ফরিদপুরের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ও প্রবীণ শিক্ষক ওস্তাদ খায়রুল ইসলাম নীলু ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি... রাজিউন)। সোমবার সকাল ৯টা ২০মিনিটের দিকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা যান। ওস্তাদ খায়রুল ইসলাম নীলু বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।

ওস্তাদ খায়রুল ইসলাম স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। সোমবার বাদ আছর শহরের ভাটিলক্ষীপুর ইয়াছিন মঞ্জিল জামে মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে আলীপুর পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

ওস্তাদ খায়রুল ইসলাম নীলুর মৃত্যুর সংবাদে ফরিদপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ফরিদপুরের সংগীত জগতের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। ওস্তাদ খায়রুল ইসলাম ফরিদপুর ললিতকলা একাডেমির  প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। দীর্ঘ দিন তিনি ফরিদপুর শিল্পকলা একাডেমির সংগীত শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ফরিদপুর খেলাঘর তাকে তপন বোস স্মৃতি পদক এবং শিল্পকলা একাডেমি সংগীত গুণী সম্মাননা পদক প্রদান করে। এছাড়া খেয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন, ফরিদপুর প্রবীণ হিতৈষী সংঘ তাঁকে সম্মাননা প্রদান করেছে।

খায়রুল ইসলামের মৃত্যুতে ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক এম এ সামাদ, সাধারণ সম্পাদক মফিজ ইমাম মিলন, ফরিদপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থার আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম স্টালিন, সদস্য সচিব মো.

হাসানুজ্জামান, ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবীরুল ইসলাম সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন পিয়াল, এফডিএফের আজহারুল ইসলাম, বিএফএফর নির্বাহী পরিচালক অনম ফজলুল হাদি, চাঁদের হাট ফরিদপুরের সভাপতি শাহাদৎ হোসেন তিতু, সুর লহড়ী একাডেমির সভাপতি শরীফ সোহানসহ প্রমুখ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ল ইসল ম এক ড ম

এছাড়াও পড়ুন:

মনোযোগ জুলাই সনদে, আছে নির্বাচনী ঐক্যের চিন্তাও

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বড় দলগুলো যখন মুখোমুখি অবস্থানে, গণতন্ত্র মঞ্চসহ ৯টি দল তখন এর সমাধান খুঁজতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে আটটি দলের সঙ্গে দুই দফায় বৈঠক করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ।

গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দলের বাইরে অন্য তিন দলও আলোচনা এগিয়ে নিতে কাজ করছে। এর মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি দলের শীর্ষ নেতা ইতিমধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আলোচনার জন্য যোগাযোগ করেছেন।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে একটা ঐকমত্যে আসা যায় কি না, সে বিষয়টির ওপরই মূল মনোযোগ থাকছে এসব আলোচনায়। তবে দলগুলোর এ অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আগামী জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক সম্ভাব্য মেরুকরণসহ নানা সমীকরণ নিয়ে পারস্পরিক ধারণা বিনিময় হচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে নির্বাচনী ঐক্যের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা চলছে।

সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর হাতিরপুলের একটি রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ জাসদ ও জাতীয় গণফ্রন্ট—এই পাঁচটি দলের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক হয়। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর একই স্থানে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে গণতন্ত্র মঞ্চ।

গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দলের বাইরে অন্য তিন দলও আলোচনা এগিয়ে নিতে কাজ করছে। এর মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি দলের শীর্ষ নেতা ইতিমধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আলোচনার জন্য যোগাযোগ করেছেন।

জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্যের লক্ষ্যে আলোচনা হলেও সেখানে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও আগামী দিনের সম্ভাব্য রাজনৈতিক মেরুকরণ নিয়ে আলোচনা হয় বলে বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক বৃহত্তর সমঝোতা নিয়েও নিজেদের চিন্তাভাবনা একে অপরকে জানিয়েছে দলগুলো।

গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে এই আলোচনা সমন্বয় করছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য তৈরির ওপরই আলোচনায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনী জোট সম্প্রসারণ এবং আরও বৃহত্তর আসন সমঝোতা—দুটি ভাবনাই আমাদের মধ্যে আছে। পর্যায়ক্রমে গণতন্ত্র মঞ্চ ঐকমত্য কমিশনে আলোচনায় অংশ নেওয়া অন্য দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করবে। তবে নির্বাচনের আগে এটা ঠিক কী রূপ নেবে, তা কিছুদিন পরে পরিষ্কার হবে।’

