জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামীর রাজনীতি যেন ফ্যাসিবাদের জন্ম না দেয়। জনপ্রত্যাশা পূরণ রাজনীতির মূল লক্ষ্য হতে হবে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলে যারা আছেন, তারা যেন সত্যিকার অর্থে মুখে যেভাবে বলেন, সেভাবে স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করেন।

শুক্রবার সকালে মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের সাবেক আমির প্রয়াত দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিবের পরিবারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এসব কথা বলেন তিনি। শফিকুল রহমান শহরের শাহ মোস্তফা রোডে দেওয়ান মঞ্জিলে মরহুমের সন্তানদের খোঁজখবর নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দেওয়ান সিরাজুল ইসলামের ছেলে দেওয়ান শরীফুজ্জামান, দেওয়ান কামরুজ্জামান শিবলী, দেওয়ান মাশকুরুজ্জামান, দেওয়ান মুয়াজ উজ্জামানসহ অনেকে। জামায়াত আমির পরে সিরাজুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার গিয়াস নগর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে যান। সেখানে মরহুমের কবর জিয়ারত ও মোনাজাত করেন।

কবর জিয়ারত শেষে তিনি বেলা ১১টার দিকে কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামে যান। সেখানে সম্প্রতি হত্যার শিকার স্কুলছাত্রী নাফিজা জান্নাত আনজুমের কবর জিয়ারত করে তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় খুনি জুনেল মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান জামায়াত আমির।

তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ন্যায়বিচার চাই। আমরা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে বলছি, তাদের কলম যেন ন্যায়ের পক্ষে চলে। আমরা ছাড় দেব না। কারণ, এই জুনেল আত্মস্বীকৃত খুনি। সে আনজুমকে জুলুম করে খুন করেছে, সে নিজে সাক্ষী দিয়েছে। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে বিচার করবে। স্বাধীন বিচারকের ওপরে পরাধীনতা করার চেষ্টা কাম্য নয়। শুনেছি, এই হত্যা মামলা নিয়ে অনেকেই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। এ রকম যদি হয়ে থাকে, আমরা তা প্রতিহত করব। ন্যায়বিচারের জন্য সবাইকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাব। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ম য় ত আম র র জন ত ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

বিরোধী দল নিষিদ্ধ করে গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব নয়

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জনমনে যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছিল, তা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নিভে যেতে মাত্র চার বছর সময় লেগেছিল। গত বছর এক জনপ্রিয় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়, তা আরও দ্রুত নিভে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন এক অভ্যুত্থান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎখাত করে, যিনি গত ১৫ বছর ক্রমবর্ধমান স্বৈরতান্ত্রিক উপায়ে দেশ শাসন করেছিলেন। ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ ও জাতীয়ভাবে শ্রদ্ধেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং তারা দেশের গণতন্ত্র পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু প্রায় এক বছর হতে চলল, সেই প্রতিশ্রুতি ঝুলন্ত অবস্থায় রয়ে গেছে।

সত্যি বলতে ড. ইউনূস ও তাঁর সরকারকে অত্যন্ত জটিল ও দুরূহ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বছরের পর বছর চলতে থাকা দুঃশাসন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভয়াবহভাবে ভঙ্গুর করে তুলেছিল। দুর্নীতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং তা ছিল স্পষ্ট। দলীয় গুন্ডা বাহিনী সরকারবিরোধীদের ওপর চড়াও হয়েছিল। আকর্ষণীয় প্রবৃদ্ধির পর অর্থনীতি গতি হারিয়ে ফেলে। প্রায় এক-পঞ্চমাংশ বাংলাদেশি তরুণ ছিল বেকার। প্রচণ্ডভাবে ক্ষিপ্ত গণঅভ্যুত্থানকারী তরুণদের একটা অংশ যাদের শেখ হাসিনার সাহায্যকারী ভেবেছিল, তাদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে।

নতুন সরকার ইতোমধ্যে কিছুটা অগ্রগতি অর্জন করেছে। তাদের আপাত ভাবনা, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। অর্থনীতি মন্থর হলেও স্থিতিশীল। মুদ্রাস্ফীতির গতি ধীর হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক ঋণদাতারা ঋণ দিচ্ছে। তবুও এমন আরও অনেক কিছু তারা করছে, যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। বৈদেশিক বিষয়ে বাংলাদেশ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সস্তা অস্ত্রের সম্ভাবনায় আকৃষ্ট হয়ে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এটি আমেরিকার সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক বিপন্ন করে তোলে, যা বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সহায়তা হ্রাসের আগ পর্যন্ত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দাতা ছিল। চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ার পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গে আরও বেশি নমনীয়তা ভারতকেও ক্ষুব্ধ করেছে। গত গ্রীষ্ম পর্যন্ত বাংলাদেশের বিশাল প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হচ্ছিল, কিন্তু এখন তা দুর্বল হচ্ছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারত একটি ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি বাতিল করেছে, যার উপকারভোগী ছিল বাংলাদেশি সংস্থাগুলো এবং দেশটি বাংলাদেশি অভিবাসী বলে বহু লোক বহিষ্কার করে। এখন দেশটি এক গুরুত্বপূর্ণ নদীর পানি বণ্টন চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে চায়।

ড. ইউনূসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বাংলাদেশের রাজনীতির পুনর্গঠন। এর অর্থ হলো, দেশের বিবদমান দলগুলোকে নির্বাচনের জন্য নতুন নিয়মে একমত হতে রাজি করানো। এর বাইরেও রয়েছে অনেক কিছু। তবে এমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে, রাজনীতিবিদদের এই প্রক্রিয়ায় ধৈর্যচ্যুতি ঘটছে।

রাজনৈতিক মতবিরোধ রাস্তায় প্রকাশ পাচ্ছে। শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে ২০১৮ সালের নির্বাচনের ফল নিজের পক্ষে নিতে সাহায্য করার অভিযোগে এক দল মব জুনের মাঝামাঝি সময়ে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওপর হামলা করে।
মে মাসে অন্তর্বর্তী প্রশাসন একটি বড় ভুল পদক্ষেপ নেয়। তারা আওয়ামী লীগকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করে। ফলে দেশটি আগামী বছর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। আদালতে যথাযথভাবেই দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতায় থাকাকালীন অপরাধের জন্য বিচারের আয়োজন চলছে। কিন্তু কিছুদিন আগেও আশা ছিল, বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীকে দলটির তৎপরতা পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ দেওয়া হবে।

সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে যে আদেশের মাধ্যমে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, আইনগত দিক থেকে তা প্রশ্নবিদ্ধ। এতে বাংলাদেশি রাজনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের বিরোধীদের দমন করার জন্য যে ধরনের নোংরা কৌশল ব্যবহার করে আসছেন, তার গন্ধ রয়েছে। এটি বাংলাদেশকে আবারও প্রতিশোধের চক্রে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকিতে ফেলেছে। যেখানে যেই পদে থাকুক না কেন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমন করার জন্য তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে।

বাংলাদেশের নেতাদের উচিত আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং দলটিকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া। অনেক নাগরিকের কাছে এটি বিস্বাদ লাগতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের প্রাচীনতম দলটির সবাই কলঙ্কিত নয়। দলটি এখনও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীসহ যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের সমর্থন পায়। বছরের পর বছর ধরে অস্বচ্ছ নির্বাচনের পর এই ভোটাররা যাকে খুশি তার পক্ষে একটি সিল মারার অধিকার রাখে।
এই মুহূর্তে স্বাধীনভাবে প্রচারণা চালানোর অনুমতি দিলেও নির্বাচনে দলটি জিতবে না। কিন্তু সংসদে এর উপস্থিতি বিরোধী শিবিরকে শক্তিশালী করতে পারে, যা বিজয়ীদের সতর্ক থাকতে বাধ্য করবে। নতুন বন্দোবস্ত গড়ে তোলার জন্য প্রতিশোধ নয়; সমঝোতা প্রয়োজন।

লন্ডনভিত্তিক ম্যাগাজিন দি ইকোনমিস্ট থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর

সম্পর্কিত নিবন্ধ