চরের বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ওঠানামার কারণে আনোয়ারার পারকি সৈকতে খালের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বালু সরে গিয়ে পলি মাঠি জমেছে সৈকতে। প্রবল ঢেউয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে ৩ কিলোমিটারজুড়ে থাকা সারি সারি ঝাউগাছ। এখন সাগরের ঢেউ সরাসরি আঘাত হানছে সৈকতের তীরে। এতে ভাঙছে বেড়িবাঁধ ও আশপাশের স্থাপনা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কর্ণফুলী টানেল চালুর অনেক আগে থেকেই দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় ধরে পারকি সৈকতকে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে স্থানীয় ও দর্শনার্থীদের দাবি যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। টানেল চালুর পর পারকি সৈকতের সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে গেলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বৈষম্যের গ্যাঁড়াকলে আটকা পড়ে দিন দিন এই সৈকত পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে হুমকিতে পড়েছে। শত শত ঝাউগাছ রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেই। বঙ্গোপসাগরের জোয়ারে পানি ও অতি বৃষ্টির কারণে সৈকত রক্ষার বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট খাল মেরামতের কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের। এতে পলি জমে কৃষিজমির রূপ নিচ্ছে সৈকত।
সরেজমিন পারকি সমুদ্রসৈকত ঘুরে দেখা যায়, বিচের দক্ষিণ পাশের প্রায় ঝাউগাছ বিলীন হয়ে গেছে। যে কয়েকটি বাকি আছে সেগুলোও বেঁকে গেছে। বিচের এই পাশের ডোবায় ঢুকছে সাগরের পানি। ভেঙে গেছে লুসাই পার্কের সীমানা বেড়িবাঁধ, বিলীন হয়ে গেছে স্থানীয়দের তৈরি করা বেড়িবাঁধ। সাগরে চলে যাচ্ছে বিচের পাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা। বিচের সামনে কোনো প্রতিবন্ধক না থাকায় সাগরে ঢেউয়ের তীব্রতা পৌঁছে যাচ্ছে বিচে গড়ে ওঠা দোকানপাট-স্থাপনায়।
স্থানীয় বিচ-সংশ্লিষ্ট প্রবীণ বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলীর মোহনায় পাকিস্তান আমলে ২টি পাথরের বাঁধ ছিল, বন্দরের নাব্যতা বাড়ানোর জন্য ফ্রি ড্রেজিংয়ের ফলে আনোয়ারা সাইডে দেয়ালটি ভেঙে যায়। যার কারণে সাগরে ঢেউ সরাসরি বিচে আঘাত করছে। এ ছাড়া বারআউলিয়া থেকে পরোয়াপাড়া পর্যন্ত বেড়িবাঁধ হয়েছে, ব্লক দেওয়া হয়েছে। যার কারণে জোয়ারের স্রোত এসে পড়ছে পারকি বিচে। বিচ এলাকায় ঢেউয়ের তীব্রতা বাড়ার বিষয়ে তারা আরও জানান, আগে জেলেদের জাল সমুদ্রের গভীরে বসানো হলেও এখন জাল বসানো হচ্ছে সমুদ্র উপকূলের কাছেই। যার কারণে জোয়ার-ভাটার পানির স্রোতের প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, ২০০০ সালের আগে পারকি বিচে বনায়ন করা হয়েছিল। সেগুলো ভেঙে যাওয়ায় নতুন করে ১৩ একর জায়গাজুড়ে আবারও বনায়ন করা হয়; যা এখন প্রায় বিলুপ্তির দিকে।
চট্টগ্রাম শহরের হালিশহর থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক নাছির উদ্দীন বলেন, কর্ণফুলী টানেল চালুর পর পারকি সৈকতের গুরুত্ব অনেক। টানেল দেখতে এসে পারকিতে বেড়াতে আসেনি– এমন পর্যটক কমই আছে। কিন্তু পারকি সৈকত প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে থাকলেও পর্যাপ্ত পর্যটন সুবিধা না থাকায় পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসে আমরা হতাশ। সৈকতের উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
পারকি সমুদ্র সৈকতে আসা আরাফাত হোসেন
নামের এক পর্যটল জানান, দিনদিন পারকি সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য কমে যাচ্ছে, এখন ঢেউয়ের কারণে বাঁধ, গাছ, দোকানপাট ভেঙে যাচ্ছে। এসব রক্ষায় সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
পারকি সমুদ্র সৈকতের ব্যবসায়ী ইলিয়াস আলী জানান, আমরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পারকি সমুদ্র সৈকতে ব্যবসা করছি, আমার লুসাই পার্কের বাঁধ ভেঙে গেছে, এখানে পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ হচ্ছে, রয়েছে সরকার-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। তাই এসব রক্ষার্থে বীচ এরিয়ায় বাঁধ দেওয়া প্রয়োজন।
পারকি বীচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো.
এবিষয়ে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার জানান, বিষয়টি সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানানো হবে।
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহীদ বলেন, পারকি বীচ থেকে টানেল পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিষয়ে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে তবে এখনো তা কাগজেকলমে পাশ হয়নি। এটার জন্য স্থানীয়দের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে বলে জানান তিনি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরে আওয়ামীলীগ নেতা হুমায়ুন গ্রেপ্তার
বন্দরে অপরেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে আওয়ামীলীগ নেতা হুমায়ুন (৩৮)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃত আওয়ামীলীগ নেতা হুমায়ুন বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের ফরাজিকান্দা এলাকার মাকসুদুর রহমান মিয়ার ছেলে।
ধৃতকে সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বন্দর থানার দায়েরকৃত ১১(১১)২৫ নং মামলায় আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। এর আগে গত রোববার (১৬ নভেম্বর) রাতে বন্দর উপজেলার ফরাজিকান্দা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই নেতাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ৬ নভেম্বর দিবাগত রাত পৌনে ৯টায় বন্দর থানার ঢাকা টু চট্টগ্রাম মহাসড়কের কেওঢালা মেগাসিটি ফিলিং স্টেশনের সামনে পাঁকা রাস্তার উপরে জড়ো হয় নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামীলী ও অঙ্গ সংগঠন ৫০/৫৫ জনের একটি দল।
পরে তারা শেখ হাসিনা ও অয়ন ওসমানের ব্যানারে একটি ঝটিকা মশাল মিছিল বের করলে তা পুলিশের নজরে আসলে ওই সময় পুলিশ উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ঘটনাস্থলে আসলে ওই সময় ১৫/২০টি মোটরসাইকেল যোগে বি়ভিন্ন শ্লোগান দিতে দিতে দ্রুত ঢাকা দিকে চলে যায়।এ ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে আওয়ামীলীগ নেতা হুমায়ুনকে গ্রেপ্তার করে ওই মামলায় তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয় ।