জোট বা সমঝোতা নিয়ে চিন্তা

গণতন্ত্র মঞ্চে ছয়টি দল রয়েছে—গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জেএসডি ও ভাসানী জনশক্তি পার্টি। মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন দলের বৈঠকে সংস্কারের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক সমঝোতা বা জোট নিয়েও কথা হচ্ছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক বিষয়ে এখনো সংগঠিত আলোচনা না হলেও বিভিন্ন দল এ বিষয়ে প্রাথমিক চিন্তাভাবনা শুরু করেছে।

গত ১৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বরের দুটি বৈঠকে অংশ নেওয়া চারটি দলের নেতারা জানিয়েছেন, গণতন্ত্র মঞ্চের দলগুলোর সঙ্গে তাঁরা বৃহত্তর নির্বাচনী সমঝোতায় যেতে আগ্রহী। তবে কী বক্তব্য বা লক্ষ্য সামনে রেখে এটা হবে, তা নিয়ে আরও আলোচনা হবে।

অবশ্য নির্বাচনী জোট বা সমঝোতা প্রশ্নে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে প্রথম দফার আলোচনায় অংশ নেওয়া দলগুলোকে নিয়ে দ্বিতীয় দফার বিভিন্ন দলের আপত্তি আছে।

নির্বাচনী জোট সম্প্রসারণ এবং আরও বৃহত্তর আসন সমঝোতা—দুটি ভাবনাই আমাদের মধ্যে আছে। পর্যায়ক্রমে গণতন্ত্র মঞ্চ ঐকমত্য কমিশনে আলোচনায় অংশ নেওয়া অন্য দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করবে। তবে নির্বাচনের আগে এটা ঠিক কী রূপ নেবে, তা কিছুদিন পরে পরিষ্কার হবে।গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি

এ বিষয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবি পার্টি, এনসিপি ও গণ অধিকার পরিষদ দক্ষিণপন্থী চিন্তায় আচ্ছন্ন। তাদের সঙ্গে নির্বাচনী জোট বা সমঝোতার সুযোগ নেই। তবে গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়টি দলের সঙ্গে বৃহত্তর মঞ্চে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমাদের আছে। কারণ, তারা আমাদের সমমনা।’

গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশ জাসদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুশতাক হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সবাই চাইবে আগামী নির্বাচনটা যেন সুনির্দিষ্ট বক্তব্যের ভিত্তিতে হয়। সংস্কার প্রস্তাবে যারা যারা একমত, তারা একসঙ্গে নির্বাচন করলে জনগণের ম্যান্ডেট পেতে সুবিধা হবে। তবে নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত বৈঠকি আলাপ হয়েছে, সংগঠিত কিছু হয়নি।

এবি পার্টি, এনসিপি ও গণ অধিকার পরিষদ দক্ষিণপন্থী চিন্তায় আচ্ছন্ন। তাদের সঙ্গে নির্বাচনী জোট বা সমঝোতার সুযোগ নেই। তবে গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়টি দলের সঙ্গে বৃহত্তর মঞ্চে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমাদের আছে। কারণ, তারা আমাদের সমমনা।সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতনবিএনপি–জামায়াতের সঙ্গেও আলোচনার চেষ্টা

গত ১৮ সেপ্টেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে তিন দলের যে বৈঠক হয়, সেখান থেকে সংকট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানকে।

এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে সিপিবি–বাসদসহ বামপন্থী পাঁচটি দলের সঙ্গে হাতিরপুলে বৈঠক করে গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দল। এই বৈঠকে এনসিপি, এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের কেউ ছিলেন না।

অন্যদিকে এবি পার্টির চেয়ারম্যান বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য যোগাযোগ করেছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের সঙ্গে তাঁরা বসার চেষ্টা করছেন।

বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে তাঁদের এই যোগাযোগও ‘৯ দলের উদ্যোগের’ অংশ বলে জানিয়েছেন মজিবুর রহমান। গত বুধবার সন্ধ্যায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আলোচনায় অগ্রগতি আছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে আলোচনায়। এটি হয়ে গেলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

আরও পড়ুনএবার সিপিবি, বাসদসহ বামপন্থী ৫ দলের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