ঋণ নয়, অধিকার চাই, প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা
Published: 28th, June 2025 GMT
জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঋণের বোঝা, শোষণ ও করপোরেট লুটপাটের এক নয়া উপনিবেশিক ব্যবস্থা। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই। ঋণ নয়, অধিকার চাই।
আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনসহ ২৪টি সংগঠন আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সময় অনুষ্ঠানে ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন তারা।
দাবিগুলো হলো-উন্নয়নের নামে ঋণ নির্ভরতার অবসান করা, দক্ষিণের দেশগুলোর ঋণ বাতিল করা, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ, এডিবি’র শর্তযুক্ত ঋণ বন্ধ করা, জলবায়ু অর্থায়নে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা, জনগণের সেবায় রাষ্ট্রীয় অর্থায়ন নিশ্চিত করা, কর ন্যায্যতা নিশ্চিত করা ও সম্পদের কর আরোপ করা ও বহুজাতিক করপোরেশনের কর ফাঁকি ও সম্পদ পাচার রোধ করা।
কমরেড বদরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংগঠনের মোস্তফা আনোয়ার, জাহেদ ইকবাল খান, ফয়েজ হোসেন, লাভলি ইয়াসমিন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অর্থায়নের নামে ঋণের জালে জনগণকে বন্দী রাখার প্রতিবাদে রাস্তায় নামুন। তারা বলেন, স্পেনে বসেছে উন্নয়ন অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বের শাসকদের উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন। সম্মেলনের নাম ‘ফাইন্সিং ফর ডেভেলপমেন্ট’-এটা শুনতে যতটা আশাব্যঞ্জক, বাস্তবতা ততটাই ভয়াবহ। এ সম্মেলনের পেছনে রয়েছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, জি-৭ রাষ্ট্রসমূহ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বহুজাতিক করেপারেট শক্তির চক্রবন্ধ। যারা ‘উন্নয়ন’ কথার আড়ালে বিশ্বজুড়ে ‘গ্লোবাল সাউথ’ জনগণের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে- ঋণের বোঝা, শোষণ ও করপোরেট লুটপাটের এক নয়া উপনিবেশিক ব্যবস্থা।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশসহ এশিয়ার নানা দেশে এই ‘তথাকথিত’ উন্নয়ন অর্থায়নের অর্থ হলো- কৃষি থেকে জমি কেড়ে নেওয়া, পানি ও বীজের ওপর করপোরেট নিয়ন্ত্রণ, শ্রমজীবীদের অধিকার খর্ব করা, বেসরকারিকরণ, বাজেটে শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে কাটছাঁট, প্রাকৃতিক সম্পদ বিক্রি করে ঋণ শোধ। উন্নয়নের নামে যা হচ্ছে, তা এক ভয়ংকর ঋণচক্র। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করলে আমাদের ভবিষ্যৎ হবে করপোরেট দাসত্বে বন্দি থাকা।
আয়োজিত সংগঠনগুলো হচ্ছে-এপিএমডিডি, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, ইক্যুটিবিডি, জাতীয় হকার্স ফেডারেশন, এনআরডিএস, সিপিআরডি, এসএএপিই, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশন, মাদারল্যান্ড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, বাংলাদেশ কিষাণী সভা, বাংলাদেশ ভূমিহীন সমিতি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশন, বাংলাদেশ আদিবাসী সমিতি, দলিত নারী উন্নয়ন সংস্থা, ইরেজার, ইয়ুথ ফর আপলিট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গিগ ওয়ার্কার্স অ্যাসোশিয়েশন, কান্দিভিটা সমউন্নয়ন মহিলা সমিতি (কসমস), গ্লোবাল লা থিংকার্স সোসাইটি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সম ব শ করপ র ট বক ত র
এছাড়াও পড়ুন:
নেতারা বলবেন, জনতা শুনবে—এই সংস্কৃতি বদলাতে চায় মানুষ: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘দেশের মানুষ এখন রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চায়। আগে নেতারা বলতেন আর জনতা শুনত। কিন্তু এখন জনগণ সেই পরিস্থিতির বদল চায়। তারা চায়, জনপ্রতিনিধিরা শুধু বলবেন না, জনগণের কথাও শুনবেন।’
আজ শনিবার রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়াতে ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে ‘নাগরিক প্ল্যাটফর্ম’ আয়োজিত প্রাক্-নির্বাচনী আঞ্চলিক পরামর্শ সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথাগুলো বলেন। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ও দাবিগুলো তুলে ধরতে এই নাগরিক সংলাপের আয়োজন করা হয়।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যে বার্তাটি পরিষ্কারভাবে উঠে আসছে তা হলো, জনগণ এমন একটি নির্বাচন দেখতে চায়, যেখানে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হবেন। মানুষ এখন নির্বাচনের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার রোধ এবং দলগুলোকে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নের ওপর জোর দিচ্ছে। জনগণ মনে করে, নির্বাচনের ব্যয় যদি কমানো না যায়, তাহলে দুর্নীতি কমানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।’
জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহির ওপর গুরুত্বারোপ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘মানুষ চায়, প্রত্যেক জনপ্রতিনিধি তাঁর কাজের বার্ষিক হিসাব দেবেন। এই জবাবদিহির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।’ রাজশাহীর স্থানীয় সমস্যাগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলের জন্য চারটি প্রধান বিষয় উঠে এসেছে। এগুলো হলো—রাজশাহীর মরুকরণ ও তিস্তাসহ পানির সংকট, জ্বালানি সংকট, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পের অভাব।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো—নিরাপত্তার প্রসঙ্গটি খুব জোরালোভাবে এসেছে। এই নিরাপত্তা কেবল অর্থনৈতিক নয়; এর সঙ্গে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়িক নিরাপত্তার বিষয়গুলোও জড়িত। সুশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং প্রশাসনের দক্ষতার সঙ্গে এই নিরাপত্তার বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করাও কঠিন হবে বলে তিনি মনে করেন।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। চলে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। ‘আগামী নির্বাচনে কী প্রত্যাশায় ভোট দেবেন?’, ‘নবনির্বাচিত সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা?’ এই শিরোনামে মুক্ত আলোচনা হয়। এতে রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, উন্নয়নকর্মী, শিক্ষক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষার্থী, কৃষকসহ নানা শ্রেণির মানুষ অংশ নেন। তবে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না।
সভায় আগামী নির্বাচন, জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি, সুশাসন এবং স্থানীয় নানা সংকট নিয়ে সাধারণ মানুষ তাঁদের ক্ষোভ ও প্রত্যাশা তুলে ধরেন। তাঁরা আগামী সরকারের কাছে নানা বিষয়ের বাস্তবায়ন চান।
সংলাপে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা ভূমি হারানোর শঙ্কা প্রকাশ করেন এবং তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা তাঁদের আশ্রয়ণ প্রকল্প দখল ও কর্মসংস্থানে বাধার অভিযোগ তোলেন। একজন রাজনৈতিক কর্মী প্রশাসনের দলীয়করণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারাও রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে আচরণ করেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আলম মাসুদ বলেন, ‘আমরা এমন প্রতিশ্রুতি চাই না, যা বাস্তবায়ন হয় না। আমরা এমন ব্যক্তিদের নির্বাচিত করতে চাই, যাঁরা একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবেন।’
জবাবদিহির অভাবকে দুর্নীতির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান। তিনি বলেন, একজন প্রার্থী নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেন, যা তার পাঁচ বছরের বেতনের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। এই টাকা তুলে আনার জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি দুর্নীতির আশ্রয় নেন। তিনি মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন ও প্রার্থীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা গেলে এই দুর্নীতি কমানো সম্ভব।
সভা শেষে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের অন্যতম সংগঠক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলন আমাদের বলে দেয়, পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থাকলে আমরা পরিবর্তন করতে পারি। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এই আলোচনা থেকে উঠে আসা বিষয়গুলো নিয়ে একটি “নাগরিক ইশতেহার” তৈরি করা হবে। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে উপস্থাপন করে একটি চাপ সৃষ্টি করা হবে। কারণ, তাদের ছাড়া এই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’