – মহিমান্বিত
৫০. আল-বা’স – পুনরুত্থানকারী
৫১. আশ-শাহিদ – সাক্ষী
৫২. আল-হাক্ক – পরম সত্য
৫৩. আল-ওকিল – ভরসাযোগ্য
৫৪. আল-ক্বাওই – শক্তিশালী
৫৫. আল-মাতিন – দৃঢ়শক্তিধর
৫৬. আল-ওয়ালি – সাহায্যকারী অভিভাবক
৫৭. আল-হামিদ – প্রশংসার অধিকারী
৫৮. আল-মুহসি – গণনাকারী
৫৯. আল-মুবদি – সৃষ্টির সূচনা দানকারী
৬০. আল-মুই’দ – পুনরায় সৃষ্টি দানকারী
৬১. আল-মুহই – জীবনদাতা
৬২. আল-মুমিত – মৃত্যুদাতা
৬৩. আল-হাইয়্যু – চিরঞ্জীব
৬৪. আল-কাইয়ুম – ধারক ও পালনকর্তা
৬৫. আল-ওয়াজিদ – সন্ধানকারী
৬৬. আল-মাজিদ – মহিমান্বিত
৬৭. আল-ওয়াহিদ – একক
৬৮. আস-সামাদ – অমুখাপেক্ষী
৬৯. আল-কাদির – সর্বশক্তিমান
৭০. আল-মুকতাদির – নিয়ন্ত্রণকারী
৭১. আল-মুকাদ্দিম – অগ্রগামীকারী
৭২. আল-মুআখখির – পশ্চাদপসারক
৭৩. আল-আউয়াল – সবার আগে
৭৪. আল-আখির – সবার পরে
৭৫. আয-যাহির – প্রকাশ্য
৭৬. আল-বাতিন – অদৃশ্য
৭৭. আল-ওয়ালি – অভিভাবক
৭৮. আল-মুতাআলি – মর্যাদাবান
৭৯. আল-বার্র – কল্যাণকারী
৮০. আত-তাওয়াব – তওবা গ্রহণকারী
৮১. আল-মুনতাকিম – প্রতিশোধ গ্রহণকারী
৮২. আল-আফু – ক্ষমাশীল
৮৩. আর-রউফ – দয়ালু
৮৪. মালিকুল মুলক – সবকিছুর মালিক
৮৫. যুল জালালি ওয়াল ইকরাম – মহিমা ও সম্মানের অধিকারী
৮৬. আল-মুকসিত – ন্যায়বিচারকারী
৮৭. আল-জামি – একত্রকারী
৮৮. আল-গানি – অমুখাপেক্ষী
৮৯. আল-মুগনি – সম্পদদাতা
৯০. আল-মানি – বাধাদানকারী
৯১. আদ-দার – ক্ষতিসাধনকারী
৯২. আন-নাফি – উপকার দানকারী
৯৩. আন-নূর – আলো
৯৪. আল-হাদি – পথপ্রদর্শক
৯৫. আল-বাদি – অভিনব স্রষ্টা
৯৬. আল-বাকি – চিরস্থায়ী
৯৭. আল-ওয়ারিস – উত্তরাধিকারী
৯৮. আর-রশিদ – দিশাদাতা
৯৯. আস-সবুর – ধৈর্যশীল
আরও পড়ুনআল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নাম ‘আল্লাহ’০২ জুন ২০২৫আল্লাহর নামের ফজিলত১. আল্লাহর নাম দ্বারা দোয়া কবুল হয়: “সবচেয়ে সুন্দর নাম আল্লাহরই। তাই সে নামগুলো দিয়ে তাঁকে ডাকো।” (সুরা আ’আরাফ, আয়াত: ১৮০)
২. আল্লাহর নাম মুখস্থ ও বোঝা জান্নাতের পথ: “যে ব্যক্তি আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম মুখস্থ রাখবে ও বুঝবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৭৭)
৩. আল্লাহর নাম জীবনে প্রভাব ফেলে: ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেছেন: “আল্লাহর নামগুলো কেবল মুখস্থ রাখার জন্য নয়, বরং সেগুলো মানুষকে আল্লাহর মহিমা ও গুণাবলির প্রতি জাগ্রত করে।” (ইবনুল কাইয়িম, আল-নুনিয়্যা, ২/৯১, দারুস সালাম, রিয়াদ, ২০০৫)
আল্লাহর সুন্দর নামগুলো হলো ইমানের রশ্মি, হৃদয়ের প্রশান্তি এবং দোয়ার চাবিকাঠি। মুসলমানের উচিত এই নামগুলো মুখস্থ করা, দোয়া-ইবাদতে ব্যবহার করা এবং জীবনে প্রতিফলিত করা। যে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে আল্লাহর নামগুলো জানবে ও মানবে, তার ইমান হবে দৃঢ়, আমল হবে খাঁটি, আর জীবন হবে প্রশান্তির।
আরও পড়ুনমহান আল্লাহর হাসি১১ জুলাই ২০২৫